রাজনৈতিক তত্ত্বের অংশ হিসেবে মার্কসীয় তত্ত্বটি আলোচনা কর

admin

 

ভূমিকা : মার্কসীয় রাজনৈতিক তত্ত্ব ভাববাদী এবং বুর্জোয়া বা আচরণবাদী তত্ত্বের বিপরীতে একটি বৈপ্লবিক তত্ত্বরূপে আত্মপ্রকাশ করেছিল। গ্রিক দর্শন (Greek philosophy); ইহুদি ধর্ম (Judaism) ও খ্রিস্টধর্ম (Chritianity) ছিল পশ্চিমী দুনিয়ার তত্ত্বকেন্দ্রিক মানবতাবাদী ঐতিহ্যের তিনটি প্রধান উৎস। কার্ল মার্কস (Karl Marx) এ ধারণাকে বাতিল করে দিয়ে বলেন, স্রষ্টা হিসেবে মানুষ (man as the creator) আগামী দিনে সমাজ পরিবর্তনের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার (instrument) হিসেবে নিজের ভূমিকা পালন করবে।

রাজনৈতিক তত্ত্বের অংশ হিসেবে মার্কসীয় তত্ত্বটি আলোচনা কর

রাজনৈতিক তত্ত্বের অংশ হিসেবে মার্কসীয় তত্ত্ব : বক্তব্য, প্রকৃতি এবং লক্ষ্যের দিক থেকে মার্কসীয় তত্ত্ব পূর্ববর্তী তত্ত্বসমূহের বিপরীত তত্ত্ব। মানব সমাজের উদ্ভব, বিকাশ, পরিবর্তনের প্রগাঢ় এবং বহুবিস্তৃত অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ সাধারণ নীতির ঐক্যবদ্ধ সূত্র হলো মার্কসীয় তত্ত্ব। দ্বন্দমূলক বস্তুবাদ (Dialectical Materialism) এবং ঐতিহাসিক বস্তুবাদের (Hestorical Materialism) মাধ্যমে মার্কসীয় তত্ত্বের মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ব্যক্ত করা হয়েছে।

রাজনৈতিক তত্ত্ব হিসেবে মার্কসবাদ কোন স্বতন্ত্র ও বিচ্ছিন্ন তত্ত্ব নয়। ঐতিহাসিক বস্তুবাদের মাধ্যমেই রাজনীতিসহ সমাজের সামগ্রিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ সম্ভব। ঐতিহাসিক বস্তুবাদ সমাজ পরিবর্তনের নির্ধারক, প্রকৃতি ও বিজ্ঞান। মার্কসীয় তত্ত্ব সমাজ পরিবর্তন ও বিকাশের তত্ত্ব।


- সুতরাং মার্কসবাদ শুধু তত্ত্ব নয়; এটি কর্মনির্দেশিকাও বটে। মার্কসবাদীরা এ কথা মানেন ও অনুসরণ করেন যে, বাস্ত মার্কস ও তাঁর অনুসারীরা নিছক তত্ত্বে বিশ্বাসী না হয়ে তত্ত্ব ও বাস্তবতার সমন্বয়ের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তবে প্রয়োগযোগ্য না হলে তত্ত্ব অর্থহীন। মার্কসবাদীদের মতে, চেতনা জীবনকে নির্ধারণ করে না, বরং জীবন চেতনাকে নির্ধারণ করে, (...it is not consciousness that determines life, but life that determines cosciouness.) মার্কসবাদীরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, বৈষয়িক সামাজিক বিকাশ (The material societal development) তত্ত্ব ও বাস্তব, আত্মা ও বস্তু (spirit and matter) এবং ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জগতের মধ্যে ভ্রান্ত পার্থক্যের জন্ম দেয়। তাই মার্কস তত্ত্বকে বাস্তব বৈষয়িক স্বার্থের পরিচালক (the handmaiden of practical material interests) বলে বর্ণনা করেছেন।


মার্কসীয় তত্ত্ব রাজনীতিকে অর্থনীতির প্রগাঢ় অভিব্যক্তিরূপে গণ্য করে। এ কারণে রাষ্ট্র সমাজের অর্থনৈতিক ভিি উপর প্রতিষ্ঠিত উপরি-কাঠামোর (super-structure) ভূমিকা পালন করে। মার্কসীয় মতবাদে রাষ্ট্র শ্রেণি শাসনের হাতিয়ার (an instrument of class-rule)। প্রতিটি রাষ্ট্র ব্যবস্থাই সমাজে অর্থনৈতিক দিক থেকে প্রাধান্যকারী শ্রেণি-স্বপ্ন (Class-interest) রক্ষা করে। প্রতিটি শোষিত সমাজেই রাষ্ট্র শোষক শ্রেণির স্বার্থ রক্ষার ভূমিকা পালন করে। মার্কসত তত্ত্ব শ্রেণিহীন ও শোষণহীন (Classless and explotation less) সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এ কারণেই রাষ্ট্র বিপ্লবের (social revolution) মাধ্যমে শ্রেণি-শাসিত রাষ্ট্রের ধ্বংসসাধন এবং চূড়ান্তভাবে রাষ্ট্রের বিলুপ্তিসাধন (the abolition of state ruled by the class) প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করাই মার্কসবাদের অন্যতম লক্ষ্য।


মার্কসীয় তত্ত্ব বুর্জোয়া গণতন্ত্রকে (Western Democray ) মুষ্টিমেয় শাসক ও শোষকের স্বার্থে পরিচালিত গণতন্ত্ররূপে গণ্য করে। বুর্জোয়া স্বাধীনতা, অধিকার ও সার্বভৌমত্বের ধারণাকে মার্কসবাদ মুষ্ঠিমেয় শোষকের স্বার্থরক্ষাকারী ধারণারূপে গণ্য করে। বুর্জোয়া সমাজের সংরক্ষণই এ ধারণাগুলোর মূল লক্ষ্য। মার্কসীয় তত্ত্ব সমাজের মৌলিক রূপান্তরের তত্ত্ব। তাই মার্কসবাদে সংশোধনবাদ ও সংস্কারকদের বিরোধিতা লক্ষ করা যায়। বস্তুত মার্কসবাদ সমাজের আমূল পরিবর্তনে বিশ্বাসী।


উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, মার্কসবাদী তত্ত্ব হলো সমাজ পরিবর্তনের তত্ত্ব। এই তত্ত্ব পুঁজিবাদী সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় শোষিত শ্রমিকশ্রেণি বিপ্লবের মাধ্যমে কিভাবে সর্বহারা শ্রেণির একনায়ত্ব (Dietatorship of the proletariate) কায়েম করবে এবং কিভাবে সমাজতান্ত্রিক গঠনকার্যের মাধ্যমে সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারবে সে বিষয়ে পথনির্দেশ করে।


#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!