প্রত্যক্ষণের সুবিন্যস্তকরণে জৈবিক উপাদান আলোচনা কর।

admin

ভূমিকা :

আমরা কোন না কোন পরিবেশে বাস করি এবং এ পরিবেশকে আমরা জানি। একথা সত্য যে, সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান বহুলাংশে ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত সংবেদনের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু একথাও সমপরিমাণে সত্য, পরিবেশ পরিবেশ সম্পর্কে আমাদের অভিজ্ঞতার মধ্যে ইন্দ্রিয় সংবেদন ছাড়াও অনেক কিছু আছে। আমরা যখন কোন বস্তু দেখি, তখন আমরা প্রকৃতপক্ষে কতকগুলো আলোক সংবেদন পাই। কিন্তু আমরা এতেই তুষ্ট থাকি না। আমরা বলি যে, একটি বস্তু দেখা যাচ্ছে এবং সে বস্তুটির নামকরণও করি। বস্তুটির যাবতীয় গুণ ও বৈশিষ্ট্য আমাদের ইন্দ্রিয়ের নিকট ধরা পড়ে না। এসব গুণ ও বৈশিষ্ট্য প্রত্যক্ষণের সাহায্যে সরবরাহ করা হয় ।


প্রত্যক্ষণের সুবিন্যস্তকরণে জৈবিক উপাদান আলোচনা কর।

জৈবিক উপাদান :

যেসব উপাদান ব্যক্তির কারণে সৃষ্টি হয় বা ব্যক্তি থেকে উদ্ভূত হয়ে প্রত্যক্ষণকে প্রভাবিত করে, তাকে ব্যক্তিনিষ্ঠ বা জৈবিক উপাদান বলে। ব্যক্তির ঝোক বা প্রবণতা, চাহিদা, আবেগ, মূল্যবোধ প্রভৃতি বিভিন্ন জৈবিক উপাদান প্রত্যক্ষণের উপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে।


নিচে এগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হল :

ক. ঝোঁক বা প্রবণতা : কোন বস্তু বা ঘটনাকে কোন বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রত্যক্ষণ করাকে ঝোঁক বা প্রবণতা বলে । ঝোঁক বা প্রবণতা সকলের মধ্যেই রয়েছে। সাধারণত, নির্দেশ বা উপদেশ দিয়ে এ প্রবণতা তৈরি করে প্রত্যক্ষণের উপর তার প্রভাব নিরূপণ করা হয়।


এক্ষেত্রে Shipola (1935) এর পরীক্ষণটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি তার পরীক্ষণে পাত্রদেরকে দু'টি দলে ভাগ করেন। তিনি একদলকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, তারা প্রাণীর নামযুক্ত শব্দ দেখবে এবং অপর দলকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, তারা ভ্রমণ সম্পর্কিত শব্দ দেখবে। এরপর তিনি কতকগুলো অর্থহীন শব্দ টাচিসটোস্কোপ যন্ত্রের সাহায্যে দ্রুত গতিতে পরীক্ষণপাত্রদের দেখান ।


এ পরীক্ষণের ফলাফল নিচে দেওয়া হল :



ফলাফলে দেখা যাচ্ছে যে, নির্দেশের ফলে পরীক্ষণপত্র এদের মধ্যে যে ঝোঁক বা প্রবণতা তৈরি হয়েছিল তার ফলেই অর্থহীন শব্দকে একদল (প্রাণীদল) প্রাণীর নাম হিসেবে এবং অন্যদল (ভ্রমণ দল) ভ্রমণ সম্পর্কিত শব্দ হিসেবে প্রত্যক্ষণ করেছিল। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, ঝোঁক বা প্রবণতা প্রত্যক্ষণকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে।


খ. চাহিদা : ব্যক্তির চাহিদা তার প্রত্যক্ষণকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, আতিয়া এবং মনির দু'জনে ভাইবোন। ওরা শহরে যাচ্ছে একটি শাড়ি ও একটি জিন্সের প্যান্ট কিনতে। রাস্তায় চলতে চলতে কাউকে একটি ভালো শাড়ি পরিহিত দেখলে আতিয়া উৎফুল্ল হয় এবং তা প্রকাশ করে। পার্শ্বে উপবিষ্ট মনির তখন নির্বিকার সে খুঁজছে কে কোন মডেলের জিন্সের প্যান্ট পরেছে। শাড়ির প্রতি তার কোন খেয়াল নেই। কারণ দু'জনের চাহিদা দু'ধরনের।


আবার, কলেজ ফেরত ছাত্রের কাছে রাস্তার ধারের কোন বস্ত্রই তেমন আকর্ষণ করে না। যতটা রাস্তার ধারের দোকানে ঝুলানো সাগর কলা আকর্ষণ করে। Sanford (1937) ক্ষুধার্ত এবং ক্ষুধার্ত নয় এমন পরিক্ষণপাত্র নিয়ে একটি পরীক্ষণ পরিচালনা করেন। তিনি তাদের কতকগুলো অসম্পূর্ণ শব্দ দিয়ে তা সম্পূর্ণ করতে বলেছেন। বেশিরভাগ ক্ষুধার্ত পরীক্ষণপাত্রই অসম্পূর্ণ শব্দগুলোকে খাবারের সাথে সম্পর্কযুক্ত শব্দে হিসেবে সম্পূর্ণ করে। যেমন- 'ME' এ অসম্পূর্ণ শব্দকে তারা MEAT TO MEAL হিসেবে সম্পূর্ণ করেছে। কিন্তু ক্ষুধার্ত নয় এমন পরীক্ষণপাত্ররা শুধু খাদ্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত শব্দ দিয়েই অসম্পূর্ণ শব্দ সম্পূর্ণ করে নি।


গ. আবেগ : ব্যক্তির প্রত্যক্ষণ তার আবেগ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তাকে। আবেগের দ্বারা প্রভাবিত হলে ব্যক্তি পক্ষপাত দুষ্ট দুষ্ট হতে পারে। ভাবাবেগের দ্বারা পরিচালিত হলে কালো কুৎসিৎ রমণী ও আকর্ষণীয় বলে মনে হয়। আবার আবেগের কারণেই সুন্দরী ও গুণবতী রমণীকেও অসুন্দর বলে মনে হতে পারে এবং ঐ রমনীর সাথে সম্পর্কযুক্ত সকলকেই খারাপ বলে মনে হবে। আবেগের সময় বা ভালো মনে হয় । আবেগ প্রশমিত হলে তা ভালো নাও লাগতে পারে। তাই দেখা যাচ্ছে যে, আবেগ দ্বারা প্রত্যক্ষণ প্রভাবিত হয়ে

থাকে।


ঘ. মূল্যবোধ : ব্যক্তির মূল্যবোধ দ্বারা তার প্রত্যক্ষণ বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকে। কোন ঘটনাকে একজন সৌন্দর্য্যের পিয়াসী যে দৃষ্টিকোণে দেখবে, একজন ধার্মিক বা একজন আধুনিক ব্যক্তি সেভাবে দেখবে না। গোঁড়া ধার্মিক পরিবারে পর্দা প্রথার যেমন কড়াকড়ি, তেমনি আধুনিক পরিবারে পর্দাপ্রথা একটি হাস্যকর ব্যাপার। মূল্যবোধের কারণেই দৃষ্টিভঙ্গির এ ধরনের তারতম্য ঘটে। মূল্যবোধ কিভাবে প্রত্যক্ষণকে প্রভাবিত করে তা পোস্টম্যান, ব্রুনার ও ম্যাকগিনিসের (1948) পরীক্ষণে প্রমাণিত হয়েছে। তাঁরা প্রথমে অলাপোর্টভারনন মূল্যবোধ অভীক্ষার সাহায্যে পরিক্ষণপাত্রের মূল্যবোধ নিরূপণ করেন। তারপর তাঁদের কতকগুলো শব্দ অতি দ্রুত গতিতে দেখানো হয়। দেখা যায় যে, পরীক্ষণ তার মূল্যবোধের সাথে পরিচিত শব্দগুলো অতি সহজেই চিনতে পারে।


উপসংহার :

উপরিউক্ত আলোচনার পরিশেষে বলা যায়, প্রত্যক্ষণ প্রত্যেক মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সঠিক প্রত্যক্ষণের মাধ্যমে মানুষ যে কোন বিষয়ের গভীরে পৌঁছাতে পারে। তাই প্রত্যক্ষণের ক্ষেত্রে অন্য কোন বিষয় ক্রীয়াশীল না হওয়াই উত্তম। কারণ প্রত্যক্ষণের সময় যদি মন অন্যদিকে ধাবিত হয় তাহলে প্রত্যক্ষণ সঠিক না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই প্রত্যক্ষণ অত্যন্ত সুচারু হওয়া দরকার।



#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!