উদনবন্ধু অবলম্বনে রাজা উদয়ন বাসুলত্তো প্রনয় কাহিনী বর্ণনা কর ।

admin

 

প্রারম্ভিকা:

সুত্ত পিটকের খুদ্দক নিকায়ের অন্তর্গত ধম্মপদ বিশ্ব সাহিত্যে অতুলনীয় গ্রন্থ।ধম্মপদ ২৫ টি বর্গেবিভক্ত।তন্মধ্যে অগ্নমাদ বগগো ২য় বর্গ।বুদ্ধবানীর মধ্যে এই অপ্রমাদ বর্গের একটিবিশিষ্ট স্থান আছে এবং ইহার একটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে।তাই ধম্মপদটঠকথা হতেঅপ্রমাদ বর্গের অন্তর্গত উদনবন্ধু সম্পর্কে আলোচনা করা গেল৷





রাজা উদয়নের প্রতি রাজা চন্দ্র প্রদ্যোতের লোভ,শত্রুতা:

উজজয়নী নগরে চন্দ্র প্রদ্যোত রাজার রাজত্ব রাজা একদিন উদান হতে আসার সময় তার সম্পত্তি অবলোকন করে যে-অন্য কোন রাজার এরুপ সম্পত্তি আছে কি? এরুপ বলাতে প্রজারা বললেন-আসাদের রাজার সম্পত্তির চাইতে উদয়ন রাজার সম্পত্তি বেশি।


তাইচন্দ্রপ্রদ্যোত রাজা উদয়ন রাজাকে ধরার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়।কিন্তু তাকে ধরা এত সহজ নয়।কারন তিনি হস্তীকান্তা নামে এক প্রকার বিদ্যা জানেন।এই হস্তীকান্তা বীনা বাজালে হস্তীরা পলায়ন করে ও ধরে ফেলে।তাই তার মত হস্তী বাহন সম্পন্ন কেহ নাই।


কাষীময় মন্ত্র হস্তী:

রাজা চন্দ্রপ্রদ্যোত রাজা উদয়নকে ধরার জন্য একটি কাষীময় মন্ত্র হস্তী তৈরি করে বাহিরে বস্ত্র কেষ্টন করে তার রাজ্যে নিকটবর্তী এক পুস্করিনীর তীরে ছেড়ে দিলেন।সেই হস্তীর ভিতর সাতজন দিক সেদিক চংক্রমন করতেছিল।রাজা উদয়ন খবর পেয়ে হস্তীকে ধরার জন্য সুসৈন্য নিয়ে বাহির হলেন।


উদয়নের বন্দী:

এদিকে রাজা চন্দ্রপ্রদ্যোত গুপ্তচরের মাধ্যমে রাজা উদয়নের আসার কথা জানতে পেরে মধ্যস্থান শূণ্য রেখে উভয় পার্শ্বে সৈন্য রাখেন।রাজা উদয়ন তা না জানায় হস্তীকে অনুসরন করে। হস্তীর ভিতরে পুরুষেরা দ্রুতবেগে যখন হস্তী চালনা করে তখন রাজা উদয়ন অশ্বারোহন করে।এদিকে চন্দ্র প্রদ্যোতের সৈন্যরা আগে থেকেই রাজা উদয়নকে ধরার জন্য উৎপেতে ছিল।


হস্তীকান্তা বীনা বাজান এবং অনুসরন করেন।তার সৈন্যরা তাকে অনুসরন করার ব্যর্থ হওয়ায় তেমন সুযোগে রাজা প্রদ্যোত সৈন্যরা তাকে ধরে ফেলে এবং তাকে বন্দী করে নিয়ে মহারাজা চন্দ্রপ্রদ্যোতের হস্তে সমর্পন করেন।মহারাজ চন্দ্রপ্রদ্যোত মহারাজ উদয়নকে ধরে এনে তার কারাগারে আবদ্ধ করে শত্রু জয় করেছে ভেবে তিন চারদিন পর্যন্ত জয়োল্লাসে নিমগ্ন রইলেন।


তৃতীয় দিন অতীত হলে মহারাজ উদয়ন কারাবাসীকে জিজ্ঞাসা করিলেন,ওহে তোমাদের মহারাজ তোমাদের মহারাজ এখন কোথায়? প্রহরী বলল তিনি এখন শত্রু জয় করেছে ভেবে জয়োল্লাসে দিনাতিপাত করছেন।তা শুনে উদয়ন গর্বিতম্বকে একটু বিরক্ত ভাবে বললে- তোমাদের রাজা স্ত্রী লোকের ন্যায় এরুপ কান্ড কারখানা করছেন কেন?অনিত্র রাজাকে ধরে এনে মেরে ফেলা নয়ত ছেড়ে দেওয়া উচিত নয় কি?


তিনি আমাকে এখানে বসিয়ে রেখে নিজে মজায় উল্লাসে আছেন। প্রহরীরা গিয়ে রাজাকে একথা নিবেদন করল।তিনি গিয়ে রাজা উদয়নকে বললেন সত্যই কি তুমি এইরুপ কথা বলেছ?উদয়ন গর্বিত সুরে বললেন'- হ্যাঁ,মহারাজ সত্য। চন্দ্রপ্রদ্যোত ভাব বুঝে নম্রতার সাথে উত্তর দিলেন-তোমাকে ছেড়ে দেব শুনেছি তোমার কাছে এক মন্ত্র আছে তা আমাকে শিখাও।

রাজা উদয়ন বললেন শিখাব, তবে আমাকে নমস্কার করে শিখতে হবে।এটা শুনে চন্দ্রপ্রদ্যোত মৌখিক ক্রোধ প্রকাশ করে বললেন,কি!আমি তোমাকে নমস্কার করব?নমস্কার না করলে শিখাব না।চন্দ্রপ্রদ্যোত বললেন, তাহলে তোমার প্রান দন্ড দেব।উদয়ন বললেন আপনি দেহের অধিকারী প্রানের নয় ।


রাজা উদয়ন ও বাসুলদত্তার সাক্ষাত:

রাজা প্রদ্যোত কিভাবে সেই মন্ত্র শিখা যায় তাই চিন্তা করতে লাগলেন।তাই তিনি অন্যদের মাধ্যমে শিখিয়ে শিখবে বলে মনস্থির করলেন।নমস্কার করে শিক্ষা গ্রহণ করলে অন্য কাহাকে দিবেন কি? হ্যাঁ মহারাজ।তাহলে আমাদের ঘরে একজন কুঁজি আছে।সে পর্দার ভিতরে থাকবে তুমি পর্দার বাহিরে থেকে মন্ত্রটা শেখাবে।


তথাস্তু মহারাজ!সে কুঁজি আ খোড়া হোক সেই নমস্কার কারীকে দিব।তৎপর প্রদ্যোত কন্যা বাসুলদত্তাকে বললেন,মা একজন শ্রেষ্ঠী শ্বেতকুষ্ঠী অনৰ্ঘ একটা মন্ত্র জানে,সেটা তুমি পর্দার ভিতরে বসে শিখ,সে পর্দার বাহিরে বসে শেখাবে।রাজকন্যা ও উদয়নের যাতে সদভাব না হয় সেজন্য কন্যাকে কুঁজি আর উদয়নকে শ্বেতকুষ্ঠী বানিয়ে বলেছিল।অতঃপর রাজা উদয়ন মন্ত্র শেখাতে লাগলেন।


একদিন কুমারিকে বারংবার বলা সত্ত্বেও মন্ত্রের শব্দ উচ্চারন করতে অক্ষম হেতু হওয়ায় ও রাজা আরে কুঁজি তোর মুখ,ওষ্ঠ,কপাল অতিশক্ত এরুপ বলিস বললেন।এতে রাজকুমারী ক্রদ্ধ হয়ে বললেন-"আরে দুষ্ট কুঁজি তুমি এরুপ কেন বলতেছ?আমার মত রাজকুমারী কুঁজি কেন হবে?তাই রাজা পর্দা উল্টাইয়া জিজ্ঞেস করে,তুমি কে? আমি প্রদ্যোত রাজার রাজকুমারী আন তুমি কে?আমি উদয়ন রাজা,তোমার পিতা তোমাকে কুঁজি আর আমাকে শ্বেতকুষ্ঠী বলেছিলেন।যাতে আমাদের পরস্পর পরস্পরের সদভাব না হয়।রাজা উদয়ন ও রাজকুমারী বাসুলদত্তার পর্দার ভিতরে তাদের ভাব হল।


বাসুলদত্তা ও রাজা উদয়নের প্রনয়:

পর্দার ভিতর থেকে তাদের ভালবাসার গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠে। সেই থেকে রাজকুমারীর আর সেই মন্ত্র শিক্ষা হয়নি।আর রাজা উদয়নের অনুরোধে সে নগর থেকে পলায়ন করার জন্য তার বাবার কাছে যায়।তার বাবা জিজহেস করলেন মন্ত্র শিক্ষা হচ্ছে কিনা।প্রতি উত্তরে সে বলে হচ্ছে।


তিনি তার বাবার কাছে অনুরোধ করে যাতে একটি নগর দ্বার খুলে রাখা হয়যেন তাদের সংকেতে মন্ত্রের আবশ্যকতা গ্রহণে সুবিধা হয়।রাজার পাঁচটা কাহন ছিল। সেখান থেকে নাম্নী হস্তীনীর পৃষ্ঠে আরোহন করে রাজা উদয়ন ও বাসুলদত্তা পরায়ন করল।রাজা উদয়ন তার রাজ্যে উপনীত হয়ে তাকে অগ্র পাটরনীর পদে রাখেন।


রাজা চন্দ্রপ্রদ্যোতের পূর্বযোগ:

বুদ্ধ আবির্ভাবের পূর্বে সে একজনের ভৃত্য ছিল।তখন এক পচ্চেক বুদ্ধ ভিক্ষান্ন সংগ্রহ করার জন্য নগরে প্রবেশ করে। তখন সমস্ত নগরবাসী মারের গ্রাসে ছিল।তাই পচ্চেক বুদ্ধ পিন্ডদান পায়নি।কিন্তু মার ছদ্মবেশ ধারন করে আবার প্রবেশ করতে বলেন।কিন্তু পচ্চেক বুদ্ধ তা অবগত হয়ে প্রবেশ করেননি।


এদিকে ভূত্যের সর্দার পচ্চেক বুদ্ধকে খালি পাত্রে বাহির হতে দেখে তাদের রান্নার জন্য প্রস্তুত ভাত পচ্চেক বুদ্ধকে যেন দেয় সর্দার ভৃত্যকে তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে এবং পূন্যাংশ ভাগ দিবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়।সর্দারের কথামত সেই বুদ্ধের পাত্র আনে এবং পাত্র ভর্তি ভিক্ষান্ন দেয়।


বুদ্ধকে পঞ্চাঙ্গ লুঠিয়ে বন্দনাপূর্বক প্রার্থনা করে আমি যেন এই দ্রুত গমনের ফলে পঞ্চাশ, ষাট,একশত একশত বিশ, যোজন গমন করতে পারি এমন বাহন উৎপন্ন হোক।গমন গমনের সময় আমার শরীর সূর্য্য তেজ দ্বারা তপ্ত হোক।তার ফলে জন্মে জন্মে আমার আদেশ সূর্য্যতেজ ন্যায়


উপসংহার:

অতএব পরিশেষে বলা যায় যে, এই উদানবন্ধুতে রাজা উদয়ন ও বাসুলদত্তার প্রণয় কাহিনী খুব সুন্দরভাবে ব্যক্ত হয়েছে।যা বৌদ্ধদের ইতিহাসে অবিস্মরনীয় ও মর্মস্পর্শী।কেননা এতে প্রতিফলিত হয় রাজা প্রদ্যোত, উদয়ন ও বাসুলদত্তার জীবন কাহিনী।

 

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!