পুঁজিবাদ বলতে কী বুঝা? পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় পুঁজিপতিদের বিকাশের কারণগুলো আলোচনা কর।

admin

ভূমিকা :

মানব সভ্যতার প্রাচীন ইতিহাস পর্যালোচনা ও বিচারবিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, মানষ সভ্যতা যে চারটি পর্যায় বা ধাপ অতিক্রম করে আজকের এই শিল্পায়িত সমাজে অবতীর্ণ হয়েছে, তার মধ্যে পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ সমাজব্যবস্থা। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার অগ্রযাত্রা যে সময়কাল হতে চলতে থাকে সেই সমাজব্যবস্থার অতি পরিচিত দু'টি শব্দ হলো বুর্জোয়া এবং প্রলেতারিয়েত। "বুর্জোয়া” পুঁজিপতি নামে পরিচিত এবং প্রলেতারিয়েত শ্রমিক শ্রেণি হিসেবে পরিচিত। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ মালিকানার উপর প্রতিষ্ঠিত পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার বিবর্তনে সমাজকে যে দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে তাদেরই একটি বুর্জোয়া ।


পুঁজিবাদ বলতে কী বুঝা? পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায়  পুঁজিপতিদের বিকাশের কারণগুলো আলোচনা কর।


পুঁজিবাদ :

অর্থনীতিতে, পুঁজিবাদ বলতে ব্যক্তিমালিকানায় নিয়ন্ত্রণাধীন এমন এক অর্থনৈতিক অবস্থাকে বোঝায় যেখানে অর্থনীতির ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের প্রাধান্য পায়। অর্থাৎ যেখানে উৎপাদন পদ্ধতি কোনো ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত সর্বোচ্চকরণের লক্ষ্যে নিয়ন্ত্রণ করে এবং তার উৎপাদনে ব্যবহৃত সকল উপকরণসমূহ ব্যক্তি মালিকানাধীন থাকে যা ব্যক্তি কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়। পুঁজিবাদের মূলভিত্তি হলো মূলত উৎপাদন ব্যবস্থার ব্যক্তিগত মালিকানা। অতএব বলা যায় যে কোনো অর্থনৈতিক পরিবেশের শিল্পকারখানা, কলকব্জা, ভূমি ও দালানকোঠা, যন্ত্রপাতি, খনি, হাতিয়ারসহ বিভিন্ন উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনার যাবতীয় সম্পদাদি একজন ব্যক্তির বা বেসরকারি মালিকানায় থাকবে তাই মূলত পুঁজিবাদ পুঁজিবাদের ফলে কোনো একজন বিশাল সম্পদের মালিক এবং যিনিয়োগ বেসরকারিভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে।


পুঁজিবাদের প্রামাণ্য সংজ্ঞা :

পুঁজিবাদের সংজ্ঞা প্রদান করতে গিয়ে বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী, বিশ্লেষক, গবেষক বিভিন্ন জন বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেন। নিম্নে বিভিন্নকোণ হতে তাদের মতামত ব্যক্ত করা হলো :


কার্ল মার্কসের (Karl Marx) মতে, “উৎপাদন পদ্ধতিতে পরিবর্তন, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও কলকারখানা বৃদ্ধির মাধ্যমেই পুঁজিবাদের জন্য হয়েছে।”

Oxford Advanced learner's Dictionary of Current English "Economic system in which a country's trade and industry are organized and controlled by the owner's of capital, the Chief elements being competition, profit, supply and demand." অর্থাৎ, পুঁজিবাদ হচ্ছে এমন এক অর্থনৈতিক অবস্থা যেখানে একটি দেশের ব্যবসায় বাণিজ্য এবং শিল্পকারখানা কোনো পুঁজিপতির ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠে ও নিয়ন্ত্রিত হৃ এবং এর প্রধান উপকরণসমূহ হলো প্রতিযোগিতা, মুনাফা, যোগান এবং চাহিদা।


বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী সিডনি ওয়েব এ মতে, “পুঁজিবাদ হচ্ছে সমাজ উন্নয়নের একটি স্তর যেখানে ব্যক্তিমালিকানাধীন উৎপাদন ব্যবস্থা বিদ্যমান এবং শিল্পকারখানাও শ্রমিকের শ্রম নিয়ন্ত্রণ করে মালিক উৎপাদিত দ্রব্যের একচেটিয়া অধিকার ভোগ করে থাকেন। শ্রমিকগণ উৎপাদন করে কিন্তু উৎপাদিত দ্রব্যের মুনাফা থেকে বঞ্চিত হয়।”


অধ্যাপক পিত্ত (Prof. Paigu) বলেছেন, “পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় ব্যক্তি মালিকানাধীনে উৎপাদনের উপাদান ও যন্ত্রপাতি পরিচালিত হয়। আর এর উদ্দেশ্যে তারা সেসব দ্রব্য ও সেবা উৎপাদন করে তা বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করবে।"


জে সুমপিটার (J. Schumpeter) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ The March into Socialisms' এ বলেছেন, "Capitalism is a scheme of values and attitude towards a life and the civilization of inequality and of the family for tune."


অধ্যাপক ফিলিস ডিন (Prof. Phyllis Deane) এর মতে, “পুঁজিবাদী ধারণাটি একটি আর্থসামাজিক ব্যবস্থার বিশেষ পদ্ধতির সাথে সম্পর্কিত, যার প্রকৃতি স্পষ্ট বা অস্পষ্টভাবে নির্ধারিত হয়ে থাকে।”


Prof. D. M. Hacker এর মতে, “মৌলিকভাবে পুঁজিবাদী ধারণাটি একটি আর্থসামাজিক ব্যবস্থা যার ভিত্তিমূলে থাকবে মুনাফা প্রাপ্তির প্রবণতা।”


উপযুক্ত সকল আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার বিভিন্ন দিন আলোচনা করলে এটি প্রতীয়মান হয় যে, বঞ্চনা শোষণ ও উৎপাদন শক্তির পারিশ্রমিক এবং মালিকানার সম্পর্কযুক্ত —নের বিশেষ সমাজব্যবস্থা। এ সমাজব্যবস্থার আওতাধীন রয়েছে উৎপাদন, বণ্টন, চাহিদা, যোগান মূল্যনির্ধারণ ইত্যাদি। দানগুলো ব্যক্তিমালিকানায় সম্পন্ন হয়, যা কি না রাষ্ট্রের ব্যক্তিকে সম্পদশালী করে।


বুর্জোয়া :

প্রাচীনকালের যে প্রচলিত পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা ছিল, সেই সমাজব্যবস্থাকে দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছিল। যথা :

(ক) বুর্জোয়া বা আধুনিক পুঁজিপতি শ্রেণি

(খ) প্রলেতারিয়েত বা মজুরি শ্রমিক শ্রেণি।

এই সমাজব্যবস্থা উৎপাদন, বণ্টন, ভোগ, চাহিদা ও যোগানসহ নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত বুর্জোয়া শ্রেণির নিকট থাকে। মজুর শ্রেণির বা প্রলেতারিয়েত শ্রেণির পারিশ্রমিক বা মজুরির বিনিময়ে উৎপাদন ব্যবস্থায় যে পরিমাণ উৎপাদন হয় তার সম্পূর্ণ বুর্জোয়া শ্রেণি আত্মসাৎ করে শ্রমিক শ্রেণি শোষণ ও অত্যাচারের মাধ্যমে তাদের সম্পদ কেড়ে নিয়ে অঢেল সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে। ফলে বুর্জোয়া শ্রেণি পাহাড় সমান সম্পদের মালিক হন। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় এই বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিকদেরকেই বুর্জোয়া বা পুঁজিপতি বলা হয়। অর্থাৎ পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় যে শ্রেণির লোকেরা সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শ্রমিক শ্রেণিকে খাটিয়ে প্রচুর পরিমাণ অর্থসম্পদের মালিক হতে চেয়েছে এবং শ্রমিক শ্রেণির উপর কর্তৃত্ব স্থাপনের চেষ্টা করেছে সেই সকল শ্রেণিকেই বুর্জোয়া শ্রেণি নামে ইতিহাসে পরিচিত।


বুর্জোয়াদের উদ্ভবের কারণ :

বিভিন্ন দিক বিচারবিশ্লেষণও পর্যালোচনা করলে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোকেই বুর্জোয়া শ্রেণির উদ্ভব বা বিকাশের অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করা হয়। নিম্নে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ হতে এসকল কারণগুলো বর্ণনা করা হলো :


১. সামাজিক মর্যাদার তারতম্য : প্রাচীনকালের সমাজব্যবস্থা জমিদার শ্রেণির জমি চাষ করতো কৃষক শ্রেণির জনগণ। যখন থেকে এ সমাজব্যবস্থার পরিবর্তন করে শিল্পায়িত সমাজের উত্থান শুরু হল তখন থেকে সমাজে কৃষকদের সমাজের ব্যবসায়ী ও অর্থ বিনিয়োগকারী মানসম্মান ও মর্যাদা অনেকাংশে বেড়ে গেল। এ বিনিয়োগের পুঁজিপতি মানুষ হতে থাকল আরও পুঁজিপতি আর শ্রমিক শ্রেণির আরও দরিদ্র হতে লাগল। সামাজিক মর্যাদালাভের জন্য এ বিনিয়োগের অন্তরালে তারা ব্যক্তিগত মুনাফা অর্জনের জন্য সর্বহারা শ্রমিক শ্রেণির মানুষকে শোষণ ও অত্যাচারের মাধ্যমে তাদের সম্পদ লুণ্ঠন করে আরো পুঁজিপতি হওয়ার জন্য বুর্জোয়া শ্রেণির উদ্ভব ঘটে।


২. শিল্পবিপ্লব : শিল্পবিপ্লবের ফলে এদেশে মূলত বুর্জোয়া শ্রেণির উদ্ভব ঘটে। শিল্পবিপ্লবের ফলে মানুষের সম্পদের মালিকানার উপর ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইউরোপে শিল্পবিপ্লবের ফলে অর্থনৈতিক ও উৎপাদন ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন বা বিপ্লব সাধিত হয়। ফলে দেশের মানুষের মধ্যে বা বিশ্ববাজারে সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানার উপর সম্পদশালীরা ব্যাপকভাবে গুরুত্বারোপ করে। এছাড়াও সামাজিক জীবনে সম্পদের মালিকানা ও কর্তৃত্ব স্থাপনের প্রবণতা বেড়ে যায়। প্রতিটি পুঁজিপতি আরো সম্পদের মালিকানার পেছনে তার শিল্পকারখানাকে ধাবিত করে। যার ফলশ্রুতিতে বুর্জোয়া বা মালিক শ্রেণি প্রতিষ্ঠিত বা কর্তৃত্ব অর্জন করার জন্য শিল্পক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ ও উৎপাদন করতে শুরু করে।


৩. সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানা প্রতিষ্ঠা : শিল্পায়নের ফলে পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তৎকালীন সমাজব্যবস্থায় শ্রেণি বিভক্তি দেখা দিলে পুঁজি সঞ্চয়ের প্রবণতা দেখা দেয়। আবার অনেকের মতামত বিশ্লেষণ করলে দেখা দেয়, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ বা ব্যক্তিমালিকানা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বুর্জোয়া শ্রেণির উদ্ভাবিত হয় এবং তাদের থেকে প্রলেতারিয়েত শ্রেণিকে বিভক্ত হয়।


৪. উদ্যোগের স্বাধীনতার প্রবণতা : আধুনিক যুগের সমাজব্যবস্থার বিকাশের জন্য পজিবাদী সমাজব্যবস্থার প্রচলন ঘটে। শিল্পায়নের প্রভাবে শিল্পবিপ্লব চলাকালীন সময়ে শিল্প সমৃদ্ধ করার লক্ষে পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলা হয। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্র কর্তৃক সরাসরি হস্তক্ষেপ করে না। কোনো ব্যক্তি বা উদ্যোক্তা বা পুঁজিপতি নিজেই নির্ধারিত করে কোনো দ্রব্যের কী পরিমাণ পণ্যদ্রব্য উৎপাদিত হবে, কীভাবে উৎপাদিত হবে এবং কী পরিমাণ মুনাফা জনগণ হতে আহরণ করা হবে। তৎকালীন সমাজব্যবস্থায় ব্যক্তির স্বাধীনতা উদ্যোগ ও মতামতের প্রতি গুরুত্বারোপ করে বুর্জোয়া বা পুঁজিপতি শ্রেণি উৎপত্তি ঘটে।


৫.ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি: আজকের এই পজিবাদী সমাজব্যবস্থা বা ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি বিকাশ ঘটেছে সেই সমাজব্যবস্থায় বুর্জোয়া শ্রেণি বা পুঁজিপতি শ্রেণির বিকাশের উপর ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাবে। তাই বলা যায় যে, ম্যাক্স ওয়েবারের মতে, মানুষ যখন ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে ঝুঁকে পড়ে তখন বুদ্ধিবৃত্তি সম্পন্ন হয়ে ওঠে এবং জ উন্নয়নের জন্যা আহরণের ব্যবস্থা করতে বাধ্য থাকে। তাই বলা যায় যে, শিল্পায়নের প্রভাবে ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি মানুষের মান শ্রেণিবৈষম্য সৃষ্টি করে সঞ্চয়ের প্রবণতা বৃদ্ধি করায়। যা কি না বুর্জোয়া শ্রেণি উদ্ভবের অন্যতম কারণ।


৬. পুঁজিবাদীদের স্বার্থ সংরক্ষণ :  পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় রাষ্ট্র পরিচালনাকারী বা বৃহৎ শিল্পকারখানার মালিকদের পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে। পুঁজিবাদী সমাজে রাষ্ট্র বা সমাজ পরিচালনাকারী বুর্জোয়াদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে থাকে। ফলে সমাজব্যবস্থায় টিকে থাকার জন্য বা স্বার্থ সংরক্ষণ করার জন্য ক্ষমতাশালীরা আর ক্ষমতাবান বা পুঁজিপতি হয়ে ওঠে। এ  সকল প্রভাবের কারণে তৎকালীন সমাজব্যবস্থায় বুর্জোয়া শ্রেণির উদ্ভব ও বিস্তার লাভ করে ।


৭. বিশ্বে ইউরোপীয় পণ্যের বিস্তার : সারা বিশ্বে ইউরোপীয় পণ্যের বিস্তার লাভের জন্য পুঁজিপতি শ্রেণি বা বুর্জোয়া শ্রেণির উদ্ভব হয়ে থাকে । অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইউরোপে শিল্পবিপ্লবের ফলে শিল্পায়ন সমৃদ্ধ হয় এবং পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার প্রচলন শুরু হয়। এছাড়াও সপ্তদশ ও অষ্টাদশ পণ্যের বাজার দখল ও সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য পুঁজিবাদের পূর্ণ বিকাশ হতে থাকে। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার এ নতুন দ্বার উন্মোচিত হওয়ায় তার পরিপূর্ণ সুযোগ ও তার সদ্ব্যবহার গ্রহণের জন্য ইউরোপীয় জাতিকে পরিপূর্ণ পুঁজিবাদী হওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করে পুঁজিপতি শ্রেণি। এভাবেই পুঁজিপতি শ্রেণির উদ্ভব ও  বিকাশ হতে থাকে যা বুর্জোয়া নামে পরিচিতি লাভ করে।


৮. প্রটেস্ট্যান্ট আন্দোলন : শিল্পায়নকালীন সময় পর্যন্ত ইউরোপের সমাজে বিভিন্ন ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল যেমন- তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্রটেস্ট্যান্ট আন্দোলন। যে সমাজের প্রচলিত সমাজব্যবস্থা ধর্মীয় চিন্তা চেতনা বা মতাদর্শের উপর ভিত্তি মানুষকে সঞ্চয়ী বা পুঁজি গঠনে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে থাকে সেই সমাজব্যবস্থার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রটেস্ট্যান্ট আন্দোলন।


৯. রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ : পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা রাষ্ট্র বা দেশের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা থাকে রাষ্ট্রীয় সমাজের পুঁজিপতি বা বিত্তশালীদের উপর। সমাজের অধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও পরিচালনা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নীতিনির্ধারণ সমাজের এ সকল শ্রেণির মানুষেরা প্রণয়ন করতো। সমাজ বা রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণের সূত্র ধরেই তৎকালীন সমাজব্যবস্থায় বুর্জোয়া শ্রেণি ধীর ধীরে এই সমাজে স্থান দখল করে নেয়।


১০. চ্যালেঞ্জ গ্রহণের প্রবণতা : শিল্পবিপ্লব যখন সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে, তৎকালীন সমাজব্যবস্থায় প্রচলিত বাজারে পূর্ণপ্রতিযোগিতা বিরাজ করছিল। শিল্পায়নের ফলে বড় বড় মালিক বা পুঁজিপতি শ্রেণি বাজার টিকে থাকার জন্য শ্রমিকের উপর চাপ সৃষ্টি করে বাজার দখল করতে থাকে। বাজার দখল করার পুঁজিপতি বা বুর্জোয়া শ্রেণি তাদের থেকে প্রলেতারিয়েত বা শ্রমিক শ্রেণিকে আলাদা করে। এভাবে সমাজব্যবস্থায় বুর্জোয়া শ্রেণির উদ্ভব ও বিস্তার লক্ষ করা যায়।


১১. মূলধন খাটিয়ে মুনাফার অর্জন : তৎকালীন সমাজব্যবস্থায় শিল্পবিপ্লবের ফলে মানুষের সঞ্চয়ের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। সেই সঞ্চয়কৃত অর্থ মূলধন হিসেবে শিল্পক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে থাকে। অধিক মূলধন বিনিয়োগকারীদের মুনাফা অর্জনের জন্য ব্যকুলতা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। মুনাফা অর্জনের এই ব্যাকুলতাও বুর্জোয়া শ্রেণির উদ্ভবের অন্যতম প্রধান কারণ। মানুষ স্বভাবতই উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছতে চায়। এই প্রবণতার সাথে মানুষের মধ্যে প্রতিযোগিতা বেড়ে যায়। ফলে পুঁজিপতিরা ক্রমশ তাদের থেকে শ্রমিক শ্রেণিকে বিন্যস্ত করে এবং বুর্জোয়া শ্রেণির উদ্ভব ঘটে।


উপসংহার:

উপর্যুক্ত সকল আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় বুর্জোয়া ও প্রলেতারিয়েত শ্রেণির উৎপত্তি ও বিকাশ সমাজব্যবস্থায় বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সংঘটিত হয়। দীর্ঘ ক্রিয়া প্রতিক্রি  বা সময়কাল অতিবাহিত করে আজকের এই সমাজব্যবস্থায় পুঁজিবাদী সমাজ যেমন প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হতে থাকে এবং সফল রূপদান করে থাকে, তেমনি এই সমাজে বুর্জোয়া ও প্রলেতারিয়েত শ্রেণির শক্তিশালীসহ অবস্থানের কারণে ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি তার অস্তিত্ব বিস্তার করতে পেরেছে। আজকের এই সমাজের প্রক্রিয়া বুর্জোয়াদের উদ্ভব ও শক্তিশালি ভিত্তি বিবর্তনের মাধ্যমেই ঘটেছে। অতএব বলা যায়, বুর্জোয়া শ্রেণির বিকাশ বা উদ্ভব কৃষক বা জমিদার শ্রেণির হাত ধরে হয়ে থাকলেও শিল্পায়নের প্রভাবে এর বিকাশের পূর্ণতা লাভ করে।


#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!