মনোবিজ্ঞানের স্বরূপ বা প্রকৃতি কি?

admin

 ভূমিকা :

মনোবিজ্ঞান হল আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়ার বিজ্ঞান। আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়া নিয়েই মানবজীবন। মানুষকে জানতে হলে তার আচরণ ও মানসিক কার্যকলাপ বুঝতে হবে। আর মানুষের আচরণ ও মানসিক কার্যকলাপ বুঝতে হলে মনোবিজ্ঞান সম্বন্ধীয় জ্ঞানের প্রয়োজন। দৈনন্দিন জীবনে আমরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হই।


মনোবিজ্ঞানের স্বরূপ বা প্রকৃতি কি


এসব সমস্যা সমাধানের জন্য মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান খুবই প্রয়োজন। ঘুম থেকে জেগেই শুরু হয় বিভিন্ন আচরণ ও মানসিক কার্যকলাপ। নিদ্রা যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তা চলতে থাকে। জাগ্রত ও নিদ্রিত উভয় অবস্থায়ই আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়া সক্রিয় রয়েছে। তাই যেখানেই আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়ার প্রকাশ, সেখানে রয়েছে মনোবিজ্ঞানের অস্তিত্ব।


মনোবিজ্ঞানের স্বরূপ বা প্রকৃতি :

মনোবিজ্ঞান হল মানুষ ও অন্যান্য জীবের আচরণ সম্পৰ্কীয় বিজ্ঞান। নিম্নে মনোবিজ্ঞানের স্বরূপ বা প্রকৃতি আলোচনা করা হল :


১. খণ্ডিত আচরণ বা আনবিক আচরণ এবং সামগ্রিক আচরণ :

ব্যক্তি বা প্রাণীর আচরণকে প্রধানত দু'ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে ।

যথা ক. খণ্ডিত বা আনবিক আচরণ এবং খ. সামগ্রিক আচরণ।

প্রাণীর আচরণকে যখন সূক্ষ্ম উপাদানে বিশ্লেষণ করা হয়, তখন প্রত্যেকটি উপাদানকে আনবিক বা খণ্ডিত আচরণ বলে। আর ব্যক্তির পূরিপূর্ণ আচরণ সামগ্রিক আচরণ, আর বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি যদি বিভিন্ন ভঙ্গিমায় বক্তব্য দেন, তাহলে আচরণের ঐ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র একককে খণ্ডিত বা আনবিক আচরণ বলা হবে। মনোবিজ্ঞানে মানুষ বা অন্যান্য প্রাণীর এ আচরণের তারতম্য সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা থাকে ।


২. অভ্যন্তরীণ আচরণ ও বাহ্যিক আচরণ :

অনেক মনোবিজ্ঞানী মানুষ বা অন্যান্য প্রাণীর আচরণকে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক আচরণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যেসব আচরণ বাইরে থেকে পর্যবেক্ষণ করা যায় না বা অনুমান করতে হয় তাকে অভ্যন্তরীণ আচরণ বলে। যেমন- শিক্ষা, চিন্তন, অনুভূতি প্রভৃতি। আর যেসব আচরণ বাইরে থেকে পর্যবেক্ষণ করা যায়, তাকে বাহ্যিক আচরণ বলে । যেমন- খাদ্য গ্রহণ, হাঁটাচলা, কথা বলার ভঙিমা ইত্যাদি।


৩. ঐচ্ছিক ও অনৈচ্ছিক আচরণ বা ক্রিয়াকাণ্ড :

অনেক মনোবিজ্ঞানী প্রাণীর আচরণ আবার ঐচ্ছিক ও অনৈচ্ছিক আচরণ বা ক্রিয়াকাণ্ড হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যেসব আচরণ প্রাণীর সচেতন চেষ্টায় সংগঠিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় তাকে ঐচ্ছিক আচরণ এবং যেসব মাচরণ ঐচ্ছিক নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে তাকে অনৈচ্ছিক আচরণ বলে। এসব আচরণ মনোবিজ্ঞানের অন্তর্গত ও আলোচনার বিষয়গত।


৪. প্রাণীর আচরণ ও মানসিক ক্রিয়া :

মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর আচরণ ও মানসিক ক্রিয়া সম্পর্কে মনোবিজ্ঞানে আলোচনা ও গবেষণা করা হয়। এজন্য মনোবিজ্ঞানকে জীববিজ্ঞানের অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রাণীদের আচরণ কিভাবে তার বাইরের পরিবেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তা অনুধ্যান করাই মনোবিজ্ঞানের প্রধান উদ্দেশ্য ।


৫. উদ্দেশ্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি :

মনোবিজ্ঞানী ম্যাকডুগাল জীবের আচরণকে উদ্দেশ্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর মতে, নির্জীব জড়বস্তু সম্পূর্ণভাবে যান্ত্রিক নিয়ম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। অন্যদিকে, জীবের আত্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা থাকায় নিজের উদ্দেশ্যকে সচেতনভাবে অনুসরণ করে এবং নিজের প্রচেষ্টার দ্বারা সে লক্ষ্যকে অর্জন করতে চায়। সুতরাং, জীবের আচরণ ব্যাখ্যার জন্য উদ্দেশ্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা হয়।



৬. বিভিন্ন মনোবিজ্ঞানীর অভিমত :

মনোবিজ্ঞানী ওয়াটসন বলেছেন, “মনোবিজ্ঞান হল মানুষের আচরণ সম্বন্ধীয় বিজ্ঞান।” মনোবিজ্ঞানী ওয়াটসন ও তাঁর সঙ্গীদের মতে, “আচরণ বা ব্যবহারই হল মনোবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু। আচরণবাদীরা নিছক যান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই মানুষের এ আচরণের ব্যাখ্যা করেছেন।" অন্যদিকে, মনোবিজ্ঞানী ম্যাকডুগাল উদ্দেশ্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই মনোবিজ্ঞানকে আচরণ সম্পর্কীয় বিজ্ঞান হিসেবে অভিহিত করেছেন। ওয়াটসন মনে করেছেন, “পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণই মনোবিজ্ঞানের পদ্ধতি। কারণ এ পদ্ধতির সাহায্যে জীবের আচরণের স্বরূপ নির্ণয় করা যায়।” সুতরাং, মনোবিজ্ঞানের আলোচ্যবিষয় হল মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর আচরণ বা ব্যবহার পরীক্ষণ, পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করা।


উপসংহার :

উপরিউক্ত আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, মনোবিজ্ঞানের পরিধি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মনোবিজ্ঞান এখন বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত, যেমন- শিক্ষা মনোবিজ্ঞান, শিল্প মনোবিজ্ঞান, শিশু মনোবিজ্ঞান, সমাজ মনোবিজ্ঞান, পরীক্ষণ মনোবিজ্ঞান, অস্বভাবী মনোবিজ্ঞান প্রভৃতি। এককথায় বলা যেতে পারে, এ জগতের যা কিছু মানুষের অভিজ্ঞতার সাথে সম্বন্ধযুক্ত, তার সবই মনোবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু।


#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!