এথেন্সের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় পেরিক্লিসের অবদান মূল্যায়ন কর।

admin

 

ভূমিকা : পেরিক্লিস এথেনীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে খ্রিস্টপূর্ব ৪৬০ থেকে ৪৩০ অব্দে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। তার মৃত্যু পর্যন্ত পেরিক্লিস বারংবার এথেন্সের সেনাধ্যক্ষ ও রাষ্ট্রীয় কর্ণধারের পদে পুনর্নির্বাচিত । তিনি একাধারে সুবক্তা, সুদ্যক্ষ রাজনীতিবিদ এবং যোগ্য সেনাপতি ছিলেন। তার শাসনামলে এথেন্সে ব্যাপক ভাবে গণতন্ত্রের চর্চা ও বিকাশ সাধিত হয়। তিনি শিক্ষা, শিল্প ও বিজ্ঞানের একজন পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ইতিহাসে সমধিক খ্যাতিমান ছিলেন।


এথেন্সের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় পেরিক্লিসের  অবদান মূল্যায়ন কর।


পেরিক্লিসের অবদান : পেরিক্লিস যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হন তখন তিনি রাষ্ট্রের বহুবিধ সংস্কার সাধন করেছিলেন। নিম্নে তার শাসনামলের বহুবিদ সংস্কার সম্পর্কের অবদানসমূহ আলোচনা করা হল -


১. রাষ্ট্রীয় কাজে নাগরিকদের অংশগ্রহণ : সরকার প্রধান হিসেবে পেরিক্লিস উদার নীতি গ্রহণ করেন। তার মতে বিবেকবান মানুষদের জাতীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করা উচিৎ। তাই পেরিক্লিস তার সরকার ব্যবস্থায় বিভিন্ন অংশে রাষ্ট্রের সাধারণ মানুষদের নিয়োগ দান করেন। তার সময় এথেনীয় নাগরিকদের প্রশাসনিক, আইন বিচার বিভাগে সহজ অংশগ্রহণের ব্যবস্থা ছিল।


২. সরকার ব্যবস্থা : পেরিক্লিসের সময় সরকার ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিককরণ করা হয়েছিল। তিনটি শাখার উপর সরকার ব্যবস্থার ভার ছিল যথা- ইক্লেশিয়া, বোল, হেলিয়া। তিনি এসেম্বলি ও পাঁচশত সদস্য বিশিষ্ট সংসদের সকলকে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মুক্ত আলোচনার জন্য উৎসাহিত করেন।


৩. নৌবহর গঠন : এথেনীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পেরিক্লিসের অন্যতম সাফল্য হচ্ছে নৌবহর গঠন। পেরিক্লিস তার শাসনামলে একটি সুগঠিত নৌবহর গঠন করেছিলেন। কারণ ৪৬০ থেকে ৪০৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত পর পর তিনটি গোলাপনেসীয় যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যদিও এই যুদ্ধে এথেন্সের পরাজয় ঘটেছিল। কিন্তু তিনি তার নৌবহরকে অনেক বেশী সুসজ্জিত করেছিলেন।


৪. বিচার ব্যবস্থার সংস্কার : বিচার ব্যবস্থার সংস্কার পেরিক্লিসের যুগে একটি অন্যতম সাফল্য । এখানে তিনি বিচার ব্যবস্থাকে আরো বেশী ঢেলে সাজান। অর্থাৎ বিচার ব্যবস্থায় বিচারককে স্বাধীন রাখা হয়। সাধারণ নাগরিক সংগঠন এসেমরি প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিয়োগ ও বিচার বিভাগের উপর নিয়ন্ত্রণের অধিকার লাভ করেন।


৫. শিল্প, সাহিত্য ও বিজ্ঞানের বিকাশ : পেরিক্লিসের নেতৃত্বে এথেনীয় সরকার বাণিজ্য, শিল্প, সাহিত্য ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এথেন্সের সমৃদ্ধির প্রতি দৃষ্টি দিয়েছিলেন। তিনি বড় বড় সৌধ গড়ে তোলেন। এসময় নাট্যকার দার্শনিকের আবির্ভাব ঘটেছিল।


৪. গণতান্ত্রিক সংস্কার : পেরিক্লিসের উল্লেখযোগ্য অবদান হল গণপরিষদ গঠন । এই গণ পরিষদের অধিবেশন প্রতি দশদিন পর পর অনুষ্ঠিত হতো। এতে গ্রীসের সর্ব সাধারণ অংশগ্রহণ করতে পারত। এই গণপরিষদে প্রত্যেকে তার সুগঠিত মতামত পেশ করতে পারতেন। এ পরিষদকে শাসন, আইন, বৈদেশিক সকল বিষয়ে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেয়া হয়। এই পরিষদে যে কোনো নাগরিক তার প্রস্তাব পেশ করতে পারত। এ প্রস্তাব সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে গৃহীত হতো।


৭. ৫০০ সদস্যের বিশেষ পরিষদ গঠন : পেরিক্লিস গণপরিষদ ছাড়াও ৫০০ সদস্য নিয়ে একটি বিশেষ পরিষদ গঠন করেন। এরা গোপন ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচিত হতো। এই পরিষদের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রিত হতো গণপরিষদ দ্বারা। আইন প্রয়োগ কিভাবে হচ্ছে তা তদারকিই হচ্ছে এ পরিষদের কাজ।


৮. জেনারেল পরিষদ গঠন : গণপরিষদ, পরিষদ ছাড়াও পেরিক্লিস একটি জেনারেল পরিষদ গঠন করেন। এই পরিষদের সদস্য সংখ্যা ছিল ১০ জন। এই পরিষদের নির্বাচন ও কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রিত হতো গণপরিষদ দ্বারা। পেরিক্লিস ৩০ বছর এই পরিষদের সভাপতি ছিলেন।


৯. থিয়েটার তহবিল গঠন : প্রাচীন গ্রিসে থিয়েটার ছিল খুবই প্রিয় বিনোদনের মাধ্যম। এই থিয়েটার বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানের যোজন করা হতো প্রতি বছর থিয়েটারে নাট্য উৎসব পালন করা হতো। এবং সেরা নাটককে পুরস্কৃত করা হতো।


১০. অন্যান্য সংস্কার : এথেনীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পেরিক্লিস বহবিধ সংস্কার সাধন করেছিলেন। তিনি তার শাসনামলে উদার নীতি গ্রহণ করে ছিলেন যাতে করে সমাজে গণতন্ত্র চর্চা ও বিকাশ লাভ করে।


উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পেরিক্লিসের যুগে এথেন্সে সবচেয়ে বেশী উন্নয়ন সাধিত হয়। এর পূর্বে কোনো শাসক তার মত এত বেশী উন্নয়ন করতে পারেননি। এর ফলে তার যুগকে ইতিহাসে স্বর্ণযুগ বলা হয়। তার এই বহুবিধ সংস্কারের মাধ্যমে তিনি পৃথিবীর ইতিহাসে অমর হয়ে আসেন। তিনি প্রশাসন ব্যবস্থায় সকল নাগরিকের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছিলেন। তিনি যে গণপরিষদ গঠন করেছিলেন তাতে সাধারণ মানুষ অংশ গ্রহণ করা ও মতামত পোষণ করতে পেরেছিল।


#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!