শিল্পায়ন বলতে কী বুঝ? শিল্পায়নের কী কী বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়? আলোচনা কর।

admin

ভূমিকা :

শিল্পায়ন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, পদ্ধতি বা কৌশল যে পদ্ধতির মাধ্যমে উৎপাদন ক্ষেত্রে আধুনিক ও উন্নত যান্ত্রিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ক্ষুদ্রাকৃতির উৎপাদন ব্যবস্থার পরিবর্তে বৃহদায়তন উৎপাদন ব্যবস্থা, আধুনিক যোগাযোগ সর্বোচ্চ প্রযুক্তির ব্যবহার, আধুনিক যাতায়াত ও স্বয়ংক্রিয় অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির প্রবর্তন করে থাকে। শিল্পায়ন বলতে সাধারণ কোনো অঞ্চল বা স্থানের কোনো বিশেষ দিকের উন্নয়ন বা পরিবর্তনকে বুঝায় না ববং কোনো দেশের বা অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নের পাশাপাশি অবকাঠামোগত ও গুণগত মান সম্পন্ন উন্নয়নকে বুঝানো । শিল্পায়নের কোনো দেশের শুধুমাত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নকেই বুঝায় একাধারে, দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, এইনশৃঙ্খলা, প্রযুক্তিগতসহ বিভিন্ন উন্নয়নের এমন একটি প্রণালি যা দেশের অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক মোট উৎপাদন বৃদ্ধির অন্তরীণ আর্থিক সংগঠনেও ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ শিল্পায়ন হলো শিল্পের কাঁচামালকে রূপগত উপযোগ সৃষ্টি করাকেই সাথে সাথে দেশের জাতীয় উৎপাদন, মোট মাথাপিছু আয় ও জাতীয় সম্পদের এক ক্রমবর্ধমান অংশ যা কি না দেশের বুঝানো না, সাথে সাথে উৎপাদনক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও বৈচিত্ৰ্যায়ন।


শিল্পায়ন বলতে কী বুঝ? শিল্পায়নের কী কী বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়? আলোচনা কর।


শিল্পায়ন :

শিল্পায়ন বলতে মূলত সমাজে প্রাচীন চাষ ব্যবস্থা পরিত্যাগ করে আধুনিক যান্ত্রিক শিল্পের বিকাশকে বোঝানো হয়ে থাকে। শিল্পবিপ্লবের সময়কাল হতেই মানুষের কাছে শিল্পায়ন শব্দটি বেশ পরিচিত। শিল্পায়ন শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Industrialization যা ল্যাটিন শব্দ Industria হতে উৎপত্তি হয়েছে। Industria শব্দের অর্থ হলো উদ্যোগ বা কর্মকাণ্ড সম্পাদন। ব্যাপক অর্থে শিল্পায়ন বলতে বৃহদায়তন উৎপাদন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে এর মান শিল্পের কাঁচামাল বা উপকরণ ব্যবহার যান্ত্রিক প্রক্রিয়া সৃষ্টিকে বোঝায়। অর্থাৎ শিল্পায়ন দ্বারা কোনো দেশের যান্ত্রিক উৎপাদন সচল করে শিল্পের উদ্ভব ও বিকাশকে বোঝায়।


শিল্পায়ন প্রামাণ্য সংজ্ঞা : 

বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী গবেষক ও বিশ্লেষক শিল্পায়নের উপর বিভিন্ন ধরনের মত প্রদান করেন। নিম্নে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ হতে তাদের মতামত ব্যক্ত করা হলো :

Jary and Jary (জেরি এবং জেরি) এর মতে “শিল্পায়ন হচ্ছে এমন একটি সাধারণ প্রক্রিয়া যার দ্বারা হস্তচালিত উৎপাদন এবং কৃষিভিত্তিক সমাজ ও অর্থনীতিতে রূপান্তরিত।”


বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ড. আলী আকবর (Prof. Ali Akbar) তাঁর Elements of Social Work' গ্রন্থে শিল্পায়নকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন, "Industrialization not only radically changes the occupational structure of the people but also shifts the location of the economic activities."


জাতিসংঘের শিল্পোন্নয়ন কমিটি (১৯৬৩) প্রদত্ত শিল্পায়নের সংজ্ঞা হলো, "শিল্পায়ন অর্থনৈতিক উন্নয়নের এমন এক প্রতিমা, প্রণালি যা জাতীয় সম্পদের একটি ক্রমবর্ধমান অংশ অভ্যন্তরীণ আর্থিক ও বৈচিত্র্যময়।"


রাশিয়ার সমাজবিজ্ঞানী ডি. তিয়াগুনেনকো এবং কোলনতাই (V. Tyaguninko and kollontai ) তাদের Problem of Industrialization in the Developing Countries' নামক গ্রন্থে বলেছেন, “শিল্পায়ন বলতে অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় কেবল একটি বিশেষ দিককে বুঝায়। উন্নয়নশীল দেশগুলোর যাবতীয় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই বৈজ্ঞানিক উপায়ে এবং প্রযুক্তি বিদ্যার সহযোগে তাদেরকে শিল্পে পরিণত করা হচ্ছে।"


আর. বি. সাটচিফ ( R. B. Shutchiffe ) বলেছেন, শিল্পায়িত সমাজ বলতে, শিল্পায়িত সেক্টরের নিম্নোক্ত নির্ধারকগুলোকে বুঝায় :

১. জিডিপি অন্ততপক্ষে ২৫%

২. মোট দেশের অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থানের ১০% বা তার বেশি শিল্পখাতে।

৩. জিডিপিতে উৎপাদন খাতের অবদান হবে ৬০% বা তার বেশি।


ডি. ডিল্ড (D. Wield) শিল্পের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে মন্তব্য করেন যে, শিল্প তিন ধরনের হতে পারে। যেমন-

১. শিল্প বলতে কৃষিবাদে সবকিছুকেই বুঝায়।

২. শিল্প বলতে জ্বালানি, খনি খনন ও পন্য উৎপাদনকে বুঝায়

৩. শিল্প বলতে উৎপাদন ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, শ্রমবিভাজনের একটি বিশেষ রূপ কে বুঝায়।


আইভান ফস্টার কার্টার (Ivan Foster Curter) এর মতে, “শিল্প বলতে বুঝায় শিল্পজাত উৎপাদন আর বৃহৎ অর্থে শিল্প হচ্ছে শিল্পায়নের বৃহত্তর সামাজিক প্রক্রিয়া।"


শিল্পায়নের বৈশিষ্ট্যসমূহ :

শিল্পায়নের বিভিন্ন দিক বিচারবিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে নিম্নোক্ত উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যসমূহ উপস্থাপন করা হলো :


১. বৃহদায়তন উৎপাদন ব্যবস্থা : একটি সমাজের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো শিল্পায়িত সমাজের বৃহদায়তন উৎপাদন ব্যবস্থা। পূর্বে বা প্রাচীনকালে মানুষ নিজের হাত দিয়ে উৎপাদনকার্য পরিচালনা করতো। কিন্তু বর্তমানে শিল্পায়নের ফলে মানুষ আধুনিক যন্ত্রপাতি বা যান্ত্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করে উৎপাদন কার্য পরিচালনা করে। শিল্পায়নের ফলে যন্ত্র পরিসরে ক্ষুদ্রতর উৎপাদন ব্যবস্থার পরিবর্তে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও যান্ত্রিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বৃহদায়তন উৎপাদন প্রতিষ্ঠান বা বৃহদায়তন কলকারখানা প্রস্তুত করা হয়েছে। মূলত গৃহকেন্দ্রিক ক্ষুদ্রায়তন উৎপাদন ব্যবস্থার পরিবর্তে বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান কলকারখানা নির্ভর বৃহৎ উৎপাদন প্রতিষ্ঠা করাই হলো শিল্পায়ন।


২. শিল্পের স্থানীয়করণ : শিল্পায়নের অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো শিল্পের স্থানীয়করণ । শিল্পের স্থানীয়করণ বলতে কোনো বিশেষ শিল্পের জন্য কোনো বিশেষ অঞ্চলে ঐ শিল্পের কেন্দ্রীয়করণকে বুঝায়। আবহাওয়া, চাহিদা, যোগান ও উৎপাদনের অনুকূল অবস্থা, বিপণন ও অর্থায়নের যাবতীয় উপকরণসমূহ একত্রীকরণ করে যে বিশেষ শিল্পের বিশেষ বিশেষ স্থানে গড়ে ওঠে তাই শিল্পের কেন্দ্রীকরণ বা স্থানীয়করণ। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, গাজীপুর এলাকায় শ্রমিক ও কাঁচামালের সহজলভ্যতার কারণে গার্মেন্টস শিল্প, নারায়ণগঞ্জে পাট উৎপাদনকারী ও সংগ্রহ করার সহজস্থর বলে এখানে পাটজাতন্ত্রব্য উৎপাদনকারী কলকারখানা, সুন্দরবনের গেওয়া কাঠকে কেন্দ্র করে খুলনা নিউজপ্রিন্ট কাগজ কারখানা। এছাড়াও বিভিন্ন স্থলে অনুকূল পরিবেশ, আবহাওয়া ও শ্রমিকের সহজলভ্যতার কারণে এসব স্থলে শিল্পের কেন্দ্রীয়করণ বা. স্থানীয়করণ ঘটেছে ।


৩. শ্রম বিভাগের প্রবর্তন : আধুনিক শিল্পায়িত সমাজের সাথে সংগতিপূর্ণ অধিক উৎপাদন ব্যবস্থায় শ্রম বিভাগের প্রবর্তন করা হয়। শিল্পায়নের ফলে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল, রাষ্ট্র এবং বিশ্বব্যাপী উৎপাদন ব্যবস্থার উন্নতির জন্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠা না করে বৃহদায়তন উৎপাদন ব্যবস্থার জন্য বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান আকার ও আয়তন বৃদ্ধির সাথে সাথে উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে প্রশিক্ষণ, যোগ্যতা, দক্ষতা ও কর্মক্ষমতা প্রভৃতি অনুসারে কার্যবিভাজনের প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়। বৃহদায়তন উৎপাদন প্রতিষ্ঠানে শিল্প সমৃদ্ধির জন্যও উৎপাদনে গতিশীলতা আনয়নের জন্য শ্রম বিভাগ বাধ্যতামূলক এভাবেই গড়ে ওঠে শিল্পায়নের একটি সমৃদ্ধি শ্রম বিভাগ। অতএব, শ্রম বিভাগ হলো শিল্পায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।


৪. প্রতিযোগিতামূলক বাজার : শিল্পায়নের অন্যতম আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো প্রতিযোগিতামূলক বাজারে অবস্থান গ্রহণ ও বাজার দখল করা। বর্তমানে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশসহ বিশ্ববাজারেও পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা সম্প্রসারণের সাথে সাথে যেভাবে শিল্পায়নের প্রভাব ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর বৃদ্ধি পেয়েছে, সেই বাজারেও প্রতিযোগিতার তারতম্য ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। শিল্পায়নের প্রভাবে একচেটিয়া বাজার ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়ে প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। শিল্পায়নের ফলে একই স্থানে বা অঞ্চলে একই পণ্যদ্রব্যাদির বিভিন্ন উৎপাদন প্রতিষ্ঠান থাকে। ফলে, বাজার দখল করার জন্য বৃহদায়তন উৎপাদনের পাশাপাশি বাজার দখলের জন্য বিভিন্ন কৌশল বা পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। অর্থাৎ শিল্পায়নের ফলে বাজারে পণ্যদ্রব্যাদির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে, বাজারে একচেটিয়া কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান অবস্থান দখল করতে পারে না। বাজার দখলের জন্য বৃহদায়তন উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ব্যাপক প্রতিযোগিতা লক্ষ করা যায়।


৫. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সমন্বয় : আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তিগত উৎপাদন ব্যবস্থা এবং যান্ত্রিক বিপ্লবের সফল ফলাফল ও ব্যবহারই শিল্পায়ন। মূলত শিল্পায়ন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি যেখানে উন্নতমানের বিজ্ঞান  ব্যবহার করে যান্ত্রিক শক্তিকে ব্যবহার করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যাকে উৎপাদন পদ্ধতিতে প্রবর্তন করা। আধুনিক যুগের সাথে সমন্বয়কারী শিল্পের সকল উপকরণ সরবরাহ, সংগৃহীত করার ক্ষেত্রে যে শিল্প প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় তাই শিল্পায়ন। অর্থাৎ, শিল্পায়ন হলো নতুন নতুন পণ্যদ্রব্যাদি বা ঐ সকল পণ্যদ্রব্যাদিতে বৈচিত্র্যায়নের লক্ষ্যে আধুনিক প্রযুক্তি তথ্য যোগাযোগ ও যন্ত্রপাতির অপূর্ব সমন্বয়।


৬. পুঁজিবাদের বিকাশ: শিল্পায়নের ফলে সারাবিশ্বে পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার প্রবর্তন হয়েছে। এছাড়া পারে পুঁজিবাদের বিকাশ ঘটার অন্যতম প্রধান কারণ হলো শিল্পায়িত সমাজ। শিল্পায়ন প্রক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো পুঁজিবাদী অর্থনীতি। কোনো দেশের শিল্পায়নের আয়তন বা আওতা-পরিধি বৃদ্ধির করার জন্য প্রচুর পরিমাণ বাতি মালিকানাধীন মূলধন থাকতে হবে। এ মূলধনের দ্বারা দেশের শিল্পায়নের বিকাশের জন্য বিপুল পরিমাণ কলকার উৎপাদন প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। দেশি বা বিদেশি পুঁজির মাধ্যমেই দেশের শিল্পায়নের গতি খুব দ্রু বৃদ্ধি । অর্থাৎ বলা যায় যে, শিল্পায়নের উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ নির্ভর করে পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার সাফল্যের উপর।


৭. পেশাগত গতিশীলতা : শিল্পায়নের ফলে দেশ বা সমাজ এবং রাষ্ট্রের পেশাগত গতিশীলতা ব্যাপকভাবে পায়। অবাধে শিল্পায়ন পদ্ধতি প্রয়োগের ফলে দেশে প্রচুর পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি সুবিধামতো পেশা নির্বা করতে পারে। শ্রমিকের পেশাগত বিস্তৃতি লাভের জন্য শিল্পক্ষেত্রে বিভিন্ন সৃষ্টি হয়। শিল্পায়নের ফলে শ্রমিকেরা অবাধে সেই সকল সৃষ্ট ক্ষেত্রগুলোতে কাজ করতে পারে। শিল্পায়নের প্রভাবে বিভিন্ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ার জন্য শ্রমিকেরা ঝুঁকিপূর্ণ ও অলাভজনক পেশা ছেড়ে সহজেই বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত হতে পারে।


৮. নগরায়ণ : শিল্পায়নের ফলে দেশের অভ্যন্তরে বা বাইরে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নগরায়ণের প্রভাববিস্তারকারী উৎপাদন তথা উন্নত জীবনযাপন করা সম্ভব হয়েছে। নগরায়ণের পূর্বশর্ত হলো শিল্পায়নে সমৃদ্ধ। কোনো অঞ্চলের শিল্পায়ন যতটা বৃদ্ধি পায় সেই অঞ্চলের নগরায়ণও ঠিক ততটাই প্রসারিত হয়। শিল্পায়ন বৃদ্ধির সাথে সাথে নগরায়ণও বৃদ্ধি পায়। অতএব, নগরায়ণ হলো শিল্পায়নের একটি বিশেষ গুণ যা শিল্পায়নকে ত্বরান্বিত করে।


৯. শ্রমিকের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি : শিল্পায়নের ফলে দেশের অভ্যন্তরে বাইরে শিল্পকারখানার পরিমাণ যত বৃদ্ধি পায় ঠিক সেই পরিমাণ শ্রমিকের কর্মদক্ষতা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। শ্রমিকের দক্ষতার এই উত্তরোত্তর বৃদ্ধির ফলে শিল্পায়নের উৎপাদন ক্ষমতা ও ক্রমবর্ধমান হারে বেড়ে যায়। একটি দেশের শিল্পায়নের সফলতা নির্ভর করে ঐ দেশের শিল্পকারখানায় কর্মরত সকল শ্রমিকের কর্মদক্ষতার উপর। আবার যদি শিল্পায়নের ক্ষেত্র ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করে সেক্ষেত্রে শ্রমিকেরা তাদের কর্মদক্ষতা প্রয়োগের ক্ষেত্রও শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। তাই বলা হয়, শ্রমিকের বুদ্ধিবৃত্তি, দক্ষতা, জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রয়োগ, কর্মদক্ষতা, যোগ্যতা হলো শিল্পায়নের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ও অত্যাবশ্যকীয় উপাদান।


১০. নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় : নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় হলো শিল্পায়নের উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত। শিল্পায়ন যতটা বেড়ে যায় মানুষের কর্মব্যবস্থাও ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। অর্থাৎ শিল্পায়নের ফলে মানুষ কর্মব্যস্ত হয়ে পড়ে। কর্মব্যস্ততার ফলে মানুষের কর্মকাণ্ড, গতিবিধি ও যাবতীয় ক্রিয়াদি যন্ত্রচালিত রোবটের মতো হয়ে পড়ে। মানুষের এই কর্মবস্ততার ফলে নৈতিক, সৎ ও কর্তব্যপরায়ণতা ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে। একটি শিল্পায়নের সমৃদ্ধতা বৃদ্ধির সাথে। সাথে এসব গুণাবলি ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে।


১১. জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন : শিল্পায়ন বলতে সাধারণত মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সাধারণ জীবনযাত্রার মান উন্নয়নকেও বুঝায়। শিল্পায়নের ফলে মানুষ যেমন নতুন নতুন পণ্যদ্রব্য উৎপাদন করে, তেমন প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থা হতে গুণাগুণ সম্পন্ন পণ্যদ্রব্য নির্বাচন করতে পারে। এছাড়াও পূর্বে এদেশের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর হওয়ায় বেশিরভাগ মানুষ অশিক্ষিত ও জ্ঞানবিজ্ঞানের এতটা প্রসার ঘটেনি। শুধুমাত্র এই শিল্পায়নের ফলেই মানুষের জীবনযাত্রার মান বহুলাংশে উন্নত হয়েছে।


উপসংহার :

উপর্যুক্ত সকল আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, শিল্পায়নের ক্ষেত্রে উপর্যুক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো ছাতার আরো প্রচুর পরিমাণে বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু এ বৈশিষ্ট্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য আর এ সকল বৈশিষ্ট্যগুলো শিল্পায়ন সমৃদ্ধ করার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, শিল্পায়নের মূলমন্ত্র যা কি না শিল্পায়নের গুরুত্বকে অধিক মূল্যায়ন করে। তদ্রূপ আবার এমনও অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেগুলো শিল্পায়নের গুরুত্ব বা মূল্যবোধকে ম্লান করে নিয়েছে। আমার সকাল কিছু বিচারবিশ্লেষণ করে উপর্যুক্ত বৈশিষ্ট্যের দিকে তাকালে বুঝা যায় যে, এই বৈশিষ্ট্যগুলো শিল্পায়নকে নিরপেক্ষ পরিচয় প্রদান করেছে এবং এই বৈশিষ্ট্যগুলো শিল্পায়নকে ভিন্ন একটি স্বতন্ত্র সত্ত প্রদর্শন করে



#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!