ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার মধ্যে পাঁচটি শাখার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও ।

admin

 

প্রারম্ভিকা:

ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবার স্বয়ং সম্পূর্ণ এবং সুপ্রতিষ্ঠিত।ভারত এবং ইউরোপে যে সকল ভাষা বিদ্যমান সেসব ভাষা একই উৎস থেকে এসেছে এবং এদের মূল একানতুন ও পুরাতন বহু ভাষা এই ভাষা পরিবারের অন্তর্গত।যথা-এশিয়া ও ইউরোপের অধিকাংশ প্রাচীন ভাষা এবং তাদের আধুনিক শাখাসমূহ বৈদিক, প্রাচীন পারাসিক প্রাচীন গ্রীক, ল্যাটিন, প্রাচীন ইটালীয়।

 



এদের ক্রমপরিবর্তিত এবং ক্রমোন্নত আধুনিক রুপ ইংরেজি ফারসী,জার্মান,গ্রীক ইটালিয়ান, রুশ,সুইডিস ইত্যাদি ইউরোপীয় আধুনিক ভাষাসমূহ। এছাড়া বাংলা, হিন্দী, উড়িয়া প্রভৃতি আধুনিক ভাষাসমূহ। ইন্দো-ইউরোপীয় মূল ভাষা থেকে নানা পরিবর্তন এবং পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে এসব ভাষাসমূহ বর্তমান রুপ লাভ করেছে।

 

ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবার:

ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের প্রাচীন প্রাচীন শাখা নয়টি।এই প্রাচীন নয়টি শাখা কোন মূল ভাষা থেকে এসেছে পন্ডিতরা এখনও পর্যন্ত সেই মূল ভাষার সন্ধান পাননি।তবে পন্ডিতরা শাখা গুলির মধ্যে নানাভাবে মিল দেখে কেবল এটুকু বলতে পেরেছেন যে, এই নয়টি শাখা একটি মূল ভাষা থেকে এসেছে।

প্রাচীন নয়টি শাখাসমূহ হচ্ছে-

  1.  কেলটিক শাখা
  2.  ইটালিক শাখা
  3.  জর্মনিক শাখা
  4.  আলবানিয়ান শাখা
  5.  আর্মেনিয়ান শাখা 
  6.  তোখারিয়ান শাখা 
  7.  বালটো-গ্লান্ডিক শাখা 
  8.  গ্রীক শাখা
  9.  ইন্দো-ইরানীয়ান শাখা


এই প্রাচীন নয়টি শাখার মধ্যে পাঁচটি শাখার বিবরন দেখনো হলো-


কেলটিক শাখা: 

এই শাখার ভাষা বহুপূর্বে মধ্য এবং পশ্চিম ইউরোপে বিশেষভাবে প্রচলিত ছিল।পরে ইটালিয় এবং জার্মান ভাষার প্রসারের ফলে এই শাখা ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে লুপ্ত হয়ে যায়। আয়রন্ডের আইরিশ ব্যতীত এই শাখার ভাষাগুলি আজ প্রায় সবই বিলুপ্ত। প্রায় পনেরশ বছর পূর্বে আইরিশ ভাষার জন্ম হয়েছিল।

 

ইটালিক শাখা:

কেলটিকের সঙ্গে ইটালিকের খুব ঘনিষ্ট সম্বন্ধ আছে বলে কোন কোন পন্ডিত এই দুই শাখাকে এক করে ইটালো-কেলটিক শাখা বলতে ইচ্ছা করেন। ইটালিক শাখার একটি উপশাখা ল্যটিউস প্রদেশে ল্যাটিন অন্য উপশাখা উমুব্রিয়ান ও ওসকান আজ বিলুপ্ত কিন্তু খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী থেকেই খুব শক্তিশালী ভাষা হয়ে ওঠে এবং ইউরোপের অনেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।


রোম সাম্রাজ্যের বিস্তারের সাথে সাথে ল্যাটিনও বিস্তার লাভ করে। এজন্য একে রোমের ভাষাও বলা হয়ে থাকে। যেমন প্রাচীন ভারতের ধর্ম,দর্শন,বিজ্ঞান,সাহেত্যের আলোচনায় সংস্কৃত ভাষার জ্ঞান প্রয়েজনীয়তা তেমন ইউরোপের ধর্মচর্চা এবং বিদ্যাচর্চার জন্য ল্যাটিনের জ্ঞান এখনও পর্যন্ত বিশেষ প্রয়োজনীয়।রোম সাম্রাজ্যের বিস্তারের সাথে ল্যাটিন যেমন ইউরোপের নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে তেমনি আবার স্থান বৈচিত্র্য এবং উচ্চারন বৈচিতে রোর ফলে এর নানাবিধ রুপান্তর হল যেমন:ইটালিয়ান, ফ্রেন্স, স্প্যানিশ,রুমানিয়ান প্রভৃতি ভাষাগুলি। 


জর্মনিক ভাষা:

 এই শাখার তিনটি উপশাখা। একটির নাম পূর্ব জার্মানিক। এই উপশাখা আজ প্রায় বিলুপ্ত। এই উপভাষার প্রাচীনতম ভাষার নাম পথিক,তাতে খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে বাইবেলের অনুবাদ হয়েছিল।দ্বিতীয় উপশাখার নাম হলো উত্তর জার্মানিক।এই উপশাখা থেকে নরওয়েজিয়ান সুইডিম,ডেনিস্, ও আইসল্যান্ডের ভাষাও এসেছে।তৃতীয় উপশাখার নাম হলো পশ্চিম জার্মানিক। এর থেকে আধুনিক ইংরেজি জার্মান ও ওলন্দাজ ভাষা জন্ম নিয়েছে। 


প্রসংগত বলা প্রয়োজন বাংলা ভাষার জন্ম আজ থেকে এক হাজার বছর পূর্বে আর ইংরেজি ভাষার জন্ম প্রায় তেরশ বছর পূর্বে।কিন্তু মাত্র তিনশ বছরের বড় ইংরেজি ভাষার স্থান পৃথিবীতে আজ প্রথম আর বাংলার সপ্তম।

 

আলবানিয়ান শাখা:

আড্রিয়াটিক সাগরের পূর্ব তীরের আলবানিয়ার ভাষা এই শাখার অন্তর্গত।তবে এখন এই ভাষার ল্যাটিন,গ্রীক,ইটালিয়ান তুর্কী নানা ভাষার শব্দ মিলে গিয়ে এক একটা বিকৃত রুপ পেয়েছে।

 

আর্মেনিয়াম ভাষা:

এশিয়া মাইনরের আর্মেনিয়া দেশের মূল ভূখন্ডে প্রচলিত আর্মেনিয়ান ভাষা এই শাখার অন্তর্গত।ব্যবসা-বানিজ্যের সূত্রে আর্মেনিয়ানরা দেশ ছেড়ে বাইরে গিয়ে স্রোত স্থাপন করায় আর্মেনিয়ার আশেপাশের কয়েকটি অঞ্চলে ও দেশে আধুনিক আর্মানিয়ান ভাষা প্রচলিত ছিল।

 

তোখারিয়ান শাখা:

এই শাখা আজ থেকে ১৩০০ বছর পূর্বেই লুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। মধ্য এশিয়ার তুর্কিস্থানের যে অংশটি চীনের অধিকারে সেখানকার বালুকাস্তুপের মধ্য থেকে পাশ্চাত্য দেশের পন্ডিরা এই শাখার অন্তর্গত ভাষাগুলির প্রত্নালিপি ও পুঁথিপত্র আবিষ্কার করেন। এই শাখার দুটি উপশাখার নাম তোখারিয় ও কোচিয়। তোথারিয়ের সাথে কেলটিক এবং ইটালিয়ের ঘনিষ্ট মিলন দেখা যায়। আবার যে সমস্ত প্রত্নলিপি ও পুথিপত্র পাওয়া সেই গুলি প্রাচীন ভারতের ধরোস্টা ও ব্রাক্ষলিপিতে লিখিত। এর থেকে বুঝা যায় যে, এদের ভাষার ব্যাপারে পশ্চিমের সংগে যোগ ছিল, আর লিপির ব্যাপারে পূর্বের সংগে।

 

বালটো-স্লাভিক শাখা:

এতে দুটি উপশাখা আছ-বালটিক আর স্লাভিক। প্রথম উপশাখার থেকে লিথুয়ানিয়া ও ল্যাটভিয়ার ভাষা এসেছে। আর স্লাভিক উপশাখা থেকে সার্বিয়ান, বুলগেরিয়ান চেক রাশিয়ান পোলিশ ইত্যাদি আধুনিক ভাষাগুলি এসেছে।

 

গ্রীক শাখা:

অনেক আগে এশিয়া মাইনরের উপকূল অঞ্চলে, গ্রীসে সাইপ্রাসে গ্রীক শাখার মূল ভাষা প্রচলিত ছিল।পরে সেসব থেকে একাধিক উপভাষা আছে।সেই উপভাষাগুলোর মধ্যে অ্যাট্রিক আয়োনিক প্রধান ছিল।তাতে হোমারের ইলিয়ড-ওডিসি ও অন্যান্য লেখকের নাটক-কাব্য-গদ্য গ্রন্থ রচিত হয়েছিল। এই শাখার আর একটি উপভাষার নাম ডোরিক।

 

ইন্দো-ইউরেনিয়ান শাখা: 

এই শাখার উৎপত্তি আনুমানিক চার হাজার বছর পূর্বে। এই শাখার দুইটি উপশাখা। যথা:- ইরানীয় ও ভারতীয় আর্য।নিচে এদের আলোচনা করা হলো-


ইরানীয়: 

প্রাচীন পারসিক ও আবেডিয় ইরানীয় উপশাখার অন্তরগত দুইটি প্রাচীন ভাষা। প্রাচীন পারসিক পারস্য অঞ্চলের ভাষা ছিল। এই প্রদেশের এধামিনিয়ান রাজবংশের মাতৃভাষা ও সমগ্র ইরানের মাতৃভাষায় পরিনত হয়। এই বংশের দুই সম্রাট ডেরিয়াস ও জারে বসসের শিলালিপি এবং ধাতুলিপি থেকে প্রাচীন পারসিকের নমুনা পাওয়া গিয়েছে। এগুলো প্রায় আড়াই হাজার বছরের পুরানো।

 

ভারতীয় আর্যভাষা শাখা:

 এই শাখা ভারতে যেই আর্যরা আসেন তাদের দ্বারা আনীত হয়। এর তিনটি স্তর।আদি স্তরে বৈদিক ও সংস্কৃত, মধ্য স্তরে পালি-প্রাকৃত-অপ্রভংশ, আধুনিক স্তরে বাংলা-হিন্দী-অসমিয়া উড়িয়া-সিন্ধী-রাজস্থানী মৈথিলী-ভোজপুর ও গুঞ্জরোটি ইত্যাদি আধুনিক ভাষাসমূহ।

 

উপসংহার:

 পরিশেষে বলা যায় যে, ইন্দো-ইউরোপয়ীয় ভাষা পরিবার পৃথিবীর বৃহত্তম স্থান জুড়ে আছে।সংস্কৃত গ্রীক ও ল্যাটিনের ন্যায় বহু উন্নতমানের ভাষায় এই ভাষা পরিবার সমৃদ্ধ। অধিকন্তু মধ্য এবং বর্তমান যুগের পক্ষে সমগ্র ইউরোপ,আমেরিকার অধিকাংশ স্থান ইরান-ভারত এর অন্তর্ভুক্ত।ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবার ভাষা গবেষণায় এবং অধ্যয়নে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।

 

 

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!