রোমান সভ্যতার বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর।

admin

 

ভূমিকা : সভ্যতা উৎকর্ষতা ও বিকাশের দিক থেকে রোমান সভ্যতা পৃথিবীর ইতিহাসে এক অভাবনীয় উন্নতি সাধন করে। পৃথিবীর খুব কম জাতিই রোমানদের মত এত বেশী উন্নতি সাধন করেছিল। রোমানরা তাদের সভ্যতা বিকাশে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল আইন তৈরি ও আইন প্রণয়নে। রোমানরা সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখতে পেরেছিল। রোমানরা তাদের রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য চমৎকার একটি সরকার ব্যবস্থায় প্রবর্তন করেছিল।

রোমান সভ্যতার বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর।


রোমান সভ্যতার বৈশিষ্ট্য : রোমান সভ্যতার যে সকল বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছিল তা নিম্নরূপ-

১. ভৌগোলিক অবস্থান : ইতালির টাইবার নদীর তীরে রোমান নামক সভ্যতার গোড়াপত্তন ঘটেছিল গ্রিক সভ্যতার স্বর্ণযুগ শেষ হওয়ার আগেই। ভূমধ্যসাগরের মধ্যে অঞ্চলে এ্যাপেনাইন উপদ্বীপ তথা ইতালির উপদ্বীপকে আশ্রয় করেই এ সভ্যতার উদয় ঘটেছিল। এটিই ইতিহাসে রোমান সভ্যতা নামে পরিচিত ।


২. পূর্ব পুরুষ : প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ অনুযায়ী উচ্চ পুরোপলীয় যুগের মানুষ ইটালি অঞ্চলে বসবাস করত। সম্ভবত প্রাচীনতম কালে ক্রোমেনিয়ন মানুষের বংশ ধররা বসতি গড়ে তুলেছিল। বোঞ্জ যুগে আলপসের উত্তর পার্বত্যাঞ্চল থেকে সর্ব প্রথম ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর জনগণের আগমন ঘটে। ধারণা করা হয় এই ইন্দো-ইউরোপীয় গোষ্ঠীয় তাদের পূর্ব পুরুষ ।


৩. শহর ও ঘরবাড়ি : টাইবার নদীর উত্তর ও দক্ষিণে এরা বসতি গড়ে তুলেছিল। তাদের শহর ছিল পাহাড়ের উপর। শহরগুলো ছিল দেয়াল দ্বারা ঘেরা এবং এক পাশে থাকত সমাধি ক্ষেত্র। আধুনিক ইতালীয় রীতিতেও এ ধারা অব্যাহত রয়েছে।


৪. লিখন পদ্ধতি : গ্রিক বর্ণমালার উপর ভিত্তি করে রোমানরা একটি নিজস্ব বর্ণনারীতি গড়ে তুলেছিল। কিন্তু তাদের লিপির যথেষ্ট নমুনা আবিষ্কৃত হয়নি এবং তার পূর্ণাঙ্গ পাঠোদ্ধারও সম্ভব হয়নি।


৫. সরকার ব্যবস্থা : রোমান সরকার ব্যবস্থা দুটি কার্যকারি পরিষদ ছিল। যথা- সিনেট সভা ও জনগণের পরিষদ। এই পরিষদ রাজাকে সহায়তা দান করতো। সিনেটের সদস্যরা অভিজাতদের থেকে নির্বাচিত করা হতো। রাজা একাধারে সামরিক, ধর্মীয় ও আইনের ক্ষেত্রে প্রধান ছিলেন।


৬. সামাজিক জীবন : রোমান সামাজিক জীবনে শ্রেণি বিভাগ ছিল। রোমানদের প্রধান পেশা ছিল কৃষি। কৃষিতে প্রথার অস্তিত্ব ছিল। ভূস্বামীরা এই দাসদের দিয়ে তাদের জমি চাষ ও ফসল উৎপাদন করাত। যুদ্ধ আর বিপ্লবে ব্যস্ত থাকায় সামাজিক ক্ষেত্রে তাদের কোনো উন্নয়ন সাধন ঘটেনি।


৭. অর্থনৈতিক জীবন : রোমানরা কৃষির পাশাপাশি তারা বাণিজ্য ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল। রোমান কারিগর, কৃষিজীবী, পেশাজীবীদের সমন্বয়ে একটি গিল্ড তৈরী করত। এই সময় সমাজে ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠান তৈরী গড়ে ওঠেছিল।


৮. সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় জীবন : রোমান সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তেমন কোনো অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। গ্রিক ও রোমানদের সাংস্কৃতির উৎস অভিন্ন থাকায় এই যুগে রোমান ধর্মে গ্রিক ধর্মের ছায়াই খুঁজে পাওয়া যায়। রোমান দেবতাদের মধ্যে গ্রিক দেবতাদের প্রতি মূর্তিই প্রতিফলিত হয়েছে।


৯. শিল্পের বিকাশ : রোমান সমাজে শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল। তারা শিল্প কারখানা মাধ্যমে রোমের অর্থনীতিকে আরো বেশী সুদূরপ্রসারী করেছিল। তারা এই সকল শিল্প কারখানায় বস্ত্র, আসবাবপত্র, যুদ্ধাস্ত্র, বোঞ্জ ও লৌহজাত দ্রব্য তৈরি করত।


#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!