বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ভূমিকা আলোচনা

admin

ভূমিকা :

অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ। বস্তুত বাণিজ্যিক ব্যাংক ক্রমে সমাজের অর্থনৈতিক কার্যকলাপের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে এবং প্রায় সর্বত্রই বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যস্থতা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এ কারণে আজ উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়াতেও বাণিজ্যিক ব্যাংকের অবস্থান অতি গুরুত্বপূর্ণ ।


বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ভূমিকা আলোচনা


বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ভূমিকা :

নিম্নে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ভূমিকা আলোচনা করা হল :


১. মূলধন গঠন :

মূলধন গঠন যে কোন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। আর এ মূলধন গঠনে বাণিজ্যিক ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বাণিজ্যিক ব্যাংক তার আমানতের উপর সুদ প্রদান করে জনসাধারণকে সঞ্চয়ে উৎসাহিত করে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যক্তিগত সঞ্চয়কে একত্রিত করে বাণিজ্যিক ব্যাংক দেশের পুজি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।


২. সঞ্চয়ে আগ্রহ সৃষ্টি :

বাণিজ্যিক ব্যাংক জনসাধারণের আমানতের উপর সুদ প্রদানের ফলে দেশবাসীদের মধ্যে সঞ্চয়ের উৎসাহ তৈরি হয়। আর এ সঞ্চয় থেকে সুদ পাওয়া যায় বলে ব্যাংক জনসাধারণকে মিতব্যয়ী হতে উৎসাহ দেয়। সুতরাং ব্যাংক জনসাধারণের মধ্যে সঞ্চয়ের আগ্রহ সৃষ্টি করে দেশে মূলধন গঠনের পথ সুগম করে।


৩. শিল্পোন্নয়নে সাহায্য করে :

দেশের দ্রুত শিল্পোন্নয়নের ক্ষেত্রেও বাণিজ্যিক ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সন্দেহাতীতভাবে প্রশংসার দাবিদার। বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহকে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করে শিল্পোন্নয়নে সহায়তা করে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহের চলতি মূলধনের একটি বৃহৎ অংশ সরবরাহ করে থাকে ।


৪. সঞ্চয় সংগ্রহ :

সুদ পাওয়ার আশায় সঞ্চয়কারীরা নিজ নিজ সঞ্চয় ব্যাংকে জমা রাখে। এর ফলে বিভিন্ন ব্যক্তির সঞ্চয় একত্রিত হয়ে বিরাট আকার ধারণ করে। বাণিজ্যিক ব্যাংকের কার্যক্রম না থাকলে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যক্তিগত সঞ্চয়সমূহকে একত্রিত করা সম্ভব হতো ন৷ ৷ ফলশ্রুতিতে মূলধনও গঠন করা যেত না।


৫. অভ্যন্তরীণ ব্যবসায় বাণিজ্যের সম্প্রসারণ :

বাণিজ্যিক ব্যাংক ব্যবস্থা দেশের ব্যবসায় বাণিজ্যের সম্প্রসারণেও সহায়তা করে। বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ দেশের ব্যবসায় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি ঋণ সরবরাহ করে থাকে। এভাবে বাণিজ্যিক ব্যাংক দেশের ব্যবসায় বাণিজ্যের সম্প্রসারণে সহায়তা করে ।


৬. উৎপাদনে সহায়তা :

যে কোন উৎপাদনকারীকে কোন দ্রব্য উৎপাদন করতে গেলে উৎপাদন প্রক্রিয়ার শুরু থেকে ব্যয় বহন করতে হয়। আর উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিচালনা করার জন্য ঋণের প্রয়োজন হয়। এ জাতীয় ঋণের সরবরাহ বাণিজ্যিক ব্যাংক করে থাকে। এভাবে দেশের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সহায়তার মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।


৭. অর্থনৈতিক পরিকল্পনা :

বাণিজ্যিক ব্যাংক দেশের পুঁজিবাজার সংস্কার, প্রাতিষ্ঠানিক ও জনসম্পদের উন্নয়ন, তদারকি ও বাস্তবায়নে সহায়তা প্রদান করে। ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে সরকার অর্থনীতির উপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করে। সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সমগ্র ব্যাংক ব্যবস্থাকে উন্নয়নের স্বার্থে ব্যবহার করে।


৮. মূলধনের গতিশীলতা বৃদ্ধি :

মূলধনের গতিশীলতা বৃদ্ধিতেও বাণিজ্যিক ব্যাংকের ভূমিকা বিশেষ প্রশংসার দাবিদার। বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে সহজেই একস্থান হতে অন্যস্থানে পুঁজির স্থানান্তর সম্ভব। এর ফলে পুঁজির গতিশীলতা ও উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ।


৯. ভোগ বৃদ্ধি :

শুধুমাত্র দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদনের ক্ষেত্রেই নয়, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে মোটরগাড়ি, বাড়ি প্রভৃতি স্থায়ী ভোগ্যপণ্য ক্রয় করা যায়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, ভোগের ক্ষেত্রেও বাণিজ্যিক ব্যাংকের ভূমিকা অপরিহার্য ।


১০. কৃষি উন্নয়নে সাহায্য করে :

বাংলাদেশের অর্থনীতি বহুলাংশে কৃষিনির্ভর। তাই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হল কৃষি উন্নয়ন। বাণিজ্যিক ব্যাংক কৃষি উন্নয়নের ক্ষেত্রেও কার্যকর ভূমিকা রাখে। কাজেই আজকাল বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কৃষি ক্ষেত্রেও ঋণের সংস্থান করছে। সুতরাং দেখা যায়, বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে বাণিজ্যিক ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।


১১. বৈদেশিক বাণিজ্যিক সম্প্রসারণ :

বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও বাণিজ্যিক ব্যাংকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৈদেশিক বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন এবং বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়বিক্রয়ের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংক দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের সম্প্রসারণে সহায়তা করে।


১২. ঋণপত্রের প্রচলন :

ব্যাংক নানা প্রকার ঋণপত্রের প্রচলন করে ঋণ সম্প্রসারণের ক্ষেত্র প্রসারিত করে। ব্যাংক না থাকলে চেক, ড্রাফ্ট, হুন্ডি ইত্যাদি প্রচলন করা সম্ভব হতো না। অথচ বর্তমান সমাজে এসব ঋণপত্রের অস্তিত্ব বাদ দিয়ে আমরা অর্থনৈতিক জীবন কল্পনাও করতে পারি না।


১৩. মুদ্রা ব্যবস্থার স্থিতিস্থাপকতা :

ব্যাংক দেশের মুদ্রা ব্যবস্থায় স্থিতিস্থাপকতা প্রদান করে। জরুরি প্রয়োজন দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ ব্যাংক সৃষ্টি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি করা যায় এবং প্রয়োজনবোধে একে হ্রাস করাও চলে ।


উপসংহার :

উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংক তার মক্কেল এবং দেশ ও অর্থনীতির স্বার্থে বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করে থাকে। আন্ত র্জাতিক ব্যবসায়-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও এ ব্যাংক প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করে থাকে। তাই বলা যায় যে, স্বাধীনতা উত্তরকালে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঋণদানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।



#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!