ভূমিকা:
পালি ভাষার উৎপত্তি এবং ক্রম বিকাশ সম্বন্ধে গবেষণা করতে হলে আমাদের বিবেচনা করতে হবে যে পালি ভাষা মাগধী ভাষার উপর প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব।জেমস,ইলউইল, চিলড্রেনস প্রভৃতি পন্ডিগণ সকলেই একমত যে মাগধীই পালির ভিত্তি।সুতরাং পালির নাম মাগধীই হওয়া উচিত।গৌতম বুদ্ধের সময়ে ভারতে ষোল প্রকার প্রাদেশিক ভাষা প্রচলিত ছিল।পালি ছিল মগধের উপভাষা এবং এই উপভাষায় গৌতম বুদ্ধ তার ধর্ম প্রচার করেন। এইভাবে বৌদ্ধ ধর্ম পালি ভাষার ভিত্তি রচনা করেন।
পালি এবং বৈদিক ভাষার সম্পর্ক:
পালি ভাষা মিশ্র লক্ষণ বিশিষ্ট।বেদ সমুহ মিশ্র লক্ষণযুক্ত তাই প্রসিদ্ধ বৈয়াকরন পানিণী এর মার্জিত, প্রণালীবদ্ধ এবং সাহিত্যিক রুপ প্রদান করতে চেষ্টা করেন।বৈদিক ভাষার মার্জিত রুপকে সংস্কৃত বলে।
সংস্কৃত শব্দ সংস্কৃত এবং বৈদিক ভাষার মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করে। বৈদিক ভাষার সর্বসাধারন নাস ছন্দ।সংস্কৃতে এই ছন্দের প্রনালীবদ্ধ রুপ আছে।ভাষাবিজ্ঞানের একজন ছাত্র জানে যে ে উপভাষাসমূহ ভাষার সহিত ক্রম বিকশিত হয়। সেকালে মগধ এবং কোশলের উপভাষাকে পালি বলা হতো।আমরা বলতে পারি যে পালি এবং সংস্কৃত বৈদিক ভাষার উপর ভিত্তি করে ক্রমশ বিকাশ প্রাপ্ত হয়েছে। এই ক্রমঃ বিকাশ বিভিন্ন অবস্থার মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল।তাই এই ক্রমঃ বিকাশের ধারাও ছিল ভিন্ন।
বৈদিক ভাষার শব্দ থেকে আমরা পালি এবং সংস্কৃত শব্দের রুপ তুলনা করতে পারি। আমরা দেখি যে পালি এখনও বৈদিক ভাষার বৈশিষ্ট্য রক্ষা করে আসছে। পূর্বেই বলা হয়েছে যে,পালি এবং বৈদিক ভাষা মিশ্র লক্ষণযুক্ত।বৈদিক ভাষা মিশ্র লক্ষনের জন্য সমধিক প্রসিদ্ধ। পক্ষান্তরে সংস্কৃত এইরুপ লক্ষণ দৃষ্ট হয় না।কারন এতে ব্যাকনের কঠোর নীতিসমূহ ব্যবহৃত হয়েছে।
আরো পড়ুন : বিশুদ্ধি মার্গ শব্দের অর্থ ব্যাখ্যা কর।
পক্ষান্তরে পালি নমনীয় চরিত্র বিশিষ্ট। এটা সংস্কৃত অপেক্ষা বৈদিক ভাষার নিকটবর্তী। বৈদিক ভাষায় আমরা দেবেভি এবং কন্নভি ইত্যাদি শব্দ দেখতে পাই। এই প্রকার শব্দ সংস্কৃতিতে লুপ্ত হয়েছে।কিন্তু এইসব শব্দ পালিতে এখনও রক্ষিত হয়েছে।বৈদিক ভাষায় উত্তম পুরুষ বহুবচনে 'রে' প্রত্যয় ব্যবহৃত হয়। কিন্তু সংস্কৃতে এটা দৃষ্ট হয় না।কিন্তু পালিতে 'রে' প্রত্যয় 'পচ্চরে' 'ভাসরে' প্রভৃতি শব্দে দৃষ্ট হয়। বৈদিক অম্ব শব্দ পালিতে অম্ব রুপে রয়ে গেছে। বৈদিক এবং পালি ভাষার মধ্যে সাদৃশ্য এবং বৈশাদৃশ্য উভয়টি আছে।বৈশাদৃশ্যের চেয়ে সাদৃশ্যই বেশি।কারন উভয় ভাষায় মিশ্র লক্ষণ বিশিষ্ট এবং উভয় ভাষাই স্বাভাবিক পরিবেশের মধ্যে ক্রমঃ বিকশিত হয়েছে।
উপসংহার:
সংস্কৃতের ন্যায় সর্বপ্রথমে কোন পালি ব্যাকরন রচিত হয়নি।সুতরাং স্বাভাবিকভাবে প্রকৃতির উপর নির্ভর করে পালি ভাষা বদ্ধিত হয়েছে। পঞ্চম অথবা ষষ্ঠ শতাব্দীর পূর্বে আমরা কোন পালি ব্যাকরন দেখতে পাইনি।প্রসিদ্ধ টীকাকার অশ্বঘোষের টীকা থেকে আমরা এর প্রকাশ পাই। কচ্চায়ন পালি ব্যাকরন " সবচেয়ে প্রাচীন।এটা সপ্তম শতাব্দীতে রচিত হয়েছিল।প্রকৃতপক্ষে বৈদিক এবং পালি ভাষা প্ৰায় অভিন্ন পরিবেশে বিকশিত হয়েছিল। গৌতম বুদ্ধের মহিমায় পালি ভাষার মর্যাদা লাভ করেছিল।