রাষ্ট্রচিন্তায় টি.এইচ. গ্রিনের অবদান মূল্যায়ন কর ।

admin

ভূমিকা :

উপযোগবাদী দার্শনিকগণ গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের উপাসক হলেও তারা ব্যক্তি বা রাষ্ট্রের সম্পর্ককে যথার্থ প্রেক্ষিতে উপস্থাপিত করতে ব্যর্থ হন। উপযোগবাদের এ ব্যর্থতার সমাধানের নতুন পরিকল্পনা নিয়ে যে বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় এগিয়ে আসেন ইংল্যান্ডীয় রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে তাঁরা অক্সফোর্ড আদর্শবাদী সম্প্রদায় নামে পরিচিত। টমাস গ্রিন এ আদর্শবাদের মূল উদ্যোক্তা গ্রিন একজন মানবতাবাদী হিসেবে ইংল্যান্ডের নিচুতলার জনগণের সাথে খোলাখুলিভাবে মেলামেশার সুযোগ পেয়েছিলেন। কীভাবে এ মানুষগুলোকে উন্নত পরিবেশে আনা যেতে পারে সে চিন্তা গ্রিনের মনকে গভীরভাবে আচ্ছন্ন করে ফেলে।

রাষ্ট্রচিন্তায় টি.এইচ. গ্রিনের অবদান মূল্যায়ন কর ।


অধ্যাপক বার্কার (Prof. Barker) বলেছেন, “গ্রিন কেবল ভাববাদী ছিলেন না, তিনি একজন মানবতাবাদীও ছিলেন। গ্রিন যেমন মানবতাবাদী ছিলেন তেমনি ছিলেন বাস্তব রাজনীতিতে দক্ষ।

টমাস প্রিনের জীবনী (Biography of Thomas Green) :

১৮৩৬ সালে ইয়র্কশায়ারে টমাস গ্রিন জন্মগ্রহণ করে। তাঁর বাবা ছিলেন একজন নামকরা যাজক। ১৮৫৬ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রিন স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। স্নাতক হবার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সারাটা জীবন তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটিয়ে দেন। ১৮৭৮ সালে নৈতিক (Moral philosophy) অধ্যাপকের পদে নিযুক্ত হন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অত্যন্ত প্রভাবশালী অধ্যাপক ছিলেন তিনি মাত্র ৪৬ বছর বয়সে ইহলোক ত্যাগ করেন।

অধ্যাপক এল রবিন্স অর্থনীতির সংজ্ঞাটি ব্যাখ্যা কর।

টমাস গ্রিনের রচনা (Writing's of Thomas Green) : গ্রিনের উল্লেখযোগ্য রচনা Lectures on principles of political obligation ১৮৭৯ সালে দেওয়া বক্তৃতার সংকলন। বক্তৃতামালা বইয়ের আকারে প্রকাশিত হয় মৃত্যুর পর। অন্য এক গুরুত্বপূর্ণ বই হলো Prolegomena of Ethics, রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে গ্রিন তার Political obligation এ জন্য বিশেষভাবে স্মরণীয়।

রাষ্ট্র সম্বন্ধে গ্রিনের ধারণা (Concept of Green about State) :

উদারতা ও ব্যক্তিস্বাধীনতার সনাতনী ঐতিহ্যের আলোকেই তিনি তার রাষ্ট্র সম্পর্কে ধারণা পেশ করেন। রাষ্ট্র সম্বন্ধে গ্রিনের ধারণা নিচে দেওয়া হলো:

১. রাষ্ট্রের উদ্ভব (Origin of state) : বার্কার বলেছেন, Rights demand the state. অর্থাৎ, অধিকারের ধারণা থেকে রাষ্ট্রের সৃষ্টি। এর অর্থ হলো অধিকার যদি বলবৎ করা না যায় তাহলে অধিকার মূল্যহীন হয়ে পড়ে। অধিকার বলবৎ করার প্রশ্ন উঠলে রাষ্ট্রের প্রসঙ্গ স্বাভাবিক নিয়মে এসে পড়ে। একমাত্র রাষ্ট্রই অধিকারসমূহকে বলবৎ করতে পারে। ব্যক্তি যদি থাকে তাহলে অধিকার অবশ্যই থাকবে এবং অধিকার থাকলে তার বাস্তব রূপায়ণের জন্য রাষ্ট্রের প্রয়োজন। আবার সার্বভৌম শক্তি ছাড়া রাষ্ট্রের অস্তিত্ব মূল্যহীন, সুতরাং অধিকার, স্বাধীনতা ও রাষ্ট্র সবটাই বাস্তব অস্তিত্ব সম্পন্ন।

২. রাষ্ট্র ও সমিতি (State and Association) : গ্রিন বলেছেন, রাষ্ট্র হলো সমস্ত রকম সমিতির মধ্যে সবচেয়ে উন্নত ধরনের সমিতি। সমাজের বিবর্তন রাষ্ট্রের মধ্য দিয়ে সর্বোচ্চ আকার ধারণ করেছে। পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিসমূহের সমষ্টিকে গ্রিন রাষ্ট্র বলেননি। এ জাতীয় চিন্তাধারা তার দর্শনচিন্তার বিরোধী। মানুষ যখন ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্ক যুক্ত হয়ে পড়ল তখন সৃষ্টি হলো সমাজের। রাষ্ট্রের মধ্যেই সমাজের পূর্ণতা প্রতিফলিত গ্রিন বলেছেন, রাষ্ট্র হলো Society of societies. তিনি আরো বলেছেন, রাষ্ট্র যে কেবল কম গুরুত্বপূর্ণ সমিতি নিয়ে তৈরি তা নয়। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সমিতিও রাষ্ট্রের মধ্যে আপন মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। এ সময় সংঘের অস্তিত্ব রাষ্ট্র সৃষ্টির আগেই ছিল।

ম্যাকিয়াভেলিকে কেন আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার জনক বলা হয়?-উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।

৩. রাষ্ট্র এবং অন্যান্য রাষ্ট্র (State and other state) : অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র কেবল অসংখ্য সংঘ বা সমিতির অস্তিত্ব স্বীকার করে তা নয়। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা ও বজায় রাখতে চায়। রাষ্ট্রসমূহ নিঃসঙ্গবাদ অনুসরণ করে বিচ্ছিন্নভাবে থাকতে চায় না। অথবা কোনো একটি রাষ্ট্র মহাপরাক্রমশালী হয়ে অন্যান্য সমস্ত রাষ্ট্রের উপর ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করবে তা নয়। অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র এবং অন্যান্য সংঘের যে সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যেও সে সম্পর্ক বিদ্যমান। গ্রিন এর মতে, প্রতিটি রাষ্ট্র বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বে পুরোপুরি বিশ্বাসী।

৪. রাষ্ট্র সবকিছু নয় (State is not everything) : হেগেলের মতে, গ্রিন রাষ্ট্রকে ভাববাদী দৃষ্টি দিয়ে বিচার করলেও তিনি কখনও মনে করেননি যে রাষ্ট্র সবকিছু বা রাষ্ট্রের মধ্যে সবকিছুর পরিসমাপ্তি। অর্থাৎ রাষ্ট্রই চরম লক্ষ্য নয়। রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করতে পারলেই মানুষের জীবনে অর্জন করার অবশিষ্ট কিছু থাকল না, গ্রিন তা কখনও মনে করেননি। নৈতিক বিকাশ সাধন হলো ব্যক্তির জীবনের প্রধান লক্ষ্য এবং তা পাবার জন্য সে রাষ্ট্রের সদস্য পদ গ্রহণে আগ্রহী। ব্যক্তির একটা স্বতন্ত্র মর্যাদা ও মূল্যবোধ আছে যা সে সহজে বিনষ্ট হতে দিতে চায় না। এ মর্যাদা অন্য কেউ নষ্ট করতে উদ্যত হলে যে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠে। সুতরাং ব্যক্তি রাষ্ট্রের সবকিছু এবং তাকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব কল্পনা করা বৃথা।

৫. রাষ্ট্রের ভূমিকা নেতিবাচক (State role is negative) : গ্রিন রাষ্ট্রের যে ভূমিকার কথা বলেছেন তা ব্যাখ্যা করলে দেখা যায় যে, সে ভূমিকা পুরো নেতিবাচক। গঠনমূলক কাজে অথবা অন্য কোনো ব্যাপারে রাষ্ট্রের ভূমিকা থাকবে না। আত্মসচেতন ও নৈতিক বিকাশ অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নাগরিককে সাহায্য করা ছাড়া রাষ্ট্রের বিশেষ কোনো কাজ নেই। খ প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির মধ্যে সংঘর্ষ অবশ্যই দেখা দিতে পারে যা ব্যক্তির পক্ষে দূর করা সম্ভব নয়। সংঘর্ষ চলতে থাকলে ব্যক্তির নৈতিক উন্নতি ব্যাহত হবে। সে জন্য রাষ্ট্র সার্বভৌম শক্তিপ্রয়োগ করে সংঘর্ষ মিটানোর চেষ্টা করবে। আবার সার্বভৌম কতখানি বা কী জাতীয় শক্তিপ্রয়োগ করবে তা স্থিরীকৃত হবে গণ অতীপার দ্বারা। মোটকথা, রাষ্ট্রের ভূমিকা যে নেতিবাচক সে কথাই গ্রিন বলেছেন।

গ্রিন রাষ্ট্রের যে ভূমিকা নির্দেশ করেছেন তা পুরোপুরি নেতিবাচক। কিন্তু ওয়েপার বলেছেন যে, রাষ্ট্রের কাজকর্মকে একেবারে নেতিবাচক বলা ন্যায়সংগত নয়, বরং বাধা দূর করে নাগরিককে সৎ ও নীতিজ্ঞান সম্পন্ন করে তুলতে পারলে রাষ্ট্রের পক্ষে একটা সম্পদ সৃষ্টি হতে পারে। রাষ্ট্রের এ কাজকে আদৌ নেতিবাচক বলা চলে না। দেহ ও মনের পূর্নঙ্গ বিকাশ সাধন হলে ব্যক্তি রাষ্ট্রের উন্নতি উৎসাহ ও শ্রম নিয়োগ করতে পারে। সৎ নাগরিক ব্যক্তিস্বার্থের ঊদ্ধে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেবে।

  ৬. কল্যাণ রাষ্ট্র (Welfare state) : গ্রিন যে জাতীয় রাষ্ট্রের ছক তৈরি করে গেছেন তাকে আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ভাষায় কল্যাণ রাষ্ট্র বলা হয়। শিল্পবিপ্লবের কুফল সমাজের সর্বস্তরে যখন ব্যাপক হারে বিস্তার লাভ শুরু করেছিল, ঠিক সে সময় আবির্ভাব হয়েছিল গ্রিন এর। তিনি ব্যক্তিস্বাধীনতার পূজারি হলেও সমাজের সার্বিক কল্যাণের প্রয়োজনে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ যে অপরিহার্য তা স্বীকার করতে ভুলেননি। জনসাধারণের শিক্ষা, কলকারখানার গঠন ও পরিচালনা ব্যবস্থা, জমির খাজনা নির্ধারণ, খাদ্যদ্রব্যের ভেজাল রোধ ইত্যাদি বিষয়ে রাষ্ট্রিক হস্তক্ষেপ সমাজকে দ্রুত অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও শ্রমের উপর আইন প্রণয়নের প্রচেষ্টাকে গ্রিন অনুমোদন করেছেন। দেহ ও মনের পূর্ণতার পুাষ্টি সাধনকে গ্রিন সৎ জীবনের পূর্বশর্ত বলে মনে করেছেন। তিনি আরও বলেন, ভূমিহীন কৃষক শতাব্দীর বঞ্চনা বহনকারী দরিদ্র জনসাধারণ। অত্যধিক পরিশ্রমে নারী এদের দিকেও রাষ্ট্রকে তাকাতে হবে। এদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ অপরিহার্য। মোটকথা, রাষ্ট্র সম্বন্ধে গ্রিন এর ধারণা বিশ্লেষণ করলে একটা বিষয় স্পষ্ট যে তিনি বুর্জোয়া কাঠামোর মধ্যে একটা কল্যাণ রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন করে গেছেন।

রুশোকে সর্বাত্মকবাদী গণতন্ত্রী বলা হয় কেন?

৭. ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী (Individualist) : ব্যক্তির কল্যাণের নিমিত্ত রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ গ্রিন সমর্থন করলেও তাকে কোনপ্রকারে সমাজবাদী বা সমষ্টিবাদী বা ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ বিরোধী বলা চলে না, বরং তিনি আগাগোড়া একজন ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী। রাষ্ট্রিক হস্তক্ষেপ গ্রিন এর প্রকল্পের মধ্যে ব্যক্তিস্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করবে না। ব্যক্তিস্বাধীনতার রক্ষাকবচের কথা গ্রিন ভেবেছিলেন। এমনকি উপযোগবাদীরা বা ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদীরা রাষ্ট্রের কাজকর্মের যে সমস্ত সীমাবদ্ধতার কথা ভাবতেন গ্রিন এর ভাবনাচিন্তা তার থেকে কোনো অংশে কম ছিল না। গ্রিন এর রাষ্ট্রচিন্তার কেন্দ্রবিন্দু ছিল ব্যক্তিসত্তার পূর্ণ বিকাশ গ্রিন মনে করতেন যে, রাষ্ট্রের হাতে ক্ষমতা থাকার অর্থ এই নয় যে রাষ্ট্রে ব্যক্তির কল্যাণ বিরোধী কাজকর্ম করছে ব্যক্তির অধিকার বা স্বাধীনতা সংকুচিত করার কোনো ক্ষমতা রাষ্ট্রের নেই, বরং রাষ্ট্রের উচিত স্বাধীনতা ও অধিকার সংরক্ষণের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি দেওয়া। সুতরাং গ্রিনকে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ বিরোধী বলা যায় না।

গ্রিন এর রাষ্ট্রচিন্তার সমালোচনা (Criticism of Green's political thought) -

গ্রিন এর রাষ্ট্র সম্পর্কে ধারণা বিভিন্নভাবে সমালোচিত হয়েছে। যথা-

১. বিপজ্জনক (Dangerous) : ওয়েপারের মতে, বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহ হলো যুক্তিবাদিতার প্রতীক। তাই যদি হয় তাহলে কোনো প্রতিষ্ঠানকে সমালোচনা করা যাবে না। এটা একটা বিপজ্জনকের মতো। গ্রিন একই কথা বার বার বলেছেন। রাষ্ট্রের বিরোধিতা করার অধিকার ব্যক্তির আছে কি না আলোচনা প্রসঙ্গে আমরা দেখেছি যে একমাত্র গন কল্যাগের বিষয় ছাড়া ব্যক্তি রাষ্ট্রের বিরোধিতা করতে পারবে না। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী হয়েও গ্রিন ব্যক্তির সমালোচনা বা মাত প্রকাশের অধিকার কেড়ে নিয়েছেন।

২. সার্বভৌমতা তত্ত্ব অস্পষ্ট (Sovereignty theory is unclear) :
গ্রিন সার্বভৌমিকতার মতো সমস্যাকে যত সহজে সমাধানের চেষ্টা করেছেন বাস্তবে তা কিন্তু এতটা সহজ ব্যাপার নয়। সার্বভৌমের মধ্যে তিনি ক্ষমতা ও ইচ উভয়কেই আরোপ করেছেন, যা বাস্তবে সম্ভব নয়। হরহাউস গ্রিন এর সার্বভৌম তত্ত্বের সমালোচনা করে বলেন যে গণ অতীন্সা যদি অভীলা হয় তাহলে গণ হতে পারে না। আবার গণ হলে অভীলা হবে না। এ অবস্থায় সার্বভৌমতার ভিক্তি যদি গণ অভীলা হয়, তাহলে গণ অভীদার ন্যায় সার্বভৌমতাও অস্পষ্ট থেকে যায়

৩. সিদ্ধান্ত অবাস্তব (Unreal decision): উপযোগবাদীদের সিদ্ধান্ত যেমন অবাস্তব। গ্রিনের ঠিক তেমনই অব মানুষ যেমন প্রতিনিয়ত সুধানুসন্ধান ও যন্ত্রণার হাত থেকে কীভাবে নিষ্কৃতি পাওয়া যায় সে পথ আবিষ্কারে ব্যস্ত থাকে না। তেমনি ব্যক্তি প্রতিটি কাজকর্ম সিদ্ধান্ত সচেতনতা দ্বারা পরিচালিত এবং অবচেতন মনে কোনো রকম প্রভাব থাকে না এমন কথা আগে বলা যায় না। তদুপরি সমাজের প্রতিটি ব্যক্তি যে সচেতন এমন ধারণা ইউরোপীয় ছাড়া আর কিছু নয়।

৪. বুর্জোয়া শ্রেণির স্বার্থ (Interest of bourgeoise): গ্রিনের রাষ্ট্রচিন্তা সমসাময়িক বুর্জোয়া শ্রেণির স্বার্থের অনুকূলে ছিল। সমকালীন বুর্জোয়া শ্রেণি চেয়েছিল উদীয়মান শ্রমিক শ্রেণির বিক্ষোভ ও প্রতিরোধের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রযন্ত্রকে সংগঠিত করতে এবং ইংল্যান্ডের ঐতিহ্য অনুসরণ করে বুর্জোয়াদের স্বার্থে রাষ্ট্রকে প্রয়োজনমতো নিয়ন্ত্রণ করতে। গ্রিনের রাষ্ট্রচিন্তার মধ্যে এ শ্রেণির চাহিদা মিটেছে। গ্রিন উদারনৈতিক আদর্শের প্রতি আনুগতা থেকেও রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের  পক্ষে যুক্তি দেখান ।

প্রিল আদর্শবাদী কি না : গ্রিনকে আদর্শবাদী দার্শনিক বলা যায়। কারণ তার রাষ্ট্রদর্শন ছিল জনকল্যাণমূলক। গ্রিন নাগরিক অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্রের ভূমিকার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। অধিকার রক্ষায় নাগরিকগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাষ্ট্রে বসবাস করার কথা বলেছেন। গ্রিনের মতে, রাষ্ট্র নাগরিককে সংঘ বা সমিতি করার অধিকার দেবে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে প্রতিটি রাষ্ট্রই কোনো না কোনোভাবে অন্য রাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল। মিন প্রতিটি রাষ্ট্রকে অন্য রাষ্ট্রের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করে বিশ্বভ্রাতৃত্ব রক্ষার উপর জোর দিয়েছেন। তিনি নাগরিককে আত্মসচেতন করে তোলা ও নাগরিকের নৈতিক বিকাশের উপর জোর দিয়েছেন। তিনি নাগরিকের ব্যক্তিস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁর মতে, রাষ্ট্রের সমগ্র কর্মকাণ্ড জনকল্যাণের ভিত্তিতে পরিচালিত হবে, রাষ্ট্র নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করবে। মোটের উপর গ্রিনের রাষ্ট্রচিন্তা ছিল রাষ্ট্র ও নাগরিকের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপনকারী। তাই তিনি আদর্শবাদী দার্শনিক।

উপসংহার : সমালোচনা সত্ত্বেও উনবিংশ শতাব্দীর আটের দশকের মাঝামাঝি যে ফ্যারীয় সমাজবাদের জন্ম হয়েছিল, তার প্রেরণাদাতা গ্রিন। মার্কসীয় সমাজবাদের শ্রেণিসংগ্রামের দিকটা যদি আমরা উপেক্ষা করি তাহলে সেই সমাজবাদের জন্য গ্রিন এর হাতে। গ্রিন এর পর থেকে বিগত একশত বছর ধরে সমাজ জীবনের বিভিন্ন দিকে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে এবং আজকের দিনে আমরা সমাজ জীবনের এমন একটাও দিক দেখতে পার না সেখানে রাষ্ট্রিক হস্তক্ষেপের কোনো চিহ্ন নেই। বলা বাহুল্য এর সূত্রপাত গ্রিন এর হাতেই ঘটেছিল।


#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!