চৈনিক সভ্যতা বিকাশে চৌ রাজবংশের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।

admin


ভূমিকা : বিশ্বসভ্যতার ইতিহাসে চৈনিক সভ্যতা একটি গৌরবজনক অধ্যায়। নীলনদ থেকে সিন্ধুনদ পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলেই মানুষের ইতিহাসে প্রথম সভ্যতার সূচনা হয়েছিল। মিশর, মেসোপটেমিয়া বা সিন্ধু সভ্যতার মতো চীন সভ্যতার সূচনা এত পুরনো না হলেও খ্রিস্টপূর্ব দুই হাজার বছর পরেই ব্রোঞ্জ যুগে একটি সমৃদ্ধ সভ্যতা গড়ে উঠেছিলে। ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক কারণে এ সভ্যতা দীর্ঘকাল টিকেছিল। চীনা সভ্যতার শাং রাজবংশের পতনের পর চীনা চৌ রাজংশের নেতৃত্বে ধ্রুপদী সংস্কৃতি গড়ে উঠে।


চৈনিক সভ্যতা বিকাশে চৌ রাজবংশের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।

চৈনিক সভ্যতায় চৌ রাজবংশের ভূমিকা : নিম্নে চৈনিক সভ্যতা বিকাশে চৌ রাজবংশের ভূমিকা তুলে ধরা হল। 


১. সামাজিক কাঠামো : চৌ যুগের সমাজ অভিজাত কেন্দ্রিক ছিল। ভূ-স্বামী-ও কৃষ্ণদের মধ্যে ছিল আকাশ-পাতাল ব্যবধান। সমাজে বৃদ্ধরা ছিলেন সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। চৌ রাজবংশের সময় সামরিক ও প্রশাসনিক পদে বেতনভুক্ত আমলা নিযুক্ত করা হতো।


২. রাজনৈতিক কাঠামো : চৈনিক রাজাদের বংশানুক্রমিক উত্তরাধিকার প্রথার ব্যবস্থা ছিল। রাজার মৃত্যু হলে তার উত্তরাধিকারী হিসেবে পুত্রকে সিংহাসনে বসানো হতো। চৌ নেতা উত্তয়াং এর ছোট ভাই নামে পরিচিত রাজপুরুষ প্রথমে চৌ সরকার ব্যবস্থার নেতৃত্ব দেন। রাজারা একাধারে সেনাবাহিনী, বেসামরিক কার্যাবলি তত্ত্বাবধান ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দান করত।


৩. অর্থনৈতিক ব্যবস্থা : চৌ যুগের অর্থনীতি ছিল মূলত কৃষিনির্ভর। জমি চাষ করতে তারা গরু, মহিষ তথা মানুষের শ্রমের ফলে কৃষি ব্যবস্থায় ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়। উৎপাদিত ফসলের মধ্যে প্রধান ছিল গম, যব। তাছাড়া ধান চাষ করা হতো। গরু, ভেড়া, কুকুর, ছাগল, ষাঁড় ছাড়াও মহিষ, বানর এবং হাতি পালন করা হতো। তাছাড়া রেশমি, গুটিপোকা তুঁত গাছ এবং রেশমী কাপড় ইত্যাদির উল্লেখ পাওয়া যায়। ভূমির মালিকানা বিভিন্ন রাজ বংশের অদল-বদল হয়েছে।


৩. সরকার ব্যবস্থা : চৌ এবং শাং রাজবংশের শাসনব্যবস্থার ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। চৌ শাসনব্যবস্থায় সবার উপরে অবস্থান সম্রাট বা ওয়াং এর। চৌদের বিশ্বাস “সম্রাট স্বর্গ পুত্র এবং স্বর্গের নির্দেশানুযায়ী দেশ শাসন করেন। চৌদের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় রাজপরিবারের অনেকেই দায়িত্বে ছিল, ফলে খুব সম্ভব বিদ্রোহের আশঙ্কা ছিল। দেখা যায় দুর্বল নরপতি সিংহাসনে বসলে দুর্নীতি বৃদ্ধি পেত।


৫. ধর্মীয় ব্যবস্থা : ধর্মীয় ব্যবস্থার দিক দিয়ে চৌ এবং শাং যুগ প্রায় একই রকমের ছিল। চৌ যুগের ধর্মীয় বিশ্বাস প্রবল ছিল। তারা পশু পাখি ও ফসল দেবতার নামে উৎসর্গ করত। চৌ যুগের মুখ্য আরাধ্য দেবতা ছিল তিয়েনা । একথার চৌ যুগের ধর্মীয় চেতনা স্বর্গীয় প্রভাব, আত্মা এবং দেবদেবীর বিশ্বাস দ্বারা পরিপূর্ণ।


৬. দর্শন : চৌ যুগে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সামাজিক বিশৃঙ্খলা দেখা দিলেও দার্শনিক সমাজে নীতিমালা প্রণয়ণে প্রয়াস পায়। চৌ যুগে বেশ কয়েকজন দার্শনিকের আবির্ভাব ঘটে। তাদের মধ্যে কনফুসিয়াস, লাওসে এবং মেনসিয়াস প্রসুখ অন্যতম ।


৭. সাহিত্য : সাহিত্যের ক্ষেত্রে চৌ যুগের অবদান অপরিসীম। চৌ সাহিত্য ও সংস্কৃতির ঐতিহ্য প্রাচীন। এক্ষেত্রে তাদের গর্ব সীমাহীন। ব্রোঞ্জ ও পাথরের পাত্রে গায়ে প্রাচীন সাহিত্যের নিদর্শন পাওয়া যায়। তারা কাঠ, রেশমি কাপড়, বাঁশের খণ্ডের উপর তাদের লেখা সাহিত্যের নিদর্শন পাওয়া যায় ৷


৮. বিজ্ঞানচর্চায় : বিজ্ঞান চর্চায় প্রাচীন চৌদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। চৌ বিজ্ঞানীরা জ্যোতিবিদ্যা, ভূগোল, পদার্থ বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রভৃতি শাখায় বিশেষ জ্ঞানের অধিকারী ছিল ।


৯. চৌ রাজবংশের পতন : চৌ রাজবংশের শাসন তেমন শান্তিপূর্ণ ছিল না । শান্তিপূর্ণ হলেও চৌরা এ বংশের গৌরব কিছুটা হলেও রক্ষা করতে পেরেছিল । অভিজাতরা নিজেদের হাতে ক্ষমতা রেখে রাজপুত্রকে পুতুল রাজ হিসেবে বিবেচনা করত। প্রভাবে পশ্চিমাংশে চৌ রাজবংশের অবসান হয়।


উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, প্রাচীন সভ্যতা বিকাশে চৌ যুগ ব্যাপক অবদান রাখে নানা চড়াই-উত্রাই পার করে চৌ রাজবংশে প্রায় ৮০০ বছর টিকেছিল। তবে চীনা সভ্যতার মধ্যে চৌ রাজবংশের সরকার ব্যবস্থা, সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দিক দিয়ে ছিল প্রশংসনীয়।

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!