কার শাসনকালকে রোমান সাম্রাজ্যের স্বর্ণযুগ বলা হয়?

admin

 

ভূমিকা : রোমান সভ্যতায় উন্নয়ন বিকাশে অগাস্টাস সীজার একটি উল্লেখযোগ্য নাম। তিনি সভ্যতার উৎকর্ষতার দিক থেকে পৃথিবীর ইতিহাসে এক অভাবনীয় উন্নতি সাধন করেন। রোমান সাম্রাজ্যের স্বর্ণযুগ বলতে অগাস্টাসের সময়কালকে বুঝানো হয় । এই স্বর্ণ যুগের শাসন আমলে রোমানদের বিকাশ ঘটে।

কার শাসনকালকে রোমান সাম্রাজ্যের স্বর্ণযুগ বলা হয়?



অগাস্টাস সীজারের পরিচয় : অগাস্টাস সীজার ছিলেন জুলিয়াস সীজারের ভাইপো (মতান্তরে বোনের ছেলে) এবং দত্তক পুত্র অক্টোভিয়ান সীজার। অক্টোভিয়ান সীজার অগাস্টাস সীজার নাম নিয়ে ক্ষমতায় বসেন। রোমান সিনেট তাকে অগাস্টাস (সম্মানিত সম্রাট) উপাধিতে ভূষিত করেন।


অগাস্টাস সীজারের সংস্কার : ৩১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তিনি রোমের সিনেটের অনুমোদন নিয়ে রোমান সম্রাট হিসেবে ক্ষমতায় আরোহণ করেন। অগাস্টাস সীজারের শাসনকালের উল্লেখযোগ্য সংস্কারসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হল।


১. আইন সংস্কার : অগাস্টাস সীজারের সময় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সংস্কার ছিল আইনি সংস্কার। তিনি রোমান আইনে তিনটি শাখায় ভাগ করেছিলেন। যথা- ক) বেসামরিক আইন খ) জনগণের আইন গ) প্রাকৃতিক আইন। অগাস্টাস রোমান জনগণের কথা বিবেচনা করে আইনের পুনর্বিন্যাস করেছিলেন।


২. সামরিক বাহিনীর সংস্কার : রোমান সম্রাট অগাস্টাস সামরিক বাহিনীর ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার সাধন করেছিলেন। এখানে তিনি দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিদের সামরিক বাহিনীতে অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছিলেন। তিনি পিটোরিয়ান গার্ড নামে সম্রাটের দেহরক্ষী বাহিনীর একটি নতুন দল তৈরি করেন এবং এদের সর্বপ্রকার সুযোগ সুবিধা দেন।


৩. যোগাযোগ ব্যবস্থার সংস্কার : রোমান সম্রাট যোগাযোগ ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি সাধন করেছিলেন। তিনি যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণ করার লক্ষ্যে গল, স্পেন, সিরিয়া এবং এশিয়া মাইনরের মধ্যে রাস্তা তৈরি করে এ সমস্ত রাস্তার সাথে ইতালিকে সংযুক্ত করেছিলেন।


৪. প্রশাসনিক সংস্কার : জুলিয়াস সীজার প্রবর্তিত কেন্দ্রীয় শাসন পদ্ধতি অগাস্টাস সীজারও অব্যাহত রাখেন। বিভিন্ন প্রদেশে তিনি তার পছন্দমত গভর্নর নিয়োগ করেন। তিনি অভিজ্ঞতা ও বুদ্ধিবৃত্তির মানদণ্ডে প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিয়োগ করতেন। প্রাদেশিক কর্মকর্তাদের প্রতি তার প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ ছিল। প্রজাসাধারণদের উপর নির্যাতন বা উৎকোচ গ্রহণ করলে শাসনকর্তাদের কঠোর শাস্তি দেয়া হতো। এভাবে তিনি প্রশাসনকে আধুনিক করেছিলেন।


৫. কর সংক্রান্ত সংস্কার : অগাস্টাস কর আরোপ ক্ষেত্রে সংস্কার সাধন করেছিলেন। তিনি প্রাদেশিক কর সংগ্রহের প্রাচীন রীতির বিলোপ ঘটিয়ে নগদ বেতনের ভিত্তিতে কর আদায়কারী নিয়োগ করেন।


৬. স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা : শাসন ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীয়করণের জন্য তিনি নগর ও প্রদেশসমূহকে স্বায়ত্তশাসন দিয়েছিলেন । এক্ষেত্রে প্রাদেশিক শাসক কর্তারা তাদের নিজেদের মত করে শাসন কার্য পরিচালনা করতেন।


৭. ডাক ব্যবস্থার প্রবর্তন : যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরো বেশী সুদৃঢ় করার জন্য তিনি ডাক ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিলেন। যদিও তার পূর্বে রোমান সাম্রাজ্যে ডাক ব্যবস্থা ছিল না। এতে করে ডাক ব্যবস্থায় প্রবর্তনের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিক হয়েছিল।


৮. ভাষা সাহিত্যের উন্নয়ন : অগাস্টাস সীজারের সময় রোমে ল্যাটিন ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশ ঘটেছিল। ল্যাটিন ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষায় মর্যাদা দেওয়া হয়। ফলে সমগ্র রোমের অধিবাসীরা এই ভাষা চর্চা করেন।


৯. স্থাপত্য ও ভাস্কর্য শিল্পের বিকাশ : অগাস্টাস সীজারের সময় স্থাপত্য ও ভাস্কর্য শিল্পে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছিল। তিনি গ্রিসের অনুকরণে নাট্যশালা, জলনিষ্কাশন প্রণালি এবং অনেক ইমারত তৈরি করেছিলেন।


১০. জনহিতকর কার্যাবলি : অগাস্টাস সীজার বহুবিধ জনকল্যাণকর কার্যাবলি সাধন করেছিলেন। তিনি বিবাহ বিচ্ছেদ, আত্মহত্যা এবং ব্যভিচার প্রসঙ্গে সংঘটিত সামাজিক ও নৈতিক অপরাধ দমনে কঠোর আইন প্রণয়ন করেন। তিনি সৎ ও সরল জীবনের উদাহরণ প্রচার করে নাগরিকদের বিলাস-ব্যসন ও অসাধুতা থেকে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করেন।


১১. ধর্মীয় ক্ষেত্রে অবদান : ৪ অগাস্টাসের সময় একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হলো খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যীশু খ্রিস্টের জন্মগ্রহণ। যীশুখ্রিস্ট তার অনুসারীগণ কর্তৃক রোমে খ্রিস্টধর্ম ব্যাপকভাবে প্রচার করেছিল। এতে সম্রাটের শক্তি একটি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিল। তিনি রোম থেকে মিস্ত্রাসবাদ, সিবিল দেবীর পূজা প্রভৃতি কুসংস্কার দূর করতে পেরেছিলেন।


উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, রোমের উন্নতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল অগাস্টাস সীজারের। তার পূর্বে ও পরে এত উন্নয়ন রোমে কখনো ঘটেনি বিধায় সম্রাট অগাস্টাসের সময় কালকে রোমের স্বর্ণযুগ বলা হয়। এ সময় তিনি রোমের বহুবিধ পুরাতন রীতি নীতির পরিবর্তন করে আধুনিকায়ন করতে পেরেছিলেন।


#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!