প্রাচীন চীনের রাজনৈতিক ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা কর।

admin

 

ভূমিকা : চীনের রাজনৈতিক ইতিহাস জানতে আমাদের লিখিত উপাদানের উপর নির্ভর করতে হয়। যেসব লিখিত উপাদান থেকে চীনের ইতিহাস জানা যায় তার বেশির ভাগ মাঞ্চু যুগের প্রথমদিকে লিখিত। প্রাচীন উৎসগুলোতে খ্রিস্টপূর্ব ২২০০ অব্দের পূর্বে কোনো শাসক বা রাজার নাম উল্লেখ নাই ।


প্রাচীন চীনের রাজনৈতিক ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা কর।


চীনের রাজনৈতিক ইতিহাস :

চীনের প্রাচীন ইতিহাস অতীতকাল পর্যন্ত বিস্তৃত। চৈনিক সভ্যতার রাজবংশগুলো দীর্ঘ ধারাবাহিক ইতিহাস রয়েছে। নিম্নে চীনের রাজনৈতিক ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-


১. সিয়া বংশ (খ্রিঃ পৃঃ ২২০৫-১৭৬৬ পর্যন্ত) : রাজ বংশের শাসক হিসেবে মিয়া রাজবংশ ছিল চীনের সর্বপ্রথম রাজবংশ। ‘ইউ; (U) এ বংশের প্রতিষ্ঠাতা। এ বংশের মোট সতের জন রাজা রাজত্ব করেন।

সিয়া রাজবংশের সময় চীন একত্রিত ছিল না। অসংখ্য পৃথক পৃথক জনগোষ্ঠী পাশাপাশি বিরাজ করতো। সিয়া গোষ্ঠী সর্বপ্রথম দাসপ্রথা প্রবর্তন করে। সিয়া রাজবংশের সর্বশেষ রাজা ‘চিয়ে’।


২. শাং বা ইন রাজবংশ (খ্রিস্টঃ ১৭৬৬-১২২২ পর্যন্ত) : চীনের লিখিত ইতিহাস শুরু হয় শাং রাজবংশের আমলে। ১৯৩০ শাং রাজবংশের অস্তিত্বের নির্ভুল প্রমাণ পাওয়া যায়। এ বংশের প্রথম রাজা ছিলেন “সিয়ে”। শাং রাজত্বকালে “জোমী” পর্যন্ত মোট ত্রিশজন রাজা রাজত্ব করে। শাং রাজারা পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন রাজধানী থেকে বিভিন্ন সময় শাসন কাজ পরিচালনা করে । শাং আমলে চীনে প্রথম দু'চাকাওয়ালা খোড়ার টানা যুদ্ধরথের প্রচলন হয়। শাং রাজবংশের শেষ রাজা জোসীকে পরাজিত করে চৌ ফা শাং বংশের পতন ঘটান।


৩. চৌ রাজবংশ (খ্রিস্টঃ এগার শতক-২২১) : চৌ রাজবংশ দু'ভাগে বিভক্ত পশ্চিম চৌ এবং পূর্ব চৌ। চৌ রাজবংশ নয় শতক রাজত্ব করে। ইতিহাসের মঞ্চে চীনের প্রথম আবির্ভাব হয় চৌ-রাজবংশের রাজত্বকাল থেকে। ওয়েন এর পুত্র উওয়াং শাং রাজাকে পরাস্ত করে চৌ বংশ স্থাপন করেন। চৌ পঞ্চাশটির বেশি রাজ্যকে পরাভূত করেন এবং পূর্বদিকে শাং ক্ষমতাধর সব চিহ্ন বিলুপ্ত করেন। ইউ ওয়াং ছিলেন চৌদের শেষ সম্রাট। পশ্চিমাঞ্চলের জুয়ান রোং নামক এক উপজাতির হাতে নিহত হলে তাঁর পুত্র রাজা ফিং ক্ষমতা লাভ করেন। তিনি ৭৭০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে হাও চিং এর পূর্বদিকে অবস্থিত লুওই নামক স্থানে তার রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। এরপর থেকে শুরু হয় পূর্ব চৌ রাজবংশের শাসনকাল ।


৩. পূর্ব চৌ রাজবংশ (খ্রিঃপূঃ ৭৭০-৩৩১ অব্দ) : পূর্ব চৌ এর শাসনামল দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। বসন্ত ও শরৎ সাময় পূর্ব খ্রিঃপৃ ;  ৭৭০ থেকে খ্রিস্ট পূর্ব ৪৭৬ এবং যুদ্ধরত রাজ্যসমূহের সময় খ্রিঃ পূঃ ৪৭৫-২২১। এ সময়টা ছিল দাসভিত্তিক সমাজ থেকে সামন্ততান্ত্রিক সমাজ উত্তরণের অন্তর্বর্তী পর্যায়। সামন্ততন্ত্র প্রতিষ্ঠাকালে চীন নামক রাজবাদ শক্তিশালী হয়ে উঠে এবং ক্ষুদ্র রাজ্যগুলো গ্রাস করে পরাশক্তি হয়ে উঠে। সাম্রাজ্যের দুর্যোগের দিনে সুচীন অবশিষ্ট। রাজ্যগুলোর সংহতি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে ডিউকের অগ্রগতির পথ রুদ্ধ করতে কৃতসংকল্প হন। চীন রাজ্যের বিজয়ী বাহিনী ক্রমেই অগ্রসর হয়ে পড়ে এবং সাম্রাজ্য চীনদের করতলগত হতে থাকে।


৪. হ্যান বংশ (খ্রিঃপূঃ ২০৬-২২০) : হ্যান রাজবংশ মোট চারশ বছর রাজত্ব করে। ২০৬ খ্রিস্টাব্দে লিউ পেং সমগ্র চীনকে একীভূত করে হ্যান বংশ প্রতিষ্ঠা করেন। রাজধানী পশ্চিম দিকে অবস্থিত ছাংআন নামক স্থানে অবস্থিত থাকায় এ যুগ পশ্চিম হ্যান নামে আখ্যায়িত হয়। খ্রিস্টপূর্ব ১৯৯ অব্দে দুর্ধর্ষ হুন জাতি মহাপ্রাচীর অতিক্রম করে সেনমি প্রদেশে প্রবেশ করে এবং সম্রাটকে একটি নগরে অবরুদ্ধ করে। হ্যান রাজবংশে সবচেয়ে যোগ্য ও কীর্তি পুরুষ ছিলেন উতি। সম্রাট উতির রাজত্বকালে হ্যান বংশ গৌরবের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে। তিনি যে বংশ প্রতিষ্ঠা করেন তা সিন বংশ নামে। পরিচিত। কিন্তু ২৩ বছর পর এ বংশ লুপ্ত হয়।


৫. পূর্ব হ্যান রাজবংশ (২৫ সাল-২২০ সাল) : রাজধানী পূর্বদিকে অবস্থিত থাকায় চীনা ইতিহাসে এ রাজবংশ পূর্ব হ্যান রাজবংশ নামে পরিচিত। হ্যান বংশের সাফল্য বেশিদিন স্থায়ী না হতেই আবার দুর্যোগ দেখা দেয়। ১৮৯ সালে কুয়াংউ মৃত্যুর পর হ্যান রাজবংশের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও দরবারে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। কৃষকরাও এ সময় বিদ্রোহী হয়ে উঠে এবং ১৮৪ সালে চাং চিয়াও এর নেতৃত্বে সারা দেশে হরুদ পাগড়িদের উত্থান হয়। পরবর্তীতে এরা ভূ-স্বামীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালায় এবং এর ফলে পূর্ব হ্যান বংশের পতন ঘটে। ২২১ সালে হ্যান বংশের পতন ঘটে।


৭. চীন রাজবংশ (খ্রিঃ পূঃ ২১১-২০৭) : খ্রিস্টপূর্ব ২২১ সালে “শিহুয়াংতি" চীন রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন। যুদ্ধোদ্যানের সাফল্যের জন্য শিহুয়াংতিকে চীনের নেপোলিয়ন বলা হয়। তিনি ছয়টি রাজ্য জয় করে আটশ বছরের অধিক স্থায়ী ও স্বাধীন বিচ্ছিন্ন সামন্তান্ত্রিক রাজ্যগুলো উচ্ছেদ করে চীনের ইতিহাসে সর্বপ্রথম কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থ প্রতিষ্ঠা করেন। চীন বংশের নামকরণ এ চীন বংশ থেকেই হয়েছে। শিহুয়াংতি উত্তরাধিকারী হন তাঁর দ্বিতীয় পুত্র ভাই। তিনি অযোগ্য শাসক হওয়ায় ২১০ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পরেই দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। খ্রিস্টপূর্ব ২০৭ অব্দে ছেন শেং এর নেতৃত্বে কৃষক বিদ্রোহ দেখা দেয়। বিদ্রোহী কৃষকরা কেবল মাত্র নিড়ানী ও মুগুরের সাহায্যে চীন রাজবংশের উচ্ছেদ করেন।


উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, চীনে ইতিহাসের ধারাবাহিকতা কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটলেও প্রাপ্ত তথ্যাদির আলোকে চীনের রাজবংশসমূহের বিবরণ অনেকটাই উদ্ভাসিত


#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!