বুদ্ধির স্বরূপ বর্ণনা কর। বুদ্ধি অভীক্ষা সম্পর্কে ডেভিড ওয়েসলারের তত্ত্বটি আলোচনা কর।

admin

ভূমিকা : 

বুদ্ধি অভীক্ষা সংক্রান্ত ব্যাপার নিয়ে ওয়েসলার দীর্ঘদিন গবেষণা করেন। বিনে অভীক্ষার দুর্বলতা ছিল। ওখানে সম্পূর্ণ বুদ্ধ্যঙ্ক এর ধারণা পাওয়া যেত, কিন্তু ভিন্ন ভিন্নভাবে বুদ্ধ্যঙ্ক পাওয়া যেত না। ওয়েসলার কতকগুলো উপঅভীক্ষা নিয়ে তিনি বুদ্ধি অভীক্ষা গঠন করেন। উপঅভীক্ষাগুলো দু'টি প্রধান অংশে ভাগ করেন। একটি হল ভাষামূলক অভীক্ষা অন্যটি হল কৃতি অভীক্ষা। ভাষামূলক অভীক্ষার অন্তর্ভুক্ত কতকগুলো উপঅভীক্ষা ছিল। এক্ষেত্রে সুবিধা হল আমরা এর সাহায্যে কাজের দক্ষতা এবং কথাবার্তা বিভিন্নভাবে জানতে পারি। ফলে তাকে তার নির্দিষ্ট লক্ষ্য অনুযায়ী ব্যবহার করা যায় ।


বুদ্ধির স্বরূপ বর্ণনা কর। বুদ্ধি অভীক্ষা সম্পর্কে ডেভিড ওয়েসলারের তত্ত্বটি আলোচনা কর।


বুদ্ধির স্বরূপ : 

বুদ্ধি হল ব্যক্তির যোগ্যতা নির্ণায়ক ও মানস গুণ। পরিবেশের সাথে সংগতিবিধানে কিংবা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে যে তারতম্য তা বুদ্ধি গুণটির মাত্রাভেদের জন্য প্রধানত দায়ী। ব্যক্তির চিন্তন, কল্পনা, পর্যবেক্ষণ, ধারণা, শিক্ষণ প্রভৃতি মানস গুণগুলো বুদ্ধির সাথে সম্পর্কযুক্ত। নিম্নে বুদ্ধির স্বরূপ বর্ণনা করা হল :


প্রথমত, বুদ্ধির প্রচেষ্টা বৈচিত্র্যধর্মী এবং কর্মপরিধি সীমাহীন। এছাড়া বুদ্ধির রয়েছে ব্যাপক পরিবর্তনশীলতা। ব্যক্তি নতুন পরিবেশের সাথে সংগতিবিধানে অসমর্থ হলে আচরণ পরিবর্তন করে প্রচেষ্টায় বৈচিত্র্য আনয়ন করে এবং সংগতিবিধানে সার্থক হলে বুদ্ধির পরিচয় প্রদান করে।


দ্বিতীয়ত, বুদ্ধি হল মৌলিক মানসিক শক্তি যা, কর্মের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এটি স্নায়ুতন্ত্রনির্ভর একটি বিষয়, তবে দৈহিক বিষয় নয়। স্নায়ুর সুষ্ঠু যোগাযোগ ও সমন্বয় ব্যক্তির মানসিক শক্তি বা ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে এবং কর্মে সফল করে তোলে।


তৃতীয়ত, বুদ্ধি ব্যক্তির বিভিন্ন মানসিক প্রক্রিয়া, যেমন- সংবেদন, চিন্তন, বিচারকরণ, অনুমান, সমস্যা সমাধান প্রভৃতির উন্নত ব্যবহারে সমর্থ করে তোলে। বুদ্ধি হল অমূর্ত বা বস্তু বিবর্জিত চিন্তন করার ক্ষমতা।


চতুর্থত, বুদ্ধির সাহায্যে ব্যক্তি সম্বন্ধ নির্ণয়মূলক চিন্তন করে থাকে। অর্থাৎ, দুই বা দুইয়ের বেশি বস্ত্র, ব্যক্তি বা ধারণার মধ্যের পারস্পরিক সম্বন্ধ নির্ণয় করার সময় বুদ্ধির সাহায্য নিয়েই সমন্বয় সাধন করা হয়। এক্ষেত্রে সম্বন্ধ যত জটিল প্রকৃতির হয়, বুদ্ধির অপরিহার্যতাও তত বেশি হয়।


পঞ্চমত, ব্যক্তির মানসিক প্রক্রিয়ার দ্রুততার সাথে বুদ্ধির গভীর সংযোগ বিদ্যমান। বিচারকরণ, অনুমান, সংবেদন এ মানসিক প্রক্রিয়াগুলোর দ্রুত সম্পাদন নির্ভর করে বুদ্ধির উপর।


ষষ্ঠত, বুদ্ধির সাহায্যেই ব্যক্তি কোন বিষয় বা বস্তু থেকে অপ্রয়োজনীয় অংশ বা গুণকে বাদ দিয়ে কেবলমাত্র প্রয়োজনীয় অংশ বা গুণকে আলাদা করতে পারে । মনোবিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন পৃথকীকরণ।


সমসাময়িক মনোবিজ্ঞানীগণ বুদ্ধিকে আবার দু'ভাবে ভাগ করেছেন। যথা :


১. তাৎক্ষণিক বুদ্ধি : তাৎক্ষণিকভাবে আমরা যখন কোন সমস্যার সমাধান করতে পারি, তখন তাকে তাৎক্ষণিক বুদ্ধি বলে। তাৎক্ষণিক জ্ঞানটাই হল উপস্থিত বুদ্ধি । যেমন- মেডামের লেকচার আমরা বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে লিখে থাকি।


২. বাঁধানো বুদ্ধি : আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমরা বিভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জন করছি। এ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আমাদের বুদ্ধির যে Develop হচ্ছে তাকেই বাঁধানো বুদ্ধি বলে। যেমন- প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাই স্কুল ও কলেজের শিক্ষা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ভর্তি হয়েছি। আমরা স্কুল ও কলেজে শিখে এসেছি কিভাবে টিচার-ম্যাডামের সাথে আচরণ করতে হবে। তখন সে ধরনের আচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার ম্যাডামদের সাথে করব। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের তাৎক্ষণিক কমে যায়। কিন্তু বাঁধানো বুদ্ধি বাড়তে থাকে।


Robert Sternberg intellingence কে আরও তিন ভাগে ভাগ করেছেন। তাঁর মতে, আমাদের বুদ্ধি ত্রিভুজ আকৃতির। যথা :


১. উপাদানমূলক বুদ্ধি: যেটা আমরা Cogritive বা Higher mental process এ ব্যবহার করছি তাকে বলা হয়। Componential intelligence. যেমন- চিন্তা, স্মৃতি, স্বপ্ন ইত্যাদি। Higher mental process এ intelligence এর দ্বারা করে থাকি।


২. বর্ণনামূলক বুদ্ধি : প্রতিদিনের ঘটনায় তাৎক্ষণিক বুদ্ধি ঘটিয়ে আমরা সমস্যার সমাধান করছি, যা দ্বারা তাকে বর্ণনামূলক বুদ্ধি বলা হয় ।


৩. অভিজ্ঞতামূলক বুদ্ধি : Experience use করে আমরা যে সমস্যার সমাধান করি তাকে অভিজ্ঞতামূলক বুদ্ধি বলা হয়। এখানে পূর্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সমস্যার সমাধান করা হয়।


ওয়েসলারের বুদ্ধি অভীক্ষা তত্ত্ব আলোচনা কর হল : 

আমেরিকার বলিভিউ হাসপাতালের খ্যাতনামা মনোচিকিৎসক ড. ডেভিড ওয়েসলার বুদ্ধির উপর বিশেষ করে বয়স্কদের বুদ্ধি পরিমাপ করার জন্য কয়েকটি অভীক্ষা তৈরি করেন (১৯৫৫)। এ অভীক্ষাগুলোকে একসাথে "Wechsler Bellevue intelligence Scale' বলা যেতে পারে Wechsler Adult intelligene scale (WAIS) নামে এর একটি উন্নত সংস্করণ তৈরি করা হয়। তাছাড়া গঠন পদ্ধতির ও বিষয়বস্তুর দিক থেকে একই রকম আরেকটি অভীক্ষা শিশুদের উপযোগী। করে তৈরি করা হয় । শিশুদের জন্য নির্মিত অভীক্ষাটিকে বলা হয় Wechsler intelligence scale for childern (WISC)

এখানে বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষা করতে গিয়ে প্রথম সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। এখানে যাদের পরীক্ষা করেছেন তাদের অধিকাংশ ছিল কম শিক্ষিত ও প্রাপ্তবয়স্ক। কাজেই তিনি দেখলেন যে, এদের জন্য এমন একটি অভীক্ষার দরকার হয়, যার সাহায্য এদের বুদ্ধি পরিমাপ করা যায়। যেখানে তিনি ভাষামূলক অভীক্ষাকে বাদ দেন নি। ১৯৫৮ সালে প্রাপ্তবয়স্কদের বুদ্ধি পরিমাপের উদ্দেশ্যে এক নতুন অভীক্ষা প্রণয়ন করেন। নতুন অভীক্ষাটি হল Wechsler Adult intelligence Scale Revised. এটাকে সংক্ষেপে WAIS-R বলা হয়। মনোবিজ্ঞানী Feldman এর মতে, WAIS-R হল, "A Test of intelligence ansisting of verbal and non revbal performence sections, providing a relatively precise picture of persons specific abilities." ওয়েসলারের অ্যাডাল্ট ইন্টেলিজেন্স স্কেলটি বহুল ব্যবহৃত একটি ব্যক্তি ভিত্তিক বুদ্ধি অভীক্ষা। এ স্কেলের ১১টি উপঅভীক্ষা আছে। প্রত্যেকটি উপঅভীক্ষার সমস্যাগুলো সহজ থেকে কঠিনের দিকে সাজানো হয়েছে। এ উপঅভীক্ষাগুলোকে দু'টি ভাগে ভাগ ক. ভাষামূলক অভীক্ষা ও খ. কৃতি অভীক্ষা।

করা যায়। যথা:

ক. ভাষামূলক অভীক্ষা : ভাষামূলক অভীক্ষাতে মোট ৬টি উপঅভীক্ষা আছে। যথা :

১. সাধনার তথ্য,

২. বোধ শক্তি,

৩. স্মৃতি পরিসর,

৪. গাণিতিক চিন্তন,

৫.সাদৃশ্য এবং 

৬. শব্দার্থ।

খ. কৃতি অভীক্ষা : কৃতি অভীক্ষাতে মোট ৫টি অভীক্ষা আছে। যথা :

১.ছবি সাজানো,

২.ছবি পূরণ,

৩.ব্লক ডিজাইন (নমুনা তৈরি),

৪.বস্তু শ্রেণীবদ্ধকরণ (অবজেক্ট এসেম্বলি) এবং

৫.সংখ্যা ও প্রতীক ব্যবহার।

ওয়েসলারের অভীক্ষার একটি বৈশিষ্ট্য হল যে, এতে প্রত্যেকটি উপঅভীক্ষা বা ভাগের ফল পৃথকভাবে নির্ণয় করা যায়। ফলে কোন ব্যক্তির কোন বিশেষ ক্ষমতায় কতখানি পারদশির্তা আছে তা নির্ণয় করা যায়। তাছাড়া ভাষাগত ও কর্মসম্পাদন বা কৃতি অভীক্ষাগুলোর ফল “কভাবে সংকলন করা যায় এবং প্রত্যেকটির জন্য পৃথক বুদ্ধ্যঙ্ক পাওয়া যায়। এতে বিভিন্ন ভাষাভাষী লোকদের বুদ্ধি নির্ণয় করা সহজ । কারণ ভাষাগত অভীক্ষায় তারা ভালো ফল করতে পারে না। কিন্তু সম্পাদনী অভীক্ষাগুলোতে ভালো করতে পারে। সুতরাং, ভাষাগত দারিদ্র্যের জন্য তাদের বুদ্ধির অবমূল্যায়নের ভয় থাকে না।

ওয়েসলারের বুদ্ধি অভীক্ষায় বুদ্ধ্যঙ্ক নির্ণয় করার পদ্ধতি স্ট্যানফোর্ড বিনে পদ্ধতির চেয়ে আলাদা। ওয়েসলার ব্যক্তির সঠিক উত্তরের সংখ্যা গণনা করে সরাসরি মানসিক বয়স নির্ণয় করে না। ওয়েসলার বুদ্ধ্যঙ্ক নির্ণয় করার জন্য স্ট্যান্ডার্ড স্কোর পদ্ধতি বা আদর্শ সাফল্যকে পদ্ধতি ব্যবহার করেন। এ পদ্ধতিতে প্রত্যেক বয়সের লোকদের বিরাট সংখ্যার উপর অভীক্ষা প্রয়োগ করে গড় অংক ও পরিমিত বিচ্যুতি নির্ণয় করা হয় এবং প্রত্যেক সাফল্যাঙ্কের জন্য একটি আদর্শ সাফল্যাঙ্ক নির্ণয় করা হয়। এভাবে নির্ণীত আদর্শ সাফল্যাঙ্ককে বুদ্ধ্যঙ্ক বলা হয়। এভাবে বুদ্ধ্যঙ্ক নির্ণয়ের মাধ্যমে ওয়েসলার অভীক্ষা নির্ণয় করা হয়।


উপসংহার : 

ওয়েসলার বয়স্ক অভীক্ষা (WAIS) এবং শিশু অভীক্ষা (WISS-R) দু'টিই বর্তমান সময়ে অত্যন্ত জনপ্রিয়। হয়ে উঠেছে। এর কারণ হল এ যে, অভীক্ষাটি প্রয়োগ করে বৃদ্ধির উপাদানসমূহের পৃথক পৃথক পরিমাপ পাওয়া যায় এবং একটি সামগ্রিক বুদ্ধ্যঙ্ক নির্ণয় করা যায়। উভয় অভীক্ষার যথার্থতা ও নির্ভরযোগ্যতার মান সন্তোষজনক।

 

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!