উত্তর:
প্রক্রিয়া নিয়েই মানবজীবন। মানুষকে জানতে হলে তার আচরণ ও মানসিক কার্যকলাপ বুঝতে হবে। আর মানুষের আচরণ ও মানসিক কার্যকলাপ বুঝতে হলে মনোবিজ্ঞান সম্বন্ধীয় জ্ঞানের প্রয়োজন। দৈনন্দিন জীবনে আমরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হই। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান খুবই প্রয়োজন। ঘুম থেকে জেগেই শুরু হয় বিভিন্ন আচরণ ও মানসিক কার্যকলাপ। নিদ্রা যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তা চলতে থাকে। জাগ্রত ও নিদ্রিত উভয় অবস্থায়ই আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়া সক্রিয় রয়েছে। তাই যেখানেই আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়ার প্রকাশ, সেখানে রয়েছে মনোবিজ্ঞানের অস্তিত্ব।
মনোবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু :
মনোবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু ব্যাপক ও বিস্তৃত। আধুনিক মনোবিজ্ঞানীদের মতে, সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত পর্যালোচনাই হল মনোবিজ্ঞান। তাই মনোবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু হল জীবের আচরণ তথা মানুষের আচরণ।
নিম্নে মনোবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু সম্পর্কে আলোচনা করা হল :
১. মনের প্রকাশ :
মানসিক অবস্থা ও ক্রিয়ার অনুসন্ধান এবং ব্যাখ্যাই মনোবিজ্ঞানের মূল উদ্দেশ্য। তিনটি প্রধান ক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষের মনের প্রকাশ ঘটে ।
যথা : ক. চিন্তন, খ. অনুভূতি ও গ. ইচ্ছা ।
ক. চিন্তন :
সংবেদন, প্রত্যক্ষণ, স্মৃতি, কল্পনা, সামান্য ধারণা এবং যুক্তি এগুলো চিন্তনক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত। সে কারণে এগুলো মনোবিজ্ঞানের আলোচনার অন্তর্ভুক্ত।
খ. অনুভূতি :
অনুভূতিকে দু'ভাগে ভাগ করা যায়। যথা : সরল ও জটিল অনুভূতি। আবেগ এক ধরনের জটিল অনুভূতি । উভয় প্রকার অনুভূতিই মনোবিজ্ঞানের আলোচ্যবিষয়।
গ. ইচ্ছা :
ঐচ্ছিক ক্রিয়া ও অনৈচ্ছিক ক্রিয়া এবং তার বিভিন্ন রূপ, যেমন- স্বতঃসজ্ঞাত ক্রিয়া, প্রতিবর্তী ক্রিয়া, সাহজিক ক্রিয়া, ভাবজ ক্রিয়া প্রভৃতি মনোবিজ্ঞানের আলোচ্যবিষয়। ঐচ্ছিক ক্রিয়া বারবার সম্পাদনের ফলে অভ্যাসের উদ্ভব ঘটে। সুতরাং, অভ্যাসের বৈশিষ্ট্য, অভ্যাসের সাথে সাহজিক ক্রিয়ার পার্থক্য প্রভৃতি বিষয়ও মনোবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়বস্তুর অন্তর্গত।
২. মনের স্তর :
মনের তিনটি স্তর মনোবিজ্ঞানের আলোচ্যবিষয়ের অন্তর্ভুক্ত। মনের এ তিনটি স্তর হল, ক. চেতনা (Conscious) খ. অবচেতন (Sub-conscious) এবং গ. নিজ্ঞান (Unconscious)। এ স্তরগুলোর প্রত্যেকটির স্বরূপ, তাদের আন্তঃসম্পর্ক এবং পারস্পরিক প্রভাব মনোবিজ্ঞানে আলোচিত হয়।
৩. দেহ ও মন সম্পর্ক :
দেহ ও মনের নিবিড় সংযোগ বা সম্বন্ধের বিষয়টিও মনোবিজ্ঞানের আলোচ্যবিষয়ের অন্তর্গত । দেহ ও মনের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। দেহ যদি সুস্থ থাকে, মনও সুস্থ থাকে। আবার মন যদি সুস্থ থাকে, দেহও সুস্থ থাকে ।
আরো পড়ুন:মনোবিজ্ঞানের স্বরূপ বা প্রকৃতি কি
৪. সামাজিক সম্বন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে মানব প্রকৃতি :
মনোবিজ্ঞান মানব প্রকৃতির আলোচনা। মনোবিজ্ঞানের আলোচ্যবিষয় যে মানুষ, সে হল পরিবর্তনশীল সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে বিচরণকারী একটি জীবসত্তা। পরিবেশ তার উপর ক্রিয়া করে এবং সেও পরিবেশে প্রতিক্রিয়া করে থাকে । এ ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া নিয়েই সমগ্র মানুষ। কাজেই মনোবিজ্ঞান যখন মানুষের মন নিয়ে আলোচনা করে, তখন মানুষকে এসব সামাজিক সম্বন্ধের পরিপ্রেক্ষিতেই আলোচনা করে ।
আরো পড়ুন: আধুনিক মনোবিজ্ঞান কি
৫. ব্যক্তিত্ব :
মানুষ অন্যান্য মানুষের সাথে যেসব সামাজিক সম্বন্ধে যুক্ত, একমাত্র তাদের পরিপ্রেক্ষিতে মানুষকে বিচার করলে মানুষের সমগ্র পরিচয় পাওয়া যাবে না। মানুষকে একটি ব্যক্তি হিসেবে পর্যালোচনা করতে হবে। এভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে একটি ব্যক্তি বিভিন্ন পরিবেশে বিভিন্নভাবে আচরণশীল হলেও তার বিভিন্ন আচরণের মধ্যে এক ধরনের সংগতি আছে, যার সাহায্যে আমর তার ব্যক্তিত্বের মূল্যায়ন করি। সুতরাং, ব্যক্তিত্বের স্বরূপ, ব্যক্তিত্বের উপাদান, ব্যক্তিত্বের শ্রেণীবিভাগ, ব্যক্তিত্বের বিকাশ, লক্ষণ ও মাত্র মনোবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়বস্তুর অন্তর্গত।
উপসংহার :
উপরিউক্ত আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, মনোবিজ্ঞানের পরিধি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মনোবিজ্ঞান এখ বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত, যেমন- শিক্ষা মনোবিজ্ঞান, শিল্প মনোবিজ্ঞান, শিশু মনোবিজ্ঞান, সমাজ মনোবিজ্ঞান, পরিক্ষণ মনোবিজ্ঞান অস্বভাবী মনোবিজ্ঞান প্রভৃতি। এককথায় বলা যেতে পারে, এ জগতের যা কিছু মানুষের অভিজ্ঞতার সাথে সম্বন্ধযুক্ত, তার সব