ধর্ম, নৈতিকতা ও রাজনীতি সম্পর্কে ম্যাকিয়াভেলির ধারণা আলোচনা কর।

admin

 ভুমিকা :

ম্যাকিয়াভেলি হলেন আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার প্রবক্তা। তিনি আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তাকে বাস্তবতার দৃষ্টিতে শানিত করেন। ম্যাকিয়াভেলি আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তায় সর্বশ্রেষ্ঠ দার্শনিক হিসেবে পরিগণিত। তিনিই প্রথম আধুনিক রাষ্ট্রদার্শনিক যিনি বাস্তবতার প্রেক্ষিতে তৎকালীন রাজনীতি পরখ করেছেন। Gettel এর ভাষায় The chief difference between Machiavelli and the writers who preceded him was in his attitudes toward religion and morality, he separated politics and ethies even to the point of paradox and scandal” ধর্ম নৈতিকতা ও রাজনীতি সম্পর্কে তিনি বিশেষ অভিমত ব্যক্ত করেন।


ধর্ম, নৈতিকতা ও রাজনীতি সম্পর্কে ম্যাকিয়াভেলির ধারণা আলোচনা কর


ধর্ম সম্পর্কে ধারণা :

ধর্ম হচ্ছে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদ  ম্যাকিয়াভেলির রাজনীতির একটি মৌলিক দিক দর্শন রচন্য়  তিনি ধর্মকে বেশি প্রাধান্য দেন। মধ্যযুগের ধর্মের প্রাধান্য ছিল।  রাজনীতি ধর্ম কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হতো। ধর্মের এরূপ বাড়াবাড়িতে আর তিনি ব্যধিত হন। অত্যন্ত সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তিনি ধর্মকে ব্যবহারের নির্দেশ দেন। তিনি উপলব্ধি করেন রাজনীতির উপর বরি ভা | প্রভাব কাম্য নয়। তবে তিনি ধর্মের বিরুদ্ধে ছিলেন না। রাষ্ট্রের ই প্রয়োজনে ধর্মকে নিয়ন্ত্রিত রাখার উপর গুরু প্রদান করেন। । ম্যাকিয়াভেলি ধর্মকে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আনার পক্ষপাতী ছিলেন।

কিভাবে সুইপার সোশ্যাল ( Swiper social) যুক্ত হয়ে টাকা ইনকাম করবেন?

Ebenstein এর ভাষায়, 'It may be noted that Machiavelline interest in religion is not philosophical or theological but simply pragmatic and political, তবে তার মতে  ধর্ম বিশ্বাসকে রাষ্ট্রের কল্যাণে ব্যবহার করতে পারবে।


রাজনীতি সম্পর্কে ধারণা :

রাজনীতি ম্যাকিয়াভেলির রাষ্ট্র দর্শনের একটি মৌলিক নিক। তিনি কল্পনার রথে চড়ে রাজনীতি , বিশ্লেষণ করেন। বাস্তবতার দৃষ্টিতে তিনি রাজনীতি বিশ্লেষণ করতে চেয়েছেন। তার মতে রাজনীতিতে কোনো নৈতিকতার স্থান নেই। তিনি বিচ্ছিন্ন ও ইতালিকে একত্রীকরণে সচেষ্ট না ছিলেন। তার রাষ্ট্রের ঐক্য ও সংহতি অর্জনে দক্ষ শ অপরিহার্য। শাসকের উদ্দেশ্য হবে রাষ্ট্রের স্বার্থ সংরক্ষন।সংরক্ষণের জন্য শাসকগণ শঠতা, প্রতারণা ও ধোঁকাবাজীর আশ্রয় নিতে পারবে। J.R Hate বলেছেন, Machiavelli is Tregarded as the chief exponent of the autonomy of Epolitics he divorced politics from others and morality. ম্যাকিয়াভেলি মনে করেন, রাষ্ট্র একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। রাই হচ্ছে চূড়ান্ত প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটির কোনো উচ্চতর ক্ষমতার অধিকারী থাকতে পারে না। তার মতে, রাষ্ট্রের ক্ষমতা হচ্ছে ■ সর্বোচ্চ ক্ষমতা তার উপর কোনো উচ্চতর ক্ষমতার প্রভাব থাকতে পারে না। তার মতে, state is not product of divine origin, It is a product of human being so everything depends on human law.

ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে ইউরোপের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থার বিবরণ দাও

নৈতিকতা সম্পর্কে ধারণা :

ম্যাকিয়াভেলির মতে দুই ধরনের নৈতিকতা রয়েছে।

যথা-

১. সরকারী নৈতিকতা ও

২- ব্যক্তিগত নৈতিকতা


১. সরকারী নৈতিকতা : রাজা বা শাসক রাষ্ট্র শাসনের জন্য যা কিছু অনুকূল তাই করে যাবে। ব্যক্তিগত লক্ষ্যে জীবনের যে কাজ করা অন্যায় সে কাজ যদি রাষ্ট্রের পক্ষে অনুকূল হয় তবে শাসকের পক্ষে তা করা অন্যায় হবে না।


২. ব্যক্তিগত নৈতিকতা : ব্যক্তিগত জীবনে মানুষ ধর্ম ও নৈতিকতার অনুশাসন মেনে চলবে। শাসিত শ্রেণি নৈতিকতা বিবর্জিত হতে পারে না। প্লেটোর ব্যয় ম্যাকিয়াভেলিও বিশ্বাস করতেন যে, জনগণ যদি দুর্নীতিপরায়ণ ও অসৎ হয় তাহলে শাসন প্রতিষ্ঠিত হতে ম্যাকিয়াভেলিও দ্বৈত নৈতিকতার প্রয়োজন হয় না। (He was unmoral but not immoral) নৈতিকতার ও অন্যায় পরিহার করেন। কিন্তু তার অর্থ এই নয়। তিনি ব্যক্তি জীবনে নৈতিকতা বিবর্জিত ছিলেন, 'science the ruter is outside the group or at lest in a very special relation it to he is above the morality to be enforced with 1 the group” রাষ্ট্রের ঐক্য ও সংহতির প্রয়োজনে শাসকগণ বরোধী কার্যকলাপ করতে পারবে। প্রয়োজনে তার লগণকে সাথে কপটতা, প্রতারণা করতে পারবে।

P.Das বলেন ,It is not necessary that a prudent ruler will always keep his faith and act according to virtuous".


ধর্ম ও নৈতিকতা সম্পর্কে মনোভাব হওয়ার কারণ :

ধর্ম ও নৈতিকতা সম্পর্কে এমন মনোভাব হওয়ার কিছু কারণ পরিলক্ষিত করা যায়। যথা :


১. বিজ্ঞানে পরিণত করা : তিনি রাজনীতিকে ধর্ম ও ইতিশাস্ত্রের রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত করে তাকে একটি স্বাধীন ও স্বনির্ভর বিজ্ঞানে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। তার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল বাস্তবধর্মী। তার কাছে অবাস্তব বা কল্পনার কোনো মূল্য ছিল না।


২. মানুষের স্বার্থপরতা : একজন রাষ্ট্রচিন্তাবিদ হয়ে তিনি পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছিলেন যে, মানুষ যেহেতু স্বভাবত স্বার্থপর ও প্রতারক, সুতরাং তাকে নৈতিক বা ধর্মীয় অনুশাসনের মাধ্যমে শাসন করা অরণ্যে রোদন করারই শামিল। চোর না মানে ধর্মের কাহিনী। কাজেই চোরকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে জেল হুলুম নীতির উপর ভিত্তি করেই তা করতে হয়, ধর্ম বা নীতিবাক্যের উপর ভিত্তি করে নয়।


৩. ইতালির চরম সংকট : ম্যাকিয়াভেলির সময় ইতালি ছিল সম সংকটময়। একজন বাস্তব চিন্তাবিদ হয়ে তিনি ইতালির সমসাময়িক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শাসককে ধর্ম ও নৈতিকতার শাসন বাদ দিয়ে রাষ্ট্রের কল্যাণের পক্ষে কাজ করে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দেন।


→ সমালোচনা : ম্যাকিয়াভেলির ধর্ম নৈতিকতা ও রাজনীতি সম্পর্কিত মতবাদ বহুমুখী সমালোচনার সম্মুখীন। নিম্নে তার বাদ দেয়া হলো

১. ম্যাকিয়াভেলি রাজনীতি ও নৈতিকতাকে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন করেন। বস্তুত ন্যায়নীতি ও রাজনীতির মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক বিরাজমান। যেমন : আইনের মধ্যে সামাজিক মূল্যবোধ ও ন্যায়বোধের পরশ আবশ্যক। ফক্স (Fox) যথার্থই মন্তব্য | রন, নীতির দিক হতে যা অন্যায় রাজনীতির দিক হতে তা পায় হতে পারে না।

জন লকের সম্পত্তি তত্ত্ব ও তার প্রভাব আলোচনা কর।

২. তার নৈতিকতার দ্বৈত মানদণ্ড নীতিকে স্বতঃসিদ্ধরূপে বহন করা যায় না। এটা অস্বীকার করা যায় না যে, “ক্ষমতার ইজনৈতিক লড়াইয়ে রাজনীতিবিদগণ নীতিগতভাবে রাজনীতিতে নীতিতে গ্রহণ করে থাকেন।"


৩. ধর্ম ও নৈতিকতা সম্পর্কিত মতবাদের জন্য অনেকে ম্যাকিয়াভেলিকে 'ছদ্মবেশী শয়তান' বলে মন্তব্য করেছেন।


৪. ম্যাকিয়াভেলি কেবল বর্তমানকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে মোটেই সচেতন ছিলেন না।


৫. উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ম্যাকিয়াভেলি শাসককে যে কোনো পন্থা অবলম্বনে পরামর্শ নিয়েছেন, যা আধুনিক জাতীয়তাবাদ তথা ফ্যাসিবাদের সহায়ক।

জন লক কে ছিলেন? জন লককে কেন আধুনিক গণতন্ত্রের জনক বলা হয়?

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধন অর্থাৎ রাষ্ট্রের ঐক্য ও সংহতি সাধন ও রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করার জন্য ম্যাকিয়াভেলি ধর্ম ও নৈতিকতাকে যেভাবে রাজনীতি থেকে সম্পূর্ণরূপে পৃথক করেছিলেন তা সমালোচিত হলেও শুধুমাত্র রাষ্ট্রের খাতিরে অনেকে তাকে সমর্থন করেছেন। সেবাইন (Sabine) বলেছেন যে, ম্যাকিয়াভেলির এ দৃষ্টিভঙ্গি নৈতিক নিরপেক্ষতা ছাড়া কিছু নয়। তার ভাষায়, He sanctioned the use of immoral means by rulers to gain an end, but he never doubted that moral corruption in a people makes good government impossible, গির্জা ও ঈশ্বর তত্ত্ব প্রচারিত ধর্ম ও নৈতিকতার সাথে রাষ্ট্রের কোনো সম্পর্ক নেই এ কারণেই বলা হয়েছে যে, It is isolated from morality and religion.


#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!