বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থার কাঠামো আলোচনা কর।

admin

ভূমিকা :

অর্থ ও ঋণের লেনদেনে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানসমূহ ও ব্যক্তিবর্গের সমাহারকে একটি দেশের আর্থিক খাত বলা হয়। বাংলাদেশের আর্থিক খাতে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংক ব্যবস্থা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণের বাজার রয়েছে। বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংক ব্যবস্থার মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অধীনে সরকারি ও বেসরকারি খাতে কিছু দেশীয় ও বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান হয়েছে। এসব আর্থিক প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংকসমূহ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পরামর্শদান ও প্রয়োজনমতো ঋণ প্রদান করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থার কাঠামো আলোচনা কর


বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংক ব্যবস্থার কাঠামো :

বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংক কাঠামোর মধ্যে কেন্দ্রীয় বাংকের অধীনে রাষ্ট্রায়ত্ত, বেসরকারি ও বৈদেশিক বাণিজ্যিক ব্যাংকসহ কতিপয় বিশেষায়িত ব্যাংক কর্মরত রয়েছে। নিম্নে বংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংক কাঠামোর একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হল :


১. বাংলাদেশ ব্যাংক :

পৃথিবীর প্রতিটি দেশের একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক রয়েছে। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাকের নাম 'বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং এটি এদেশের সমগ্র ব্যাংক ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু। ১৯৭২ গালে বাংলাদেশ ব্যাংক অধ্যাদেশ অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও ব্যাংকসহ সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত রয়েছে। এ ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাধারণ কার্যাবলি সম্পাদন করা ছাড়াও সরকারের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায় সরকারের আর্থিক নীতি প্রণয়ন বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করে।


কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশে নোট প্রচলনের একমাত্র অধিকারী। বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন। এ ব্যাংক বাংলাদেশের মুদ্রা বাজারের অভিভাবক ও পরিচালক। সরকার কর্তৃক মনোনীত সদস্য নিয়ে একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হয়। এ পরিচালনা পর্ষদ দ্বারা সরকারি মালিকানাধীন বংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত হয়। তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক সরকার ও অন্যান্য ব্যাংকের ব্যাংকার ঋণ নিয়ন্ত্রণ, ঋণদানের শেষ শ্রয়স্থল, বৈদেশিক বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা রক্ষা করা, সরকারের আর্থিক পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করা প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে।


২. রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ :

বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের মধ্যে আছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বিদেশি ব্যাংক ছাড়া দেশের সকল বাণিজ্যিক ব্যাংককে রাষ্ট্রায়ত্ত করা হয় এবং পাকিস্তানি আমলের ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক গঠিত হয়। এদের মধ্যে বর্তমানে দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংককে পুনরায় বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।


তাছাড়া রূপালী ব্যাংককে বেসরকারিকরণের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত হতে চলেছে। সুতরাং বর্তমানে এখনও পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত খাতে চারটি বাণিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে। এগুলো হল : ১. সোনালী ব্যাংক, ২. অগ্রণী ব্যাংক, ৩. রূপালী ব্যাংক ও ৪. জনতা ব্যাংক। এ চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শাখা স্থাপন ও বিভিন্ন চিহ্নিত খাতে ভর্তুকি প্রদত্ত দানে এ ব্যাংকগুলোর অবদান আছে।


৩. দেশীয় বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক :

বেসরকারি খাতে ঋণদান ব্যবস্থাকে জোরদার করার জন্য ১৯৮৩ সালে প্রথমে ছয়টি সরকারি ব্যাংক স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়। ১৯৮৪ সালে পূবালী ব্যাংক ও উত্তরা ব্যাংক বেসরকারিকরণ করা হয়। বর্তমানে বেসরকারি খাতে ৪৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংক কর্মরত রয়েছে। তার মধ্যে ৩৯টি বাংলাদেশী এবং ৯টি বিদেশি ব্যাংক কর্মরত রয়েছে। ছাড়া কতিপয় ব্যাংক অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।


৪. বিশেষায়িত ব্যাংক :

বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থার মধ্যে যে বিশেষায়িত ব্যাংক আছে সেগুলোকে উন্নয়ন অর্থায়ন প্রতিষ্ঠান বলা । এ বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক, বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা, আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লিমিটেড এবং গ্রামীণ ব্যাংক। ১৯৮৩ সালে স্থাপিত গ্রামীণ ব্যাংক দরিদ্র গ্রামীণ মানুষ (বিশেষ মহিলা) কে ক্ষুদ্র ঋণ দেয়। গ্রামীণ ব্যাংক ছাড়া অন্যান্য সকল বিশেষায়িত ব্যাংক ভর্তুকি প্রদত্ত ঋণ বণ্টন । বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো সরকার ও বিদেশি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান থেকে তহবিল পেয়ে থাকে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এরা পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা পায় ।


উপসংহার :

উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, ব্যাংক ব্যবস্থার রাষ্ট্রীয়করণ এবং বিরাষ্ট্রীয়করণ উভয়ের পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি রয়েছে। তাই বর্তমানে আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে ব্যাংক ব্যবস্থা পুরোপুরি রাষ্ট্রীয় খাতে পরিচালনা করা সম্ভব নয়, তেমনি বজাতীয়করণ জাতির জন্য কল্যাণজনক হতে পারে না। দেশে একটি সুষ্ঠু ও শক্তিশালী ব্যাংক ব্যবস্থা গড়ে তোলার স্বার্থে বেসরকারি গতে ব্যাংক প্রতিষ্ঠা উৎসাহিত করতে হবে। তবে ব্যাংক ব্যবস্থার পুরোপুরি বিরাষ্ট্রীয়করণ সমর্থন যোগ্য নয়। বাংলাদেশে যে সকল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক রয়েছে, সেগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও ব্যাংকের দ্রুত বিকাশ ঘটুক এটাই কাম্য ।


#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!