বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর ।

admin

ভূমিকা :

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারাবাহিক  সফলতা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে টেকসই ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে বর্তমানে অপরিশোধিত ও জ্বালানির মূল্য রেকর্ড পর্যায়ে বৃদ্ধিজনিত কারণে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয়ের উপর অস্বাভাবিক চাপ round দোহা  আলোচনার  দীর্ঘসূত্রতা, বিকাশমান অর্থনীতির দেশসমূহের ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি ব্যাপকভিত্তিক বাজার সম্প্রসারণ ইত্যাদি সত্ত্বেও বাংলাদেশের সার্বিক বাণিজ্য সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে।


বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর ।

বাংলাদেশের অর্থনেতিক বৈশিষ্ট্য :

নিন্মে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হল :


১. পরিকল্পিত উন্নয়নের সূচনা : বাংলাদেশে অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য এই যে, দেশে পরিকল্পিত কর্মসূচির মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থবিরতা ও জড়ত্বের অচলায়তন সর্বাধিকভাবে উন্নয়নের নিমিত্তে বাংলাদেশ খানিকটা অগ্রসর হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ প্রভৃতি ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য লাভ করেছে।


২. শিল্পের উন্নয়নের সূচনা :  বাংলাদেশে শিল্পের উন্নয়ন অধিকতর  চোখে পড়ার মত। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও ২০০৭ সালে শিল্পের অবদান ছিল জিডিপিতে ২৯.৭৭ শতাংশ যা নিঃসন্দেহে উৎসাহব্যঞ্জক। একক খাত হিসেবে বর্তমানে শিল্পের অবদান যে কোন খাতের থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেশি। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারাবাহিক সফলতা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক টেকসই  ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করেছে। বাংলাদেশের শিল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে এটা সফলভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।


বাংলাদেশের অর্থনীতি কি পশ্চাৎপদ - আলোচনা কর।


৩. কৃষির উন্নয়ন : উন্নয়নশীল দেশের বৈশিষ্ট্য হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি ব্যবস্থার পুরাতন মান্ধাতার আমলের চাষাবাদ পদ্ধতির পরিবর্তে আধুনিক উন্নত পদ্ধতির যাত্রা শুরু করেছে। সেচ ব্যবস্থা, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির সফল ব্যবহার, সার, বিদ্যুৎ, কীটনাশক প্রভৃতি কৃষির উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। খাদ্য উৎপাদনে একক অবদান হিসেবে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।

কিভাবে সুইপার সোশ্যাল ( Swiper social) যুক্ত হয়ে টাকা ইনকাম করবেন

৪. জাতীয় ও মাথাপিছু আয়ের অমোন্নতি : কৃষি ও শিল্প ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নতির সাথে সাথে দেশের মাথাপিছু আয় অনেক বেড়েছে। বর্তমানে দেশের মাথাপিছু আয় ১১৯০ মার্কিন ডলার।


৫. প্রাথমিক খাতের প্রাধান্য: বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রাথমিক খাতের প্রাধান্য। দেশের মোট শ্রমশক্তির প্রায় দু' তৃতীয়াংশের কর্মসংস্থান হয় প্রাথমিক খাতের মাধ্যমে। ফলে প্রাথমিক খাতের প্রবৃদ্ধির উপর সময় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার নির্ভর করে। প্রাথমিক খাত বলতে মূলত হ কৃষি, মৎস্য, পশুপালন, পলটি ইত্যাদিকে বুঝিয়ে থাকে এবং জিডিপিতে এ খাতের অবদান সর্বাধিক।


৬. কৃষি ও শিল্পের অনগ্রসরতা : বাংলাদেশ মূলত কৃষি সা নির্ভরশীল হলেও কৃষিতে এখনও বহুলাংশে মান্ধাতার আমলের | চাষ পদ্ধতি প্রচলিত আছে যা প্রকৃতির খেয়ালখুশির উপর উৎপাদন নির্ভর করে। ঠিক একইভাবে শিল্পের অবস্থান আরও পশ্চাৎপদ। শিল্প খাতে মোট শ্রমশক্তির ১১ শতাংশ নিয়োজিত আছে। তাই শিল্প ও কৃষির অনগ্রসরতা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পুরোমাত্রায় বিদ্যমান যা একটি দেশের অনুন্নত অর্থনীতির পরিচয় বহন করে।


বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে তোমার পরামর্শ প্রদান কর


৭. অত্যধিক দারিদ্র্য : বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা দরিদ্রতা। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক ন্যূনতম খালা চ গ্রহণ (২১২২ কিঃ ক্যালরি) করতে পারে না। জনসাধারণের নি জীবনযাত্রার মান নিম্নমুখিতার কারণে তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিও অনেক বেশি থাকে।


৮. জনাধিক্য : বাংলাদেশের ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিঃ মিঃ  জায়গায় ১৫ কোটি ৫৮ লাখ লোক বসবাস করে, যা নিঃসন্দেহে উদ্বেগের কারণ। প্রতি বর্গ কিঃ মিঃ জায়গায় বাস করে ১০১৫ জন এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি হার ১.৩৭%। অনুন্নয়নশীল দেশের বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশেও অধিক মাত্রায় বিদ্যমান।


৯. খাদ্যঘাটতি : বাংলাদেশের উৎপাদিত খাদ্যে দেশের চাহিদা মিটানো সম্ভব নয়। প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় যা দেশের অর্থনীতির জন্য মোটেও সহায়ক নয়।


১০. সত্তা শ্রম : সন্তা শ্রম বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। তারপরও কর্মসংস্থানের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তাই শ্রম নিবিড় দ্রব্য বা সেবা উৎপাদন করা সুবিধাজনক।


বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মুখ্য সমস্যাসমূহ বর্ণনা কর।


১১. প্রাকৃতিক সম্পদের স্বল্পতা : বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ নেই বললেই চলে। গ্যাসই এদেশের মূল্যবান সম্পদ। তাছাড়া সামান্য পরিমাণে কয়লা, লৌহ, তেল ইত্যাদি পাওয়া যায়।


১২. অদক্ষ মানবসম্পদ : বাংলাদেশে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের নিম্নমানের কারণে এদেশে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে উঠে নি। শ্রমের আধিক্য থাকলেও দক্ষ শ্রমিকের অভাব অত্যন্ত বেশি।


১৩. বাণিজ্য ঘাটতি : এদেশের আমদানি রপ্তানি অপেক্ষা অনেক বেশি। স্বাভাভিকভাবে বাণিজ্য ঘাটতির কারণে বিদেশ। থেকে ঋণ নিতে হয়। ফলে বিশাল অংশের বৈদেশিক ঋণ মাথার উপর ঝুলছে।


১৪. সঞ্চয় ও বিনিয়োগ স্বল্পতা : এদেশের আয়ের স্বল্পতার এ কারণে সঞ্চয় কম। সন্ধ্যা কম বলে বিনিয়োগ কম, বিনিয়োগ কম এ বলে উৎপাদন কম। এভাবে চক্রাকারে চলতে থাকে। ফলে দেশের জনগণের জীবনযাত্রার মান নিম্নমুখী।


১৫. শ্রম নিবিড় গ্রন্য রপ্তানি: দেশের শ্রমশক্তি দক্ষ নয়। প তবে পর্যাপ্ত পরিমাণ শ্রমিক দিয়ে শ্রম নিবিড় শিল্প প্রতিষ্ঠা ও দ্রব্য ল উৎপাদনের মাধ্যমে বিশাল শ্রমের সর্বাধিক ব্যবহার সম্ভব হবে। ১৬. শিল্প প্রতিষ্ঠানের যন্ত্রাংশ আমদানি : উন্নত প্রযুক্তির এ মাধ্যমে উন্নত দেশে যে কলকব্জা ও রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদিত হয় তা বাংলাদেশ আমদানি করে থাকে। ফলে বাংলাদেশের আমদানি অস্থিতিস্থাপক।


১৭. মিশ্র অর্থনীতি : আমাদের দেশ প্রাথমিক পর্যায়ে সমাজতান্ত্রিক ধাঁচের দিকে ধাবিত হলেও বিশ্বায়নের ফলে মুক্তবাজার অর্থনীতির দিকে ধাবিত হয়। মূলত বাংলাদেশ একটি মিশ্র অর্থনীতির দেশ। আর মুক্তবাজার অর্থনীতিতে উত্তরণের উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাংক ও আই এম এফ এর বাতানো পন্থানুযায়ী কাঠামোগত সমন্বয়ের সংস্কার বর্তমানে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।


বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাষ্ট্র ভূমিকা আলোচনা কর


উপসংহার:

পরিশেষে উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে আমরা বলতে পারি যে, বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ। নানা প্রাকৃতিক | দুর্যোগ যেমন- কড়, বন্যা, দরিদ্রতা ইত্যাদি কারণে বিশ্বব্যাপী অধিক পরিচিত। তবুও মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বেসরকারি খাত চলমান অর্থনৈতিক গতিকে সমুন্নত রাখতে সহায়ক চালিকাশক্তি। | হিসেবে কাজ করে আসছে। অভীষ্ট লক্ষ্য পূরণের নিমিত্তে রা | বেসরকারি খাতের বিকাশের জন্য উদারীকরণ ও যুগোপযোগী কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে


#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!