ব্যক্তিত্বের সংজ্ঞা দাও। এরিকসন ব্যক্তিত্ব বিকাশের যে তত্ত্ব দিয়েছেন তা আলোচনা কর ।

admin

ভূমিকা :  

বিখ্যাত মনোবিদ এরিক এইচ এরিকসন নিজের বিচিত্র অভিজ্ঞতার আলোকে ফ্রয়েডের ব্যক্তিত্বের তত্ত্বের উপর কাজ করতে গিয়ে ১৯৫০ সালে মনোসামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রে এক নতুন তত্ত্ব আবিষ্কার করেছেন। এরিকসনের এ তত্ত্বই মনোসামাজিক তত্ত্ব নামে পরিচিত। এরিকসন তাঁর শিক্ষকতা, মনঃসমীক্ষণ এবং নৃতাত্ত্বিক অভিজ্ঞতার সমন্বয় গঠিত ধারণার মাধ্যমে ব্যক্তিত্ব বিকাশের ও পরিবর্তনের প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করেছেন। এরিকসন ফ্রয়েডের ব্যক্তিত্ব বিকাশের প্রকল্পগুলোর বিপরীতে ব্যক্তিত্ব। বিকাশে সামাজিক পরিবেশগত উপাদানের প্রভাবকে গুরুত্ব দিয়েছেন।


ব্যক্তিত্বের সংজ্ঞা দাও। এরিকসন ব্যক্তিত্ব বিকাশের যে তত্ত্ব দিয়েছেন তা আলোচনা কর ।

ব্যক্তিত্বের সংজ্ঞা:

ব্যক্তিত্ব যার ইংরেজি প্রতিশব্দ হল Personality. এটি ল্যাটিন শব্দ থেকে এসেছে। 'Persona' শব্দটির অর্থ হল মুখোশ। প্রাচীনকালে অভিনেতারা যে মুখোশ পরে মঞ্চে আসত তাকে persona বলা হতো। এরপরে বিশেষ গুণাবলি এবং ব্যাপক অর্থে 'ব্যক্তিত্ব' বুঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে। বাংলা ভাষায় 'ব্যক্তিত্ব' শব্দের আভিধানিক অর্থ হল ব্যক্তির নিজের বৈশিষ্ট্যই যক্তিত্ব। সাধারণ লোকের কাছে ব্যক্তিত্ব হল একজন মানুষের চিত্ত আকর্ষণ করার মত গুণ। এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির মনে যে সামগ্রিক ছাপ অঙ্কিত করে তাই হল সে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব।ব্যক্তিত্ব হল ব্যক্তির অন্তর্নিহিত গুণ। ব্যক্তিত্বকে সমাজকাঠামো থেকে আলাদা করা যায় না। ব্যক্তি তার সমাজের ব্যক্তিবর্গ তাদের আচরণ, সংস্কৃতি, সামাজিক মূল্যবোধ এসব উপাদানের সাথে পারস্পরিক সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়ে থাকে। আর এসব পারস্পরিক সম্পর্কের ফল হিসেবে ব্যক্তি একটি ব্যক্তিত্ব অর্জন করে থাকে। অর্থাৎ, ব্যক্তির সাথে সমাজের বিভিন্ন উপাদানের পারস্পরিক প্রতিক্রিয়ার ফলেই ব্যক্তিত্বের উদ্ভব হয়।


প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন মনোবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে ব্যক্তিত্বের সংজ্ঞা দিয়েছেন। নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হল :

গর্ডোন আলপোর্ট (Gordon Allport) বলেছেন, “ব্যক্তিত্ব ব্যক্তির মনোদৈহিক প্রতিক্রিয়াসমূহের এক গতিময় সংগঠন, যা পরিবেশের সাথে তার অনবদ্য অভিযোজন নির্ধারণ করে।”


ওয়াল্টার মিশেল (Walter Mischel) বলেছেন, “ব্যক্তিত্ব গঠিত হয় আচরণের (চিন্তন ও আবেগসহ) পার্থক্যসূচক ধরন নিয়ে যা তার জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতির সাথে প্রত্যেক ব্যক্তির উপযোগ স্থাপনকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করে।

আরো পড়ুন:সংস্কৃতি কিভাবে ব্যক্তিত্বের উপর প্রভাব বিস্তার করে আলোচনা কর ।

ক্রাইডার এবং তাঁর সহযোগীরা বলেছেন, “ব্যক্তিত্বকে আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়ার অনবদ্য ধরন হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে, যা ব্যক্তিকে এবং ব্যক্তির সাথে পরিবেশের সম্পর্ককে চিহ্নিত করে।”


ম্যামহোন এবং ম্যামহোন বলেছেন, “ব্যক্তিত্ব তুলনামূলক দীর্ঘস্থায়ী আচরণের ধরন নিয়ে গঠিত হয়, যা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সুসামঞ্জস্য প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।”


উডওয়ার্থ এবং মারকুইস বলেছেন, “ব্যক্তিত্বকে ব্যাপক অর্থে একজন ব্যক্তির আচরণের সামগ্রিক গুণ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যায়, যা তাঁর চিন্তার ধরন ও প্রকাশভঙ্গি, তার মনোভাব ও আগ্রহ, তার কাজের প্রকৃতি এবং তার ব্যক্তিগত জীবন দর্শনে প্রকাশ পায়।” বাসুকিস্ট এবং জারবিং বলেছেন, “ব্যক্তিত্ব হল সময় ও পরিবেশের মধ্যদিয়ে অতিক্রান্ত আচরণ ও চিন্তার এক বিশেষ ধরন, যা এক ব্যক্তিকে অপর ব্যক্তি থেকে পৃথক করে।”


Whittaker ১৯৫৬ এর মতে, “ব্যক্তিত্বের সংজ্ঞা হল, “ব্যক্তির কতকগুলো বৈশিষ্ট্যের একক সংগঠন, যা ব্যক্তির আচরণে পুনরাবৃত্তি দান করে।" Whittaker এর সংজ্ঞায় ব্যক্তিত্বের সর্বজনস্বীকৃত কতকগুলো বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে। এগুলো হল :


১. ব্যক্তিত্ব হল একটি একক অভিব্যক্তি। অর্থাৎ, কোন লোকের ব্যক্তিত্বই অন্য কোন লোকের মত নয়, এটি হল একজনের স্বকীয়তা।

২.ব্যক্তিত্ব হল কতকগুলো বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলির সংগঠন।

৩.ব্যক্তির বিভিন্ন গুণাবলির একক সংগঠনটি ব্যক্তির আচরণে একটি পৌনঃপুনিকতা বা স্থায়িত্ব দান করে।


অতএব, ব্যক্তিত্ব হল একটি জটিল বিষয়। আসলে ব্যক্তিত্ব দেহমনের এক জীবন্ত ঐক্য। ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য, সহজাত প্রবৃত্তি, মানসিক প্রবণতা ও ব্যক্তির আশা-আকাঙ্ক্ষা, কামনা-বাসনা, আগ্রহ, জীবনাদর্শ, অভ্যাস, অভিজ্ঞতা, কল্পনাশক্তি, বুদ্ধি, নৈপুণ্য, দোষ, গুণ প্রভৃতি প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে উপযোজনের ক্ষমতা এবং বাহ্য প্রতিক্রিয়া- এ সবকিছুর সংমিশ্রণেই ব্যক্তিত্ব। ব্যক্তির শুধুমাত্র গুণ ও ক্রিয়ার সমষ্টি নয়, শুধুমাত্র সংগতি বা ঐক্য নয়, ব্যক্তিত্ব হল সেই সত্তা যা গুণ ও ক্রিয়ার মধ্যে উপস্থিত থেকে তাদের সংহত বা ঐক্যবদ্ধ করে।


এরিকসনের মনোসামাজিক বিকাশতত্ত্ব : নিম্নে এরিকসনের মনোসামাজিক তত্ত্বের আটটি স্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হল :

১.মৌলিক বিশ্বাস বনাম অবিশ্বাস (Basic trust Vs. Mistrust) : এ স্তরে শিশুর জৈবিক চাহিদার পরিতৃপ্তিই শিশুর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের ধারণাকে সুদৃঢ় করে। অর্থাৎ, এ স্তরে শিশুর মৌলিক চাহিদা যদি স্নেহ, আদরযত্নের মাধ্যমে পূরণ করা হয়, তাহলে তার মনে নিরাপত্তাবোধ জন্মে এবং শিশু পরিবেশ ও পরিজনদের প্রতি আস্থাশীল হয়ে থাকে, একে মৌলিক আছা বলে অভিহিত করা হয়। এর বিপরীত হচ্ছে, শিশু তার চারপাশের সবাইকে সন্দেহ করে তখনই, যখন সে অবহেলিত বা অনাদৃত হয়। এ প্রসঙ্গে এরিকসন শিশু ও তার মায়ের সম্পর্কের উপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেন। মা ও শিশুর সম্পর্ক যত নিবিড় হবে, শিশু এক সহজে বিশ্বাস স্থাপন করতে পারবে। এ বিশ্বাস শিশুর পরবর্তী জীবনেও ব্যাপ্ত হয়।


২.স্বনিয়ন্ত্রণ বনাম লজ্জা ও সন্দেহ (Autonomy Vs. Shame and Doubt) : এ স্তরটি শিশুর ১৮ মাস বয়স হতে ৩ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে। শৈশবকালের প্রথম পর্যায়ে এ সংকট উপস্থিত হয়। এ সময়ে শিশু তার বাবা-মাকে ও পরিবেশকে পরীক্ষা করে। কারণ, শিশু বুঝতে চায় পরিবেশ কতটুকু নিয়ন্ত্রণে আছে। এ স্তরে শিশু অঙ্গ সঞ্চালনের মাধ্যমে স্বাধীনভাবে তার ইচ্ছামতো কাজ করতে চায়। শিশুর এ ধরনের ইচ্ছাশক্তির প্রয়োগ তার ব্যক্তিত্বের স্বাভাবিক বিকাশ ঘটাতে সহায়তা করে।


৩. উদ্যোগ বনাম অপরাধবোধ (Initiative Vs. Guilt): মনোসামাজিক তত্ত্বের এ স্তরটি শিশুর ২ বছর বয়স বা ৩ বছর থেকে ৫ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে। এ সময়ে শিশু ৪ বা ৫ বছর বয়সের স্বনিয়ন্ত্রিত কাজ সম্পর্কিত সমস্যা ভুলে যায়, সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচিত্র আচরণ করতে শেখে। এ সময়ে শিশুর মধ্যে কিছু করার ইচ্ছা জাগে এবং শিশু এমনকিছু হরে বসে যার জন্য সে অপরাধবোধ মনে করে। শিশু খেলাধুলার মধ্যদিয়ে নতুন দক্ষতা লাভ করতে শেখে, যা তার পূর্বে অর্জিত আস্থাবোধকে দৃঢ়তর করে। এ সময়ে উদ্যোগ গ্রহণ এবং পরবর্তীতে অপরাধবোধের অভিজ্ঞতা তার মধ্যে বিবেকের জন্ম দেয়। এ সময়ে শিশুর উৎসাহ উদ্দীপনার শক্তিকে যদি উৎসাহিত করা যায়, তবে শিশু পরবর্তী জীবনে যে কোন কাজ সুন্দরভাবে সমাধান করতে পারবে।


সুতরাং, এ সময়ে শিশুকে যদি বাবা-মা কঠোর শাসনে লালিতপালিত করেন, তাহলে তাদের মধ্যে কোনকিছু করার উদ্যোগ কমে যাবে এবং শিশু নিজেকে অক্ষম ও অসহায় ভাবতে থাকবে। কিন্তু আবার যে শিশুকে বাবা-মা বা শিক্ষকরা তিরস্কার করে না, তাদের মধ্যে বিবেকের বিশ্বাস ঘটে। যদি উদ্যোগ এবং অপরাধবোধের মধ্যে ভারসাম্য রদ করা সম্ভব হয়, তাহলে সে শিশুর মধ্যে বড়দের মত কাজ করার ক্ষমতা গড়ে তোলে এবং তার মধ্যে দায়িত্ববোধের সৃষ্টি হয়। স্বই কার্য উদ্যোগ গ্রহণের প্রাথমিক স্তরে শিশুকে বাধাগ্রস্ত করলে শিশু অপূর্ণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হবে এবং তার ব্যক্তিত্বের গঠন দ্বিধাগ্রস্ত ও ত্রুটিপূর্ণ হবে।


৪. শ্রমশীলতা বনাম হীনম্মন্যতা (Industry Vs. Inferiority) : এ স্তরটি ৬ বছর থেকে ১২ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে। এ সময়ে শিশুকে লেখাপড়াসহ খেলাধুলার বিভিন্ন রকম দক্ষতা অর্জন করতে হয়। যে শিশু স্বাধীন ও উদ্যোগী মনোভাব অর্জন করে, সে সহজেই শ্রমশীল হয় । অন্যথায়, তার মধ্যে লজ্জা, পরাজয়ের মনোভাব ও হীনম্মন্যতার সৃষ্টি হয়। বয়সে শিশু স্কুলে যায়, শিক্ষক, শিক্ষিকা, অন্তরঙ্গ বন্ধু, সহপাঠীদের সাথে মেলামেলা করে এবং বিভিন্ন কারিগরি, বিশেষ জ্ঞান, অভিজ্ঞতা অর্জন করে, যা গ্রহণ করতে শিশুকে পরিশ্রম করতে হয়। এতে শিশু স্বাধীন ও উদ্যোগী মনোভাব অর্জন করে। পক্ষান্তরে, শিশুর কাজে বাধা দিলে নেতিবাচক আচরণ করে। শিশু নিজেকে অযোগ্য মনে করে। সুতরাং এ সময়ের সংকটের দক্ষ সমাধানের ভিতর দিয়েই শিশুর মধ্যে নিজেকে যোগ্য ভাবার সুযোগ দিতে হবে।

আরো পড়ুন: ব্যক্তিত্বের স্বরূপ বর্ণনা কর। ব্যক্তিত্ব পরিমাপের দুটি প্রক্ষেপমূলক অ বর্ণনা কর।


৫. আত্মপরিচয় বনাম ভূমিকার দ্বন্দ্ব (Identity Vs. Confusion): মনোসামাজিক বিকাশ স্তরের এ স্তরটি ১৩ হতে ১৯ বছর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। এ বয়সের মূল সমস্যা হল এ স্তরে ছেলেমেয়েরা তাদের পরিচয় নিয়ে সমস্যাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তারা অনেকগুলো প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। বিশেষ করে সমাজে তাদের কি ভূমিকা রয়েছে তা বুঝতে চেষ্টা করে। এ সময়ে বিচক্ষণ ক্ষমতা প্রখর হয় এবং 'অহংবোধ' সুদৃঢ় হয়। এ স্তরে কেউ সামাজিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধাচরণ করে, কেউবা ধর্মের দিকে ঝুঁকে পড়ে। এসব কাজই তার আত্মপরিচয়ের নির্দেশক। স্বীয় পরিচিতি লাভের চেষ্টার এটাই উত্তম সময়। তবে যাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বা সংশয় থাকে তারা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কোন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে না ফলে সমাজের কাছে পরিচিতি লাভ করতেও পারে না। এরিক এরিকসন যৌবন স্তর সম্পর্কে তাঁর মনোসামাজিক তত্ত্বে বলেছেন, বিকাশের স্তর পূর্ণ যৌন স্তরে শেষ হয়ে যায় না, মানবজীবনের বিকাশের স্তর তার সমস্ত জীবনব্যাপী। এছাড়া, এ সময়ে যদি কার্যকরভাবে সংকট মোকাবিলা করতে পারে, তবে ছেলেমেয়েদের মধ্যে আস্থাবোধ জন্মে এবং তারা সুন্দর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নিরাপত্তাবোধ অর্জন করে।


৬. ঘনিষ্ঠতা বনাম একাকীত্ব (Intimacy Vs. Isolation) : প্রাপ্তবয়স পর্যন্ত এ ধরনের সংকট পরিলক্ষিত হয়। যে যুবক তার পরিচিতি সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত হয় সে সমাজে নিজের স্থান করে নিতে পারে। স্বভাবতই সে তখন স্থায়ী সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ঘনিষ্ঠতা আশা করে থাকে। এ স্তরে মানসিক, হৃদয়তাবোধ, বন্ধুত্ববোধ, ঘনিষ্ঠতাবোধ ও একনিষ্ঠভাবোধে বাধাপ্রাপ্ত হলে ছেলেমেয়েদের মধ্যে নিঃসঙ্গতাবোধ জন্ম নেয়, যা তার পরবর্তীতে মানসিক রোগের সৃষ্টি করে থাকে।সুতরাং, এ স্তরে ব্যক্তির সংকটের সমাধান হলে ব্যক্তি আস্থার সাথে অপরকে ভালবাসতে পারে এবং একই সাথে অন্যের ভালবাসা লাভে সমর্থ হয়।


৭. সৃজনশীলত বনাম আবদ্ধতা (Generativity Vs. Stagnation) : এ স্তরের সৃজনশীলতা বলতে কোনকিছু করার প্রতি | আগ্রহ বুঝিয়ে থাকে। এ স্তরের প্রধান কাজ হল এক জনের সাথে স্থায়ী বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া এবং সন্তান লালনপালন এবং ভাবধারা, শিল্পকর্ম ইত্যাদির মধ্যে নিজেকে নিয়োজিত করে আত্মাবিস্তৃতি লাভ করা। এক্ষেত্রে আত্মবিস্তারে বাধাগ্রস্ত হলে উৎপাদনশীলতার বিপরীতে আসে অনুৎপাদনশীলতার অনুভূতি।

সুতরাং, এ সময় যদি পরবর্তী বংশধরদের কাছ থেকে ব্যক্তি যথেষ্ট সাড়া না পায়, তাহলে একঘেয়েমি ও অনীহায় ভোগে। এর কলে অন্যদের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটে এবং ব্যক্তি আবদ্ধতায় ভোগে।

আরো পড়ুন: আবেগের সংজ্ঞা দাও। আবেগকালীন শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনগুলো বর্ণনা কর।

৮. সংহতি বনাম হতাশা : পরিণত বয়সে ব্যক্তিত্ব বিকাশের ফলশ্রুতি দেখা যায়। পূর্ববর্তী পর্যায়গুলোর বিকাশমূলক কার্যাবলির সফল সমাপ্তির পর পরিণত বয়সে ব্যক্তির মধ্যে আত্মবোধের বা অহংবোধের পরিপূর্ণতা আসে। যা ব্যক্তিকে জীবন চক্রের প্রান্তিক সংকট মোকাবিলা করতে সক্ষম করে তোলে। যে ব্যক্তি পূর্বের প্রাপগুলো সফলভাবে অতিক্রম করে; তার নিজেকে সম্পূর্ণভাবে গ্রহণযোগ্য মনে হয়, সে তার জীবনের অস্তিম সংকট মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাকে। নিজের সব দায়িত্ব সে তখন নিজে নিতে পারে এবং মর্যাদা লাভে সক্ষম হয়। কিন্তু অন্যদিকে সে যা অর্জন করেছে তা নিয়ে যদি অসুখী হয়, তাহলে তার মধ্যে ব্যর্থতা আসবে যা তার জীবনকে হতাশা ও গ্লানিতে নিমজ্জিত করবে।


উপসংহার :

সর্বোপরি, এরিক এরিকসন তাঁর মনোসামাজিক বিকাশ স্তরে মানুষের ব্যক্তিত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং তাঁর প্রতিটি স্তর বা পর্যায়ে ব্যক্তির আচরণ কেমন হবে, তার সাথে কিভাবে আচরণ করলে ভালো বা মন্দ হবে সে সম্পর্কে বিশদভাবে "ব্যাখ্যা করেছেন। এরিকসনের মতবাদ থেকে মানুষের বিভিন্ন বয়সের কার্যকলাপ সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা লাভ করতে পারি, যেমন- তেমনি শিশুকে গড়ে তোলার জন্য পারিবারিক পরিবেশ কেমন হতে হবে সে সম্পর্কের ধারণা লাভ করতে পারি।

 

 

 

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!