আধুনিক মনোবিজ্ঞান কি?

admin

ভূমিকা :

মনোবিজ্ঞান হল আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়ার বিজ্ঞান। আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়া নিয়েই মানবজীবন। মানুষকে জানতে হলে তার আচরণ ও মানসিক কার্যকলাপ বুঝতে হবে। আর মানুষের আচরণ ও মানসিক কার্যকলাপ বুঝতে হলে মনোবিজ্ঞান সম্বন্ধীয় জ্ঞানের প্রয়োজন।


আধুনিক মনোবিজ্ঞান কি


দৈনন্দিন জীবনে আমরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হই। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান খুবই প্রয়োজন। ঘুম থেকে জেগেই শুরু হয় বিভিন্ন আচরণ ও মানসিক কার্যকলাপ। নিদ্রা যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তা চলতে থাকে । জান্নত ও নিদ্রিত উভয় অবস্থায়ই আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়া সক্রিয় রয়েছে। তাই যেখানেই আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়ার প্রকাশ, সেখানে রয়েছে মনোবিজ্ঞানের অস্তিত্ব।


শাব্দিক অর্থে মনোবিজ্ঞান :

মনোবিজ্ঞানের ইংরেজি প্রতিশব্দ হল Psychology. আর এ শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায় খ্রিস্টীয় দশম শতাব্দীর সাহিত্য ও দর্শনশাস্ত্রে। Psychology শব্দটি দু'টি গ্রিক শব্দ 'Psyche' এবং 'Logos' থেকে এসেছে, যার অর্থ যথাক্রমে আত্মা বা মন এবং বিজ্ঞান। সুতরাং শাব্দিক অর্থে মনোবিজ্ঞান হল, 'আত্মা বা মন সম্পর্কীয় বিজ্ঞান।


আধুনিক মনোবিজ্ঞান :

আধুনিক মনোবিজ্ঞান একটি ব্যাপক পরীক্ষিত ও গবেষণাসমৃদ্ধ বিজ্ঞান। আধুনিক মনোবিজ্ঞানকে জীবন প্রাণীর ব্যবহারের বা আচরণের বিজ্ঞান বলা হয়। এছাড়া আধুনিক মনোবিজ্ঞান হল আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়াসমূহের বিজ্ঞানসম্মত পর্যালোচনা।


প্রামাণ্য সংজ্ঞা :

আধুনিক মনোবিজ্ঞানের সংজ্ঞা নিয়ে মনোবিজ্ঞানীদের মধ্যে যথেষ্ট মতভেদ ও বিরোধ রয়েছে। নিম্নে প্রধান কয়েকটি সংজ্ঞা উল্লেখ করা হল :


উইলিয়াম জেম্‌স (১৮৯০ খ্রিস্টাব্দ) এর মতে, “মনোবিজ্ঞান হল মানসিক পরিমণ্ডলের বিজ্ঞান। এ পরিমণ্ডলের বিভিন্ন ঘটনার ভিতর রয়েছে অনুভূতি, ইচ্ছা, জ্ঞান ও প্রক্রিয়া, যুক্তি, সিদ্ধান্ত প্রভৃতি।”


জেম্‌স এঞ্জেল (১৯১০ খ্রিস্টাব্দ) বলেছেন, “মনোবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু হল যে কোন ধরনের চেতন প্রক্রিয়া স্বভাবী হউক বা অস্বভাবী হউক, মানুষের হউক বা পশুর হউক।”


গাজন. বি. ওয়াটসন (১৯১৯ খ্রিস্টাব্দ) এর মতে, “আচরণবাদীদের জন্য মনোবিজ্ঞান হল প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের সে বিভাগ যা তাঁর শিক্ষালব্ধ ও অশিক্ষালব্ধ কাজ এবং কথা অর্থাৎ, ব্যবহার বা আচরণকে মনোবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু হিসেবে মনে করে।”


কোকা (১৯২৫ খ্রিস্টাব্দ) মনোবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, “আমরা বলতে পারি যে এর সমস্যা হল বাইরের জগতের সাথে সম্পর্কিত জীবন্ত প্রাণীর ব্যবহারের বিজ্ঞানসম্মত অনুধ্যান।”


আর্থার গেইটস (১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ) এর মতে, “মনোবিজ্ঞান জীবস্তু প্রাণীর ব্যবহারের ব্যাখ্যায় সাধারণ সূত্র প্রণয়নের চেষ্টা করে, মানুষ, পশু ও অন্যান্য প্রাণী বিভিন্ন ধরনের যেসব কাজ করে এ বিজ্ঞান তা চিহ্নিত, বর্ণনা এবং শ্রেণীবিন্যাস করতে প্রয়াস পায়।”


ই. বোরিং বলেছেন, “মানুষ কি? মনোবিজ্ঞান এ প্রশ্নের জবাব দিতে চেষ্টা করে ।”


নম্যান মান (১৯৬১ খ্রিস্টাব্দ) এর মতে, “বর্তমানে মনোবিজ্ঞানকে সাধারণত ব্যবহারের বিজ্ঞান বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়। তবে মজার ব্যাপার হল এই যে, ব্যবহারের অর্থ এত ব্যাপক হয়েছে যে, পূর্বে যাকে চিন্তন বা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা মনে করা হতো তা আজ অভ্যন্তরীণ ব্যবহার হিসেবে অভিহিত।”


ক্লার্ক এবং মিলার (১৯৭০ খ্রিস্টাব্দ) এর মতে, “মনোবিজ্ঞানকে সাধারণত ব্যবহারের বিজ্ঞান হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। এর বিষয়বস্তু হল এরূপ ব্যবহার সম্পর্কিত প্রক্রিয়া, যা পর্যবেক্ষণযোগ্য যথা : অঙ্গভঙ্গি, কথা, শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন এবং ঐসব প্রক্রিয়া যা অনুমান করা যায় । যথা : চিন্তা এবং প্রশ্ন।


উপসংহার :

পরিশেষে বলা যায় যে, উপরে উল্লিখিত মনোবিজ্ঞানীদের সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করে আমরা বলতে পারি যে, বিজ্ঞানের যে শাখা মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর আচারব্যবহার ও মানসিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা, পর্যালোচনা ও গবেষণা চালায় তাকেই আধুনিক মনোবিজ্ঞান বলে । আধুনিক মনোবিজ্ঞানের আলোচ্যবিষয় অত্যন্ত ব্যাপক ও বিস্তত।


#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!