আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী? আলোচনা কর।

admin

ভূমিকা :

রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে যে প্রধান তিনটি যুগ রয়েছে তার মধ্যে আধুনিক যুগ বিশেষ স্থান দখল করে আছে। রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে আধুনিক যুগকে স্বর্ণযুগ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। মধ্যযুগের শেষের দিকে সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের মাধ্যমে আধুনিক যুগের আবির্ভাব ঘটে। ফলে সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনসহ জ্ঞানবিজ্ঞানের ব্যাপক প্রসার লাভ করে। তাই এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক গেটেল বলেছেন যে, "The issues of the middle ages were ceasing to be of importance and a new spirit was beginning to appear in intellectual method." তাই বলা যায়, প্রাচীন ও মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তার ব্যাপক প্রসার লাভ করে আধুনিক যুগে। তাই আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার বৈশিষ্ট্যও স্বতন্ত্র।


আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী? আলোচনা কর।


আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা :

ইংরেজি Modem শব্দের বাংলা অর্থ আধুনিক। ইংরেজি Modem শব্দটি Mode থেকে এসেছে। যার অর্থ পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া। সুতরাং যে পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া গতানুগতিক প্রক্রিয়া থেকে স্বতন্ত্র এবং বর্তমানের সাথে সংগতিপূর্ণ, তাকেই আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা সনাতনী রাষ্ট্রচিন্তার পথ ধরে সময়ের বিবর্তনে বর্তমান অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। যদিও আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা পূর্বের রাষ্ট্রচিন্তা থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তায় মানবসমাজ ও আধুনিক যুগ নিয়ে আলোচনা করে ।


আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার বৈশিষ্ট্য :

প্রাচীন ও মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তার ন্যায় আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তারও স্বতন্ত্র কতকগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিম্নে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো :


১. ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ : আধুনিক আবির্ভাবের ফলে বক্তির যুক্তিবাদিতা, রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পায় এবং সে অনেকটা সমমর্যাদায় আসীন হওয়ার সুযোগ লাভ করে। পার্থিব জগতের সুখ-দুঃখ আনন্দ সম্পর্কে সে আগ্রহী হয়ে উঠে। যুক্তি অভিজ্ঞতা ও বিচারবুদ্ধি দিয়ে সমস্ত ঘটনা ও সিদ্ধান্তকে সে বিশ্লেষণ করতে আরম্ভ করায় গির্জার প্রভাব কমে আসে। সমাজ ও রাষ্ট্রের নির্মাতা ব্যক্তি, বিধাতা নয় এবং মনুষ্যসৃষ্ট আইন দ্বারা সমাজ ও রাষ্ট্র শাসিত হয়। প্রাকৃতিক বা ঐশ্বরিক আইন দ্বারা নয়। অর্থাৎ, ধর্ম, রাষ্ট্র ও সমাজের উপর মানুষের অবস্থানকে সুনিশ্চিত করা হয়। অর্থাৎ আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তায় ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।


২. সাম্য সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ : আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা করা। মধ্যযুগের আর্থসামাজিক অবস্থা কেবল ধর্মকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল। গির্জা মানুষের মনে এ ধারণা তৈরি : দিয়েছিল যে, ইহজগৎ খুবই তুচ্ছ। পাপ ও পুণ্য হলো আসল এবং গির্জাকে সম্ভষ্ট রাখতে পারলে পরকালে মানুষ পূর্ণ্যর সুখ ভোগ করতে পারবে। পরকাল সম্পর্কে এমন ধারণা তৈরি হওয়ায় মধ্যযুগে আর্থসামাজিক বৈষম্যকে তারা গুরুত্ব প্রধান করেনি। কিন্তু পরবর্তীতে সাম্য অর্জনে সমাজে একশ্রেণির মানুষের আগ্রহ তৈরি হয়।


আরো পড়ুন:রাষ্ট্রদর্শনের ইতিহাসে আন্দোলনের পরিষদ তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।


৩. ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব : মধ্যযুগে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব কেবল নামেমাত্র ছিল। জাতীয় সার্বভৌম রাষ্ট্র বলতে যা বুঝায় গির্জার দাপটে তা আত্মপ্রকাশ করার কোনো রূপ সুযোগ পায়নি। কালক্রমে জাতীয় রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের পাশাপাশি গড়ে উঠে ব্যক্তি সার্বভৌমত্ব ।


৪. ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ : ধর্মনিরপেক্ষতা আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য । এ মতবাদের প্রবক্তা হলেন ম্যাকিয়াভেলি । তিনিই সর্বপ্রথম ধর্মকে রাজনীতি থেকে পৃথক করেছেন। বর্তমানে অনেক দেশই রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ নীতিকে গ্রহণ করেছে।


৫. প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র : আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম একটি প্রধান দিক হলো প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্রের বিজ্ঞা লাভ। মূলত ফরাসি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়। আধুনিক চিন্তাবিদদের মধ্যে জন গণতন্ত্র সম্পর্কে সৃজনশীল ব্যাখ্যা প্রদান করেন। পরবর্তীতে 1. S. Mill প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্রের কথা বলে সাম্প্রতিককালে লাঙ্কি, টকবিল প্রমুখ আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ এ সম্পর্কে তাদের সুচিন্তিত মতবাদ ব্যক্ত করেন।


৬. পুঁজিবাদ : গণতন্ত্রের পাশাপাশি পুঁজিবাদের বিকাশ আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার একটি উল্লেখযোগ্য দিক। পুঁজিবাদে আবির্ভাবের ফলে কৃষিপণ্যের সাথে শিল্পের উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থার প্রসার লাভ করে। ফলে সার্বিকভাবে অর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। অন্যদিকে, গণতন্ত্রের সাথে পুঁজিবাদের সংযুক্তির সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রচিন্তার বিকাশ ব্যাহত হয়।


আরো পড়ুন: আধুনিক রাষ্ট্র চিন্তায় রুশোর ভূমিকা মূল্যায়ন কর।


৭. লোকায়তবাদ : আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য লোকায়তবাদ। আধুনিক রাষ্ট্র লোকায়তবাদ বিশেষ ভূমিকা পালন করে। মধ্যযুগীয় চার্চ এর প্রভাবমুক্ত হয়ে পারলৌকিক জগতের পরিবর্তে ইহলৌরি কে জগতের উপর অধিক গুরুত্ব পায়। এর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রচিন্তা যেখানে ঈশ্বরকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে, কিন্তু আধুলি ক যুগে রাষ্ট্রচিন্তায় জনগণের সার্বভৌমত্বকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে বলা হয়, জনগণের ইচ্ছাই ঈশ্বরের ইচ্ছা।


৮. উপযোগবাদ : আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো Utilitarianism বা উপযোগবাদ। ঊনবি‍ শতকের প্রথমদিকে নৈতিকতাবাদ এবং স্বাধীনতার নতুন ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এ উপযোগবাদের জন্ম হয়, যা আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তাকে প্রভাবিত করছে।


৯. যুক্তির প্রাধান্য : মধ্যযুগে যেখানে ধর্মীয় বিশ্বাস ও নৈতিকতাকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রচিন্তায় বিশ্বাসের পরিবর্তে মুক্তি উপর জোর দেয়। এক্ষেত্রে কেবল রাষ্ট্রচিন্তা নয়, সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রে যুক্তির প্রাধান্য লক্ষণীয়।


১০. উদারতাবাদ : উদারতাবাদের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, উদারতাবাদী চেতনার প্রথম প্রকাশ ঘটে সপ্তদশ শতকে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও জার্মানিতে। ১৬৮০ সালে জেমন্সের স্বৈরাচারী নীতির বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের জনসাধা দ্বারা যে গৌরবময় বিপ্লব সাধিত হয় তাকেই উদারতাবাদের প্রথম স্তর বলা হয়। পরবর্তীতে ১৭৮৯ সালের বিপ্লবকেও উদারতাবাদের বিপ্লব বলে আখ্যায়িত করা যেতে পারে। ১৯১০ সালে জার্মানির বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদারতাবাদী আন্দোলনের ঢেউ সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে থাকে । ধর্ম ও রাজনীতি চিন্তার ক্ষেত্রে অপরের মতামতের শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মধ্য থেকেই উদারতাবাদের সৃষ্টি। যা আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম প্রধান একটি বৈশিষ্ট্য।


১১. জাতীয় রাষ্ট্রের ধারণা : আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম একটি দিক হলো জাতীয় রাষ্ট্র সম্পর্কে ধারণা। রেমেন্ট সূচনালগ্নে জাতীয় রাষ্ট্রের ধারণার বিকাশ ঘটে। পরবর্তীকালে রাষ্ট্রচিন্তার মূলভিত্তি হিসেবে জাতীয় রাষ্ট্রের ধারণাকে কো করে মাগরিক অধিকার, গণসার্বভৌমত্ব পার্লামেন্টারি বা সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যায়।


১২. নৈরাজ্যবাদ : ঊনবিংশ শতাব্দীতে নৈরাজ্যবাদী ধারণার উদ্ভব হয়। এ মতবাদে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা অস্বী করা হয়। এ মতবাদের প্রবক্তাগণ হলেন, রুশো, ডারউইন, টমাস হব কিন্তু। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অপ্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করে সমাজে ব্যক্তির গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা তুলে ধরা হয়। অর্থাৎ ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়া হয়।


১০. উগ্র জাতীয়তাবাদ : শিল্পবিপ্লবকে কেন্দ্র করে বুর্জোয়া ও পুঁজিবাদী সমাজের বিকাশ লাভ করে। এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী শিল্পজাত পণ্যের বাজার দখল নিয়ে শিল্পনির্ভর দেশগুলোর মধ্যে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রসার লাভ করে। ফলে জাতীয়তাবাদ উগ্র রূপ ধারণ করে। এর উপর ভিত্তি করে ফ্যাসিবাদ ও নাৎসিবাদের প্রসার লাভ করে। যার প্রত্যক্ষ ফলাফল লক্ষ্য করা যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন। এক্ষেত্রে উগ্র জাতীয়তাবাদ আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার প্রভাব লক্ষ্য করা যায় ।


১৪. ধর্ম থেকে রাজনীতি পৃথক : মধ্য যুগের রাজনীতিতে ধর্মের প্রত্যক্ষ প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে রাজনীতিকে ধর্মীয় প্রভাবমুক্ত করা হয়। এক্ষেত্রে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার জনক ম্যাকিয়াভেলির অবদানকে স্বীকার করা হয়। তাঁর পূর্ববর্তী বেশ কয়েকজন রাষ্ট্রচিন্তাবিদ ধর্ম থেকে রাজনীতি পৃথক করার কথা বললেও পুরোপুরি সম্পন্ন করতে পারেনি। তারা নৈতিকতার বিষয়টির উপর জোর দিয়েছেন।


১৫. সমাজতন্ত্র : আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে পুঁজিবাদের পাশাপাশি সমাজতান্ত্রিক চিন্তার প্রসার সেরে লক্ষ করা যায়। প্রথমদিকে এটি ইউরোপে বিকাশ লাভ করলেও পরবর্তী সময় এশিয়া মহাদেশেও লক্ষ্য করা যায়। সমাজতন্ত্রের আবির্ভাবের ফলে সমাজ কাঠামোর মধ্যে আমূল পরিবর্তন আসে। উৎপাদন পদ্ধতি ও উৎপাদন সম্পর্কের বিকাশ ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সূচিত হয়। সর্বোপরি সমাজতন্ত্র সাম্যের ভিত্তিতে মানুষের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক লর ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন সাধন হয়।


১৬. ভৌগোলিক আবিষ্কার : আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা বিকাশে গ্যালিলিও, ভেসালিয়াম, হার্বি, ভাস্কো-দা-গামা, কলম্বাস প্রমুখ চিন্তাবিদদের আবিষ্কার যোগাযোগ ব্যবস্থা ও জ্ঞানবিজ্ঞান চেতনা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে যা পরবর্তী াদের রাষ্ট্রচিন্তায় পরিবর্তন সাধনে অগ্রগামী হিসেবে কাজ করে।


আরো পড়ুন: ম্যাকিয়াভেলিকে আধুনিক যুগের প্রথম রাষ্ট্রচিন্তাবিদ বলা হয় কেন


১৭. সর্বাত্মবাদ : সর্বাত্মকবাদকে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার একটি উজ্জ্বলতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফলে সর্বাত্মবাদী প্রচেষ্টায় রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কিছুকে সহ্য করা হয় না। এ মতবাদে রাষ্ট্র শক্তি সমাজে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উপরে স্থান দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকবাদকে প্রতিহত করা হয়।


উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, রেনেসাঁ, শিল্পবিপ্লব, ফরাসি বিপ্লব এবং যুক্তিবাদকে কিক কেন্দ্র করে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার সূচনা হলেও পরবর্তীকালে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক কাঠামোয় তার অবস্থানকে শক্ত করেছে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রচিস্তার প্রসারে দুটি বিশ্বযুদ্ধ এবং পরবর্তীকালে স্নায়ুযুদ্ধের প্রভাব চলমান বিশ্ব রাজনীতিকে এক নতুন ধারায় আবদ্ধ করেছে।


#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!