মিশরীয় সভ্যতায় নীল নদের প্রভাব আলোচনা কর।

admin

 

ভূমিকা : মিশরীয় সভ্যতার প্রাণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় নীলনদকে। মিশর সম্পর্কে গ্রীক ইতিহাসবিদ হেরোডোটাস লিখেছেন, যে ব্যক্তি মিশর দেখেছেন, সে অবশ্যই উপলব্ধি করেছেন যে, এটি একটি দেশ নীলনদের দান। নীলনদ এমন একটি উপাদান যা মিশরকে অর্থাৎ মিশরীয় সভ্যতাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।

মিশরীয় সভ্যতায় নীল নদের প্রভাব আলোচনা কর।

নীলনদের প্রভাব : ৪৪৩ খ্রিস্টপূর্বে ইতিহাস বিজ্ঞানের জনক হেরোডোটাস মিশর পরিভ্রমণ করেন। তিনি বলেন, Egypt is the gift of Nile" অর্থাৎ মিশর নীলনদের দান। নিম্নে মিশরীয় সভ্যতায় নীলনদের প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-


১. কৃষি ভূমির উপর প্রভাব : কৃষিভিত্তিক সমাজের প্রাণ বলা হয় নীলনদকে। মিশরে কৃষি ব্যবস্থা সমগ্রটাই নীলনদকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। মিশরে ভূমি অধিকার আইন করা হয় এ সভ্যতার সূচনা থেকেই। মিশরের কৃষি অর্থনীতি প্রভাবিত হয়েছিল নীলনদকে কেন্দ্র করে। প্রাচীন মিশরীয়দের উৎপাদিত ফসলের মধ্যে গম, যব, পীচ, বার্লি, কাউন প্রভৃতি। এছাড়া মিশরে পিঁয়াজ, শস্য, মটরশুটি, বর্বটি, লেটুস, তরমুজ, মূলা বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি ও ফলমূলের চাষ করত।


২. বন্যা বা প্লাবন : মিশরীয় সভ্যতার গোপন রহস্য ছিল নীলনদের বন্যা বা প্লাবন। আফ্রিকার মধ্য অঞ্চলে গ্রীষ্মকালের শুরুতে প্রচুর বন্যার প্রকোপ দেখা দিত। বৃষ্টিপাতের ফলে প্রচুর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে বন্যার পানি নদীর দুকূল উপচিয়ে চারদিকে প্লাবিত হয়। বন্যা শেষে নীলনদ অববাহিকায় প্রচুর পলিমাটি সঞ্চিত হতো এবং কৃষি কাজ করার উপযোগী হয়ে উঠে। মিশরীয়রা নরম মাটিতে লাঙ্গল ও কোদাল দিয়ে চাষ করে বীজ ছিটিয়ে বপন করতো। ফলে জমিতে প্রচুর ফসল উৎপাদিত হতো।


৩. ব্যবসা-বাণিজ্য : প্রাচীন মিশরের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য তিনটি পথ ব্যবহৃত হতো। যথা- ভূমধ্যসাগর থেকে উত্তর দিকে, নুবিয়া ও লোহিত সাগর থেকে দক্ষিণ দিকে এবং লোহিত সাগর থেকে পূর্ব দিকে। আর প্রাচীন মিশরের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল নীলনদের। সব আমদানি-রপ্তানি এবং আন্তঃবাণিজ্যের জন্য নীলনদের জলপথ ছিল সুবিধাজনক। প্রাচীন মিশরীয়রা ব্যবসা-বাণিজ্যের শুরু থেকেই কিছু ব্যবহারিক কলাকৌশল আয়ত্ত করেছিল।


৩. যোগাযোগ : নদীপথেই ছিল মিশরীয়দের যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রধান মাধ্যম। এক্ষেত্রে নীলনদই ছিল প্রধান জলপথ। যোগযোগ ব্যবস্থার জন্য মিশরীয় সভ্যতা ব্যাপক অগ্রগতির পথে অনবদ্য অবদান রাখে নীলনদ। নীলনদ মিশরকে দিয়েছিল নতুন অধ্যায়।


৫. শস্য পঞ্জিকা : নীলনদের অবস্থার উপর ভিত্তি করে মিশরীয়গণ আবিষ্কার করে শস্যপঞ্জিকা। মিশরীয়রা শস্যপঞ্জিকা ব্যবহার করে মিশরীয়রা কৃষি ব্যবস্থাকে নিয়মিত পরিচালিত করতো। ফলে মিশরীয়রা ব্যাপকভাবে কৃষিক্ষেত্রে অগ্রগতি লাভ করে।


৬. উর্বর ভূমি : বন্যার শেষে নভেম্বর মাসে পলি পড়তে থাকে প্রায় নীলনদ তীরবর্তী ১২৫০০ বর্গমাইল এলাকায়। এসব জমিতে পলি পড়ে জমির উর্বরতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে অধিক ফসল উৎপাদিত হয়ে থাকে। যা মিশরের অর্থনৈতিক অবস্থাকে সচ্ছল রাখতে সহায়তা করেছিল।


৭. ঋতু আবিষ্কার : নীলনদের গতিবিধির উপর ভিত্তি করে মিশরীয়রা ঋতুর আবিষ্কার করে। যা উচ্চ ফসল ফলতে সহায়তা করে। যথা :


(১) প্লাবন কাল

(২) প্লাবনোত্তর কাল

(৩) শুষ্ক মৌসুম

 

৮. লেখার উপকরণ : নীলনদের জলাভূমিতে নীলনদের দু'ধারে নীল বদ্বীপে জন্মাত লম্বা নলখাগড়ার মত ঝাড়। এগুলো প্যাপিরাস গাছ ।


৯. ধর্মীয় বিশ্বাস : নীলনদের গতিবিধি মিশরীয়দের ধর্মবিশ্বাসে নতুন উপাদান সংযোগ করে । মৃত্যুই জীবনের শেষ নয়। নীলনদের প্লাবন শেষ হয়ে গেলে নীলনদ হয়ে যেত মৃতপ্রায় ও নিষ্পাপ। নীলনদ স্থান পায় মিশরীয়দের বিশ্বাস, আচার-অনুষ্ঠান ও কিংবদন্তিতে।


উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মিশরীয় সভ্যতার উন্নতির পথে ব্যাপক অবদান রেখেছিল নীলনদ। নীলনদ ছাড়া মিশরীয় সভ্যতার অস্তিত্ব কল্পনার অবকাশ নেই। মিশরীয় সভ্যতা ইতিহাস ঐতিহ্য প্রভৃতির ক্ষেত্রে নীলনদের অবদান অনস্বীকার্য।


#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!