নব্য প্রস্তর যুগ কি? নব্য প্রস্তর যুগের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।

admin

ভূমিকা : প্রাগ-ঐতিহাসিক যুগের শেষ ধাপ নব্য প্রস্তর যুগ বা নবোপলীয় যুগ নামে পরিচিত। মধ্য প্রস্তর যুগ শেষ হবার পর নতুন পাথরের যুগের সূচনা। এর আগের যুগের ভোঁতা, অমসৃণ পাথরের বদলে নব্য প্রস্তর যুগে মানুষ ধারালো, মসৃণ ও সূক্ষ্ম নানা রকম হাতিয়ার ও অস্ত্র তৈরি করে। এসব অস্ত্র যে শুধু শিকারের কাজে লাগত তা নয়, দৈনন্দিন অন্যান্য কাজেও তা ব্যবহার করা হতো। এ যুগে ব্যবহৃত হাতিয়ারগুলো উন্নত হবার কারণে প্রত্নতত্ত্ববিদগণ এ যুগকে নব্য প্রস্তর যুগ নামকরণ করেছেন।


নব্য প্রস্তর যুগ কি? নব্য প্রস্তর যুগের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।


 নব্য প্রস্তর যুগ ঃ নব্য প্রস্তর যুগ ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছে তা বলা কঠিন। তার ধারণা মতে, পুরনো প্রস্তর যুগ শেষ ও মধ্যপ্রস্তর যুগের পর্বের ১০ হাজার বছর পর ৭০০০/৬০০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে নব্য প্রস্তর যুগের সূচনা। তবে অধিকাংশের মতে এ যুগের সূচনা ৬০০০/৫০০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে। তবে সব অঞ্চলে এ যুগের সূচনা একই সময়ে হয়নি। ইউরোপ, আফ্রিকা, মিশর, ভারতীয় উপমহাদেশ প্রভৃতি অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে এর যাত্রা শুরু হয়। মিশরে ৫০০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে মধ্য প্রস্তর যুগের সূচনা হয় বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। এই সময় থেকে ২/১ একটি অঞ্চল ব্যতীত ৩,৫০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে তামা যুগের সূচনায় নব্য প্রস্তর যুগের পরিসমাপ্তি ঘটে।

কিভাবে সুইপার সোশ্যাল ( Swiper social) যুক্ত হয়ে টাকা ইনকাম করবেন

 নব্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য : নবোপলীয় যুগ কতকগুলো আবিষ্কার ও নতুনত্বে বৈশিষ্ট্য মণ্ডিত ছিল। নিম্নে তা আলোচনা করা হলোঃ


১. কৃষি ব্যবস্থা ঃ প্রকৃত পক্ষে কৃষির সূচনায় মানুষের জীবনে একটি উল্লেখযোগ্য বিপ্লব। নবাপলীয় যুগে মানুষ খাদ্য সংগ্রহকারী থেকে পরিণত হয় খাদ্য উৎপাদনকারী সমাজে। তবে, কোথায়, কবে, কখন কৃষি উৎপাদনের সূচনা হয়েছে তার সঠিক তথ্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে ধারণা করা হয়, মহিলাদের হাতেই কৃষির সূচনা। পুরুষরা শিকার ও ফলমূল সংগ্রহে ব্যস্ত থাকত। এ সময় নারীরা গৃহের কাজ ও ফলমূল সংগ্রহ করতো। ফলে তারা বীজ মাটিতে পুতে রাখতো। ধারণা করা হয়, এ ব্যবহার মাধ্যমেই নবপলীয় যুগে কৃষির উৎপত্তি হয়েছে।


২. পশু পালন :  মানব সভ্যতার উন্মেষে কৃষির উৎপত্তির মতোই পশু পালন গৃহস্থ কাজে পরিণত হয়। বনের পশুকে পোষ মানিয়ে কিভাবে তা গৃহ পালিত করার চিন্তা মানুষের মাথায় এসেছিলো তা জানার উপায় নেই। ধারণা করা হয় কুকুর ছিল নব্যপালীয় যুগের মানুষের প্রথম গৃহপালিত প্রাণী। কারণ কুকুরকে পোষ মানাতে হয়নি। সে নিজের প্রয়োজনে মানুষের সঙ্গী হয়েছে। ধারণা করা হয়, যেসব পশুগুলো পোষ মানত যেগুলো তারা জবাহ না করে পোষ মানিয়ে দুর্যোগকালীন ব্যবহার করতো। এ সমস্ত প্রাণীর মধ্যে গরু, ঘোড়া, হাতি, মহিষ, ছাগল ছিল অন্যতম।


৩. গৃহ নির্মাণ ঃ পুরানো প্রস্তর যুগে মানুষ গাছে অথবা গুহায় কিংবা মাটির গর্তে বসবাস করত। নব্যপ্রস্তর যুগের গোড়ার দিকে একই অবস্থা বিরাজমান ছিল। কিন্তু নব্যপ্রস্তর যুগে মানুষ গোষ্ঠীবদ্ধ জীবন শুরু করলে, কৃষিকাজ শুরু হবার পর বাড়ি-ঘর নির্মাণ করতে শেখে। তারা দু'ধরনের ঘর নির্মাণ করে পাথর দিয়ে ও গাছের কাঠ দিয়ে। তবে অধিকাংশ নব্য প্রস্তর যুগের মানুষ নদী, সমুদ্র, হ্রদ ও তৃণভূমি এলাকাতে গৃহনির্মাণ করত। কারণ এখানে সহজেই খাদ্য সংগ্রহ ও কৃষিকাজ করা যেত।


৪. মসৃণ হাতিয়ার ব্যবহার ঃ নব্য প্রস্তর যুগের সূচনা হয় মসৃণ হাতিয়ারকে কেন্দ্র করে। হাতিয়ার তৈরিতে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। হাতিয়ারে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের জন্যই এ যুগতে নব্য প্রস্তর যুগ নামকরণ করা হয়েছে। নব্য প্রস্তর যুগে ব্যবহৃত উন্নত হাতিয়ারের মধ্যে তীর, ধনুক, চাকু, কাস্তে, কুড়াল, কুদাল, জাতি, বর্শা অন্যতম। তারা কৃষি কাজের জন্য কোদাল, জাঁতি ও নিড়ানি এবং মাটি গর্ত করা লাঠি ব্যবহার করতো। তবে এ যুগের শেষ দিকে লাঙ্গলের ব্যবহার শুরু হয়।


৫. মৃৎপাত্র ব্যবহার ঃ মৃৎশিল্প কৃষি ব্যবস্থারই অনিবার্য ফল। মূলত প্রথম অবস্থায় তারা কোনো মাপবিহীন কাদা- মাটি দিয়ে ছোট ছোট মৃৎপাত্র বানাতে পারতো। চাকা আবিষ্কার হবার পর মাটির পাত্র তৈরিতে একে ব্যবহার করা হয়। এর ফলে একদল লোক মৃৎশিল্প তৈরিতে জড়িত হয়ে পড়েছিল। প্রথমে রোদে শুকিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে তা ব্যবহারযোগা করা হতো । এ সময় এগুলো খাদ্য রান্না ও খাবার পাত্র হিসেবে তা ব্যবহার করা হতো।


৬. চাকার আবিষ্কার ঃ চাকার আবিষ্কার নব্য প্রস্তর যুগের উল্লেখযোগ্য কৃর্তি। কুমারের চাকা, গাড়ির চাকা প্রভৃতি যে চক্রাকার গতিতে কাজে লাগান হয় তা পরবর্তী সব সভ্যতার অন্যতম ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে। সেই সুদূর প্রাচীন যুগে যে উদ্দেশ্যে চাকার আবিষ্কার হয় তার উদ্দেশ্য আজ অবধি রয়েছে। ঢাকা আবিষ্কারের ফলে মানুষের গতি ও মৃৎ শিল্পের অগ্রগতি বেড়ে যায়। এক স্থান থেকে অন্যত্র যেতে ঢাকা ছিল বিশেষ সহায়ক।


৭. আগুনের ব্যাপক ব্যবহার : পুরনো প্রস্তর যুগেই মানুষ আগুনের আবিষ্কার ও ব্যবহার জানতো। কিন্তু নিজের বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে আগুন জ্বালানোর পদ্ধতি তারা নব্য প্রস্তর যুগেই শিখেছিল। এ সময় কাঠে কাঠে ঘষে ও পাথরে পাথরে ঘষে আগুন জ্বালাতে শেখে। এ সময় আগুনের ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়।


৮. অলংকার তৈরি ঃ নবা প্রস্তর যুগেও অলংকারের ব্যবহার হতো। খাদ্য সংগ্রহের উন্নিতা থাকায় মানুষ সাজ সজ্জায় নিমজ্জিত হয়। এ সময় নারী ও পুরুষ উভয়ই শরীরে উল্কি ব্যবহার করতো। মেয়েরা হাতে, পায়ে, গলায় পুথির মালা পরতো। তারা হাড় ও শিং দিয়ে উন্নত অলংকার বানাতে পারত। মিশরীরা চোখের রোগ থেকে বাঁচতে সুরমা ব্যবহার করতো।


৯. বয়ন শিল্প : নব্য প্রস্তর যুগে মিশর ও পশ্চিম এশিয়ায় যে গ্রামের জীবনের পরিচয় পাওয়া যায় তার অন্যতম নিদর্শন হলো বয়ন শিল্প। এসব এলাকায় প্রথম শনের সুতা দিয়ে কাপড় বুনানো হতো, প্রথমে তারা শনের আঁশ পাকিয়ে সুতা তৈরি করত। এসব সুতা দিয়ে লিলেন কাপড় তৈরি হতো।


১০. পালতোলা নৌকা : নব্য প্রস্তর যুগে যেমন মানুষ পশু দিয়ে মাল টানাতো, তেমনি একইভাবে তারা নদীতে পাল তোলা নৌকার আবিষ্কার করে। এ সময় তারা বাতাসের গতি-প্রকৃতি জেনে নিয়ে নদীতে নৌকার পাল তুলতো। ৩০০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দেই মিশরে নৌকার প্রচলন শুরু হয়। এ সময় ভূমধ্যসাগর ও আরব সাগরেও পাল তোলা নৌকা চলাচল করতো।


উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, এভাবে নব্য প্রস্তর যুগ তাদের প্রয়োজনে নানা মৌলিক আবিষ্কার সমৃদ্ধিশালী। হয়। কৃষি, পশুপালন, ঘর-বাড়ি নির্মাণ, চামড়া, বস্ত্র তৈরি, আগুন ও চাকার ব্যবহারে তারা যথেষ্ট পারদর্শিতার পরিচয় দেয়। এ যুগের সমাজ থেকেই মানুষ সমাজ, ধর্ম, রাষ্ট্র নিয়ে চিন্তা শুরু করে।


#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!