ব্যক্তিত্বের স্বরূপ বর্ণনা কর। ব্যক্তিত্ব পরিমাপের দুটি প্রক্ষেপমূলক অ বর্ণনা কর।

admin

ভূমিকা :

ব্যক্তিত্ব হল ব্যক্তির অন্তর্নিহিত গুণ। ব্যক্তিত্বকে সমাজকাঠামো থেকে আলাদা করা যায় না। ব্যক্তি তার সমাজের ব্যক্তিবর্গ, তাদের আচরণ, সংস্কৃতি, সামাজিক মূল্যবোধ প্রভৃতি উপাদানের সাথে পারস্পরিক সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়ে থাকে। আর এসব পারস্পরিক সম্পর্কের ফল হিসেবে ব্যক্তি একটি ব্যক্তিত্ব অর্জন করে থাকে। অর্থাৎ ব্যক্তির সাথে সমাজের বিভিন্ন উপাদানের পারস্পরিক প্রতিক্রিয়ার ফলেই ব্যক্তিত্বের উদ্ভব ঘটে। ব্যক্তিত্ব পরিমাপের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের অভীক্ষা ব্যবহৃত হয়। যেমন- সাক্ষাৎকারমূলক অভীক্ষা, জীবন ইতিহাস অনুসরণ পদ্ধতি, রেটিং স্কেল, পরিস্থিতিমূলক অভীক্ষা প্রভৃতি।

ব্যক্তিত্বের স্বরূপ বর্ণনা কর। ব্যক্তিত্ব পরিমাপের দুটি প্রক্ষেপমূলক অ বর্ণনা কর।

ব্যক্তিত্বের স্বরূপ :

মানবজীবনে ব্যক্তিত্ব একটি অতি পরিচিত শব্দ। প্রতিটি ব্যক্তির কিছু কিছু গুণ বা বৈশিষ্ট্য বা থাকে, যা তাকে অন্যান্য ব্যক্তি থেকে পৃথক করে। নিম্নে ব্যক্তিত্বের স্বরূপ বা বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হল :


প্রথমত, ব্যক্তি যখন জন্মগ্রহণ করে, তখন ব্যক্তির মধ্যে সুপ্ত থাকে অনন্ত সম্ভাবনা ও বিচিত্র শক্তি এবং সে সম্ভাবনা ও শরিরে বাস্তবে রূপায়িত করার জন্য ব্যক্তির এক দৈহিক ও মানসিক সংগঠন রয়েছে। জন্মের পর থেকেই পরিবেশের বিভিন্ন শক্তিগুলো ব্যক্তির উপর ক্রিয়া করে এবং ফলে ব্যক্তির অন্তর্নিহিত শক্তি, ব্যক্তির সহজাত প্রবৃত্তি ও প্রবণতা পরিবেশের সাথে যে পারস্পরিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে তা থেকেই ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকশিত হয়। সুতরাং, পারিপার্শ্বিকের সাথে উপযোজনের জন্য ব্যক্তির কার্যাবলি। তার ব্যক্তিত্বের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ।


দ্বিতীয়ত, ব্যক্তির সাথে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের উপযোজনের পিছনে আছে ব্যক্তির চিন্তা, অনুভূতি, ইচ্ছা, ভাবধারা, কামনা, বাসনা, জীবনাদর্শ এবং ব্যক্তির সহজাত প্রবণতা ও বৃষ্টি।


তৃতীয়ত, ব্যক্তিত্ব দেহ ও মনের এক জীবন্ত ঐক্য। মানসিক ও দৈহিক বৈশিষ্ট্যগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটা সুসামঞ্জস্য রূপ লাভ করে। চতুর্থত, আত্মসচেতনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাই ব্যক্তিত্বের মূলভিত্তি। যে আত্মসচেতন জীব নিজের উদ্দেশ্য সম্পার। সচেতন এবং নিজেকে নিয়ন্ত্রিত করতে সমর্থ, তিনিই ব্যক্তিত্বের অধিকারী।


পঞ্চমত, ব্যক্তিত্ব স্থির বা নিশ্চল নয়, ব্যক্তিত্বের গঠন ক্রমবর্ধমান ও গতিশীল। পরিবেশের মধ্যে পরিবর্তন ও বৈচিত্র্য এবং এ পরিবর্তনশীল পরিবেশের সাথে ব্যক্তির সঙ্গতিসাধনের প্রচেষ্টার জন্য ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের মধ্যেও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যা


ষষ্ঠত, ব্যক্তিত্ব পরিবর্তনশীল ও বিকাশমান হলেও এর মধ্যে একটা স্থায়িত্ব রয়েছে, যার মাধ্যমে ব্যক্তির ব্যক্তিত্বকে বুঝে নেওয়া সম্ভব। প্রতিটি ব্যক্তিই এক বিশেষ ব্যক্তি, অন্য কারও সাথে তার তুলনা হয় না।


সপ্তমত, ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব আত্মপ্রকাশ করে সামাজিক পরিবেশের মধ্যে। সমাজের আচারব্যবহার, রীতিনীতি, কৃষ্টি ও ভাবনা প্রভৃতি সামাজিক উপাদান ব্যক্তিত্ব সৃষ্টিতে সহায়তা করে। এজন্য ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব সমাজের উপর নির্ভরশীল।


ব্যক্তিত্ব পরিমাপের দু'টি প্রক্ষেপমূলক অভীক্ষা :

ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব পরিমাপের চেষ্টা বহু অতীতকাল থেকেই চলে আসছে। ব্যক্তির দৈহিক গঠন ও বাহ্য আচরণের লক্ষ্য করে বা ব্যক্তির চিন্তা, ভাবধারা, আদর্শ প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে ব্যক্তিকে এই করে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব নিরূপণের চেষ্টা করা হয়। এছাড়া বর্তমান যুগে ব্যক্তিত্ব পরিমাপের ক্ষেত্রে আরও নতুন নতুন পদ্ধতি বা অতী অনুসরণ করা হচ্ছে । নিম্নে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব পরিমাপের প্রক্ষেপমূলক দু'টি অভীক্ষা আলোচনা করা হল :


ক. সাক্ষাৎকারমূলক অভীক্ষা :

ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব পরিমাপ করার ক্ষেত্রে সাক্ষাৎকারমূলক অভীক্ষা খুবই পুরাতন পদ্ধতি। বাকি সাথে সাক্ষাৎ করে তার সাথে আলাপ আলোচনায়, কথাবার্তায় এবং তাকে নানারকম প্রশ্ন করে ব্যক্তিত্ব পরিমাপ করার চেষ্টা কর হয়। এ সাক্ষাৎকার সাধারণত চার রকমের হয়ে থাকে। যথা:

  •  নির্ধারিত সাক্ষাৎকার,
  •  অনির্ধারিত সাক্ষাৎকার,
  • চাপ বা উত্তেজনামূলক সাক্ষাৎকার এবং
  • পরিশ্রান্তিকর বা ক্লান্তিমূলক সাক্ষাৎকার।

১. নির্ধারিত সাক্ষাৎকার : নির্ধারিত সাক্ষাৎকারে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী পূর্বে থেকেই কতকগুলো সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন তৈরি করে রাখেন। এবং এগুলোই সাক্ষাৎ প্রদানকারীকে জিজ্ঞাসা করেন। এক্ষেত্রে আলোচনার ধারা একটি নির্দিষ্ট গতিতে অগ্রসর হয়। কেননা সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী সকলকে একটি নির্দিষ্ট তালিকা অনুযায়ী প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন।


২. অনির্ধারিত সাক্ষাৎকার : অনির্ধারিত সাক্ষাৎকারে পূর্ব থেকেই কোন প্রশ্ন তালিকা প্রস্তুত করা থাকে না। এ সাক্ষাৎকারে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী স্বাধীনভাবে প্রশ্ন করতে পারেন এবং উত্তরসমূহ খুঁটিয়ো বিশ্লেষণ করতে পারেন। তবে এ ধরে সাক্ষাৎকারে সাক্ষাৎ প্রদানকারী অনেক সময় বিরক্তি বোধ করতে পারেন।


৩. চাপমূলকরক্ষাৎকার : এ ধরনের সাক্ষাৎকারের সময় ব্যক্তিকে উত্তেজিত করা হয় এবং লক্ষ্য করা হয় যে, ব্যক্তি উত্তেজনার মূহুর্তে

করখানি নিজেকে সংযত রেখে নিজের উপাদানগুলোর সদ্ব্যবহার করতে সক্ষম হন।


৪. পরীশ্রত্তিকর ক্ষাৎকার : এ ধরনের সাক্ষাৎকার দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং একটা সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে অগ্রসর হয়। এ ধরনের কোনো বিয়েকরন পবেষক সাক্ষ। কার প্রদানকারীকে প্রতি সময় বিভিন্ন প্রশ্ন করে ব্যতিব্যস্ত তা পরিশ্রান্ত করে তোলে। এক পর্যায়ে ব্যক্তি যখন ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ে, তখন তার মানসিক প্রতিরোধ ব্যবস্থাসমূহ ভেঙে পড়ে এবং তার অসঙ্গতিগুলো ধরা পড়ে। 


খ. পরিস্থিতি অন্তীক্ষা:

পরিস্থিতিমূলক অভীক্ষায় কোন ব্যক্তি বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে অন্য ব্যক্তির সাথে কিভাবে আচনাগ মাধ্য তার ব্যক্তিত্ব নির্ধারণ করা হয়। শিশুরা সাধুকে অসাধু এ অভীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়। যেমন- শিশুদের কিছু মুদ্রা বলা হল এবং খেলা শেষে মুদ্রাগুলো আগের জায়গায় রাখতে বলা হল। অতঃপর মুদ্রার সংখ্যা গণনা করে কোন শিশুর আছে কি না জানা যায়। এভাবে বিশেষ পরিস্থিতিতে পরীক্ষক শিশুদের সাধুতা কিংবা অসাধুতা নির্ণয় করতে পারেন।


উপসংহার:

উপরিউক্ত আলোচনার পরিশেষে একথা বলা যায় যে, বাক্তির ব্যক্তিত্ব হল তার আচরণের সামগ্রিক চরিত্র বা এরতি। ব্যক্তিত্বের স্বরূপ একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম। ব্যক্তিত্ব পরিমাপের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি বা অভীক্ষা। ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে প্রক্ষেপণমূলক অভাক্ষার ক্ষেত্রে সাক্ষাৎকার ও পরিস্থিতি অভীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!