চক্ষুপাল কে ছিলেন? কর্মের বিপাক অচিন্তনীয়” এ বক্তব্যের স্বপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন কর

admin

 ভূমিকা:

চক্ষুপাল থের নামক এক ভিক্ষুর নামেই উপাখ্যানটির নাম চক্ষুপাল বন্ধু। এটি ধম্মপদ গ্রন্থের যমকবর্গে সন্নিবেশিত হয়েছে। ধম্মপদ গ্রন্থটি সূত্র পিটকের খুদ্দক নিকায়ের অন্তর্গত। এতে যতগুলো ধম্মপদ শ্লোক রয়েছে তৎসমুদর সবই ভগবান বুদ্ধ কর্তৃক ভাষিত। এতে বুদ্ধ শিষ্য-শিষ্যা কিংবা ঋষি-গৃহপতি অথবা দেব-ব্রক্ষা ভাষিত কোন বানী নেই।


চক্ষুপাল:

সে সময় শ্রাবস্তীতে মহাসুবর্ন নামে এক ধনী ব্যক্তি বাস করতেন।মহাপাল (চক্ষুপাল স্থবির) ও চুল্লপাল নামে তার দুই পুত্র ছিল।বুদ্ধের অবস্থানের কারনে শ্রাবন্তী সকলের মহাতীর্থে পরিনত হল।মহাপাল ভগবানের নিকট ধর্মশ্রবন করে সংসারের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠলেন এবং ছোটভাই চুল্লপালকে পৌত্রিক ধন সম্পত্তির পুরো অধিকার দিয়ে ভিক্ষু ধর্মে দীক্ষিত হলেন।মহাপাল অরহত্ব ফল লাভের আশায় নিজের চক্ষু চিকিৎসা বাদ দিয়ে কঠোরভাবে সাধনা করে অরহত্ব ফল লাভ করলেন।কিন্তু তার চোখ দুটো নষ্ট হয়ে গেল।এরপর থেকে তার নাম হল চক্ষুপাল স্থবির।


আরো পড়ুন: বুদ্ধঘোষ কে ছিলেন? একজন অর্থকথাকার হিসেবে বুদ্ধঘোষের মূল্যায়ন কর।


চক্ষুপালের স্থবির লাভ এবং অর্হত্বফল লাভ:

চক্ষুপাল ভগবানের নিকট ধর্মশ্রবন করে সংসারের প্রতি বিতৃঞ্চা হয়ে উঠলেন এবং ছোট ভাইকে সকল পৈত্রিক ধন সম্পত্তির পুরো অধিকার প্রদান করে ভিক্ষুধর্মে দীক্ষিত হলেন।আচার্য ও উপধ্যায়ের নিকট পাঁচ বছর ধর্ম বিনয় শিক্ষা করার পর বর্ষাবাস শেষে তিনি ভগবানের নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করেন,ভন্তে আপনার শাসনে কয়টি ধূর?ভগবান উত্তরে বললেন,দুটো ধূর।গ্রন্থধূর আর বিদর্শন ধূর।ত্রিপিটক শিক্ষা লাভ করে ধারন,কখনও শিক্ষাদানের নাম গ্রন্থধূর।লঘুভোজী হয়ে নিজ দেহের ক্ষয়-ব্যয়ভাব অবলোকন করে অদম্য উৎসাহে স্মৃতি সম্প্রজ্ঞানের মাধ্যমে অর্হত্ব লাভ করার নাম বিদর্শন ধূর।


তারপর চক্ষুপাল অর্হত্বলাভের উদ্দেশ্যে ভগবানের নিকট থেকে কর্মস্থান গ্রহন করে ষাটজন ভিক্ষুসহ এক প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে বর্ষাবাসব্রত আরম্ভ করলেন।সে সময়ে একজন চিকিৎসক তাদের প্রয়োজনে বিনামূল্যে ঔষধ দানে চিকিৎসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।


সেই ভিক্ষুগণ দৃঢ় পরাক্রমের সাথে ধ্যান-ধারনা আরম্ভ করলেন।স্থবির মহাপাল শয়ন ও নিদ্রা ত্যাগ করে কঠোর তপস্যা শুরু করলেন। এক মাস গত হতে না হতেই তার চক্ষুরোগ শুরু হল।তার চক্ষু হতে অবিরত জল পড়তে লাগল।ভিক্ষা চর্যায় বের হবার সময় ভিক্ষুগণ তার চোখে জলধারা দেখে উক্ত চক্ষু চিকিৎসককে সংবাদ দিলেন।চিকিৎসক এসে ঔষধ দিয়ে বিছানায় শুয়ে তা প্রয়োগ করতে বললেন।কিন্তু ব্রত ভঙ্গের ভয়ে স্থবির তা না করে সেই চোখে ঔষধ দিতে লাগলেন।কিন্তু তার চোখ দুটো নষ্ট হয়ে গেল।তারপর থেকে মহাপালের নাম চক্ষুপাল স্থবির।


কর্মের বিপাক অচিন্তনীয়:

একদিন কয়েক জন ভিক্ষু ভগবান বুদ্ধের দর্শনে শ্রাবস্তীতে এসেছিলেন।তারা বুদু ও অন্যান্য মহাশ্রাবকগণকে বন্দনা করে চক্ষুপাল স্থবিরের বিহারে এসে উপস্থিত হলেন। এর আগের দিন সেখানে বৃষ্টি হয়েছিল।স্থবিরের চংক্রমন স্থানে কীটাদির আনাগোনা হয়। স্থবিরের চংক্রমনের সময় এসব কীট তার পাদপিষ্ট হয়ে মারা যায়। ভিক্ষুগণ মৃত কীটগুলো দেখে স্থবিরের প্রতি ভূল ধারনা পোষণ করে ভগবানের নিকট গিয়ে একথা নিবেদন করলেন।ভগবান বললেন, অর্হৎগণের বধ চেতনা নেই, এতে কোন অকুশল সাধিত হয় না।অর্হত্বফল লাভ করা সত্ত্বেও চক্ষুপাল স্থবিরের চোখ হারানোর কারন ভিক্ষুগণ ভগবানকে জিজ্ঞেস করলেন।ভগবান তখন চক্ষুপাল স্থবিরের অতীত জন্মের অকুশল কর্মের কাহিনী বর্ণনা করলেন।


বহু পূর্বে বারানসীতে একজন চক্ষু চিকিৎসক ছিলেন।ভাল টিকিৎসক হিসেবে তার নাম চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ল।একদিন এক মহিলা রোগী চক্ষু রোগের জন্য ঐ চিকিৎসকের নিকট আসেন।তিনি এ রোগে বহুদিন ধরে কষ্ট পাচ্ছিলেন।তাই সহসা আরোগ্য লাভের আশায় তার নিকট মহিলা একটি অবান্তর প্রতিজ্ঞা করে বসলেন।


আরো পড়ুন: পালি শব্দের অর্থ কি? পন্ডিতদের মতামতসহ ব্যাখ্যা কর।


আরোগ্য লাভ করতে পারলে পূত্র কন্যাসহ তার দাসীত্ব করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলেন। কিন্তু আরোগ্য পরে মহিলা সেই প্রতিশ্রুতির কথা অস্বীকার করলে চিকিৎসক বিষ মাখানো ঔষধ দিয়ে তার চোখ দুটো নষ্ট করে দিলেন। তখন সেই চিকিৎসকই বর্তমানের এই চক্ষুপাল স্থবির। পূর্বকৃত পাপের ফলে বর্তমান জন্মে তার চোখ দুটো নষ্ট হয়ে গেল।ভগবান তখন ভিক্ষুগণকে উপদেশ দেবারকালে নিম্নোক্ত বললেন-


মনোপুব্বঙ্গমা ধম্মো মনোসেটঠা মনোমযা

মনসা চে পদুটঠেন ভাসতি বা করোটি বা

ততো নং দুকখমন্বেতি চক্কং'বহতো পদং'তি


অর্থাৎ,মন ধর্মসমূহের পূর্বগামী মনই শ্রেষ্ঠ,ধর্মসমূহ মনোময়।কলুষিত মনে কোন কথা বললে কিংবা কার্য করলে মকটের চাকা যেমন ভারবাহী পশুকে অনুসরন করে তদ্রুপ দুঃখ মানুষের অনুসরন করে। গাথা শেষে বহু ভিক্ষুর বিরজ বিমল ধর্মচক্ষু উৎপন্ন হল।


উপসংহার:

বৌদ্ধ ধর্ম বস্তু প্রধান ধর্ম নয়, মন প্রধান ধর্ম। এটা ত্রিপিটকের সর্বত্রই প্রমাণ রেখে বুদ্ধের ধর্ম দেশিত হয়েছে।মানুষ ষড়িন্দ্রিয় দ্বারা কাজ কর্ম করে।তৎমধ্যে মনই যে কোন কাজের প্রাধান্য বিস্তার করে।মনই প্রানীকে তির্যক, অসুর,নিরয়,স্বর্গ ও ব্রহ্মালোক সর্বত্র নিয়ে যায়।কেননা মনই কর্মকারক।তাই দূষিত মনে কেউ কোন কাজ করলে তার ফল জন্ম-জন্মান্তরে ভোগ করতে হয়।

 

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!