জ্ঞানদীপ্তি বলতে কী বুঝ? রাজনীতি, অর্থনীতি ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে এর প্রভাব আলোচনা কর।

admin

ভূমিকা :

অষ্টাদশ শতকে ইউরোপে যে ব্যাপক মানসিক উৎকর্ষ সাধিত হয়েছিল তা আনদীপ্তি নামে পরিচিত। তবে অষ্টাদশ শতকে এর প্রভাব পড়লেও এর ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছিল সপ্তদশ শতকে, ইউরোপের মানুষের চিন্তাচেতনার জগতে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল এ যুগে। এর প্রভাবে অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে ইউরোপের বিপ্লবের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল।


জ্ঞানদীপ্তি বলতে কী বুঝ? রাজনীতি, অর্থনীতি ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে এর প্রভাব আলোচনা কর।


জ্ঞানদীপ্তি :

অষ্টাদশ শতকে ইউরোপবাসীর চিন্তার জগতে প্রকৃতিবাদ, যুক্তিবাদ, আশাবাদ ইত্যাদি তত্ত্বের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তাদের সার্বিক জীবনকে উক্ত তত্ত্ব দ্বারা পরিচালিত করার যে জ্ঞান অর্জন করে তাই জ্ঞানদীপ্তি। জ্ঞানদীপ্তি হলো জ্ঞান দ্বারা আলোকিত হওয়া। প্রকৃতিবাদ, যুক্তিবাদ, আশাবাদ ও মানবতাবাদ এই চারটি মূল সূত্রের উপর ভিত্তি করে এই আনদীপ্তির প্রকাশ ঘটেছিল। জ্ঞানপীপ্তির অনুসরণকারী মাত্রই এ চারটি নীতিতে বিশ্বাসী ছিল। যথা -


ক. প্রকৃতিবাদ : প্রকৃতিবাদের প্রাধান্য অর্থাৎ প্রাকৃতিক সবকিছুকেই অপ্রাকৃত বা অতি প্রাকৃতের উপর জ্ঞান দেওয়া। Naturalism বা Super naturalism-এর উপযুক্ত বিজ্ঞানকে ধর্মের উপর স্থান দেওয়া। প্রাকৃতিক নিয়মে পৃথিবী পরিচালিত হয়ে থাকে। প্রকৃতিবাদের উপর বিশ্বাস জন্মানোর ফলে মানুষে দ্বৈবশক্তির উপর আস্থা হারিয়ে মানুষ বাস্তববাদী হয়ে উঠে। ধর্মান্ধতা দূরীভূত হয়ে থাকে।


খ. আশাবাদ : জ্ঞানদীপ্তির অনুসরণকারিগণ মানবজাতি যুক্তিবাদের মাধ্যমে ক্রমেই উন্নতির পথে অগ্রসর হয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে সক্ষম হবে।


গ. যুক্তিবাদ : সব বিষয়ে যুক্তিবাদকে প্রাধান্য দেওয়া হতো। জ্ঞানদীপ্তির প্রধান কারণ ছিল যুক্তিবাদের উপর বিশ্বাস। ফরাসি দার্শনিকদের যথা: মন্টেস্কু, ভল্টেয়ার, রুশো, লক, ডেনিস দিদেরো প্রমুখের রচনা ফ্রান্সে যুক্তিবাদী চিন্তাধারার উন্মেষ ঘটেছিল। সমাজ, রাজনীতি সবক্ষেত্রে যুক্তিবাদের প্রয়োগ, এমনকি মানুষের জীবনযাত্রাকে যুক্তিসম্মতভাবে পরিচালিত করবার এক গভীর আগ্রহ ছিল প্রসারের ফল। কোনো কিছু যুক্তিগ্রাহ্য না হলে তা গ্রহণযোগ্য নয় এটিই ছিল যুক্তিবাদের শিক্ষা।


ঘ. মানবতাবাদ : জ্ঞানদীপ্তি মানুষকে প্রাকৃতিক অধিকারে পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করতে বদ্ধপরিকর। অর্থাৎ মানবসমাজে মানুষের অধিকারে যে তারতম্য রয়েছে তা দূর করে প্রকৃত মানবতা ও সমতার ভিত্তিতে সামাজিক সুযোগসুবিধার অধিকারী হবে।


জ্ঞানদীপ্তির প্রভাব : এ চারটি দার্শনিক ধারণার বশবর্তী হয়ে মানুষ রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে অসংগতি ছিল তার সমালোচনা শুরু করে। যুক্তিবাদের বিকাশ সাধনে বৈজ্ঞানিক, দার্শনিক, সাহিত্যিক ও অর্থনীতিবিদদের অবদান ছিল অপরিসীম। সতেরো শতকের শেষের দিকে এবং আঠারো শতকে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি সাধিত হয় তা মানুষের জ্ঞানের জগতে গভীর প্রভাব ফেলে। ফলে সাহিত্য, স্থাপত্য, চিত্রশিল্প, সংগীত, ধর্ম, ইতিহাস, সমাজ রাজনীতি, অর্থনীতি সর্বক্ষেত্রে জ্ঞানদীপ্তির প্রকাশ ঘটে।


জনমতের সূচনা : জ্ঞানদীপ্তির ফলে মানুষের মাঝে অজ্ঞতা ও অশিক্ষা দূর হয়ে প্রচলিত রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনমতের সূচনা ঘটে। এ জনমতের সাড়া দিয়ে শাসকগণ শাসনব্যবস্থাকে আধুনিক রূপ দেওয়ার জন্য প্রশাসনিক সংস্কার করার পদক্ষেপ নেন।


শাসন সংস্কার : জ্ঞানদীপ্ত দ্বারা প্রভাবিত হয়ে রাজাগণ যে শাসনব্যবস্থার উদ্ভব ঘটায় তা জ্ঞানদীপ্ত স্বৈরাচার নামে পরিচিত। শাসনব্যবস্থাকে আধুনিক রূপ দেওয়ার জন্য জ্ঞানদীপ্ত স্বৈরাচারী রাজাগণ কতকগুলো প্রশাসনিক সংস্কার প্রবর্তন করেন। আগে দলিল দস্তাবেজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা ছিল না, জ্ঞানদীপ্ত রাজারা মহাফেজখানা স্থাপন করে দলিল দস্তাবেজ চিঠি পত্রাদি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন। রাজকর্মচারীদের নিয়মিত মাসিক বেতনের ব্যবস্থা করেন। যারা বিনা কাজে পেনশন নিতো তা বন্ধ করে দেন। সরকারি আয়-ব্যয়ের হিসাব, বাৎসরিক বাজেট ঘোষণা প্রভৃতি আধুনিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করে প্রশাসন ক্ষেত্রে আধুনিকতার সূচনা করেছিলেন। আদমশুমারি ভূমিরাজস্ব নির্ধারণের জন্য ভূমি জরিপ করা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতাদান, দেশি ও বিদেশি সংবাদপত্র হতে কারিগরি কৃষি ও বৈজ্ঞানিক খবরাখবর সংগ্রহ এবং সেগুলো কাজে লাগানো প্রভৃতি জ্ঞানদীপ্তি স্বৈরাচারী শাসকদের আমলে চালু হয়েছিল।


মোটকথা, সতেরো শতকের শেষের দিকে ইউরোপে জ্ঞানবিজ্ঞান ও দর্শনের মাধ্যমে মানুষের চিন্তাচেতনার জগতে যে পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল তাই জ্ঞানদীপ্তি নামে পরিচিত। এ জ্ঞানদীপ্তি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ইউরোপের মানুষে সবক্ষেত্রে পরিবর্তনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়েছিল। সমকালীন রাজারাও জ্ঞানদীপ্তি দ্বারা আলোকিত হয়ে জ্ঞানদীপ্ত স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন করে।


রাজনীতির ক্ষেত্রে :

স্বৈরতান্ত্রিক ইউরোপের রাজনীতিতে রাজতন্ত্রের প্রভাব ছিল অক্ষুণ্ণ। রাজারা ছিল রাষ্ট্র পরিচালনার আইনের উৎস, কেউ বলত 'আমিই রাষ্ট্র' আবার 'আমিই যা বলি তাই আইন' ইত্যাদি। রাজনীতিতে পররাষ্ট্রনীতি বলতে ছিল জবর দখল। এমন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যখন সপ্তদশ শতকে জ্ঞানদীপ্তি প্রবেশ করে তখন ইউরোপের কতিপয় রাজা জ্ঞানদীপ্তি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নিম্নে লিখিত পরিবর্তন সাধন করে :


১. দলিল দস্তাবেজ সংরক্ষণ : জ্ঞানদীপ্তির ফলে ইউরোপে যে জ্ঞানদীপ্তি স্বৈরাচারের উদ্ভব ঘটে তারা রাজ্যের উন্নয়নের জন্য কতিপয় সংস্কার সাধন করেন। এগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল দলিল দস্তাবেজ, চিঠিপত্র সংরক্ষণের ব্যবস্থা, আগে সরকারি দলিল দস্তাবেজ সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। জ্ঞানদীপ্ত রাজাগণ মহাফেজখানা স্থাপন করে সরকারি দলিল দস্তাবেজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন।


২. মাসিক পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা : ইউরোপের রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার একটি অদ্ভূত নিয়ম চালু ছিল, রাজকর্মচারীরা তাদের নিয়মিত মাসিক বেতন পেত না। রাজকর্মচারীরা তাদের দায়িত্ব পালনের পারিশ্রমিক জনসাধারণের নিকট হতে গ্রহণ করত। এতে জনসাধারণের উপর এক ধরনের নির্যাতন হতো। কতিপয় রাজা জ্ঞানদীপ্ত দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সবকিছু বিবেচনা করে রাজকর্মচারীদের মাসিক পারিশ্রমিক দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন।


৩. বিনা কাজে পেনশন বন্ধ করা : ইউরোপে রাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় অনেক লোক কোনো দায়িত্ব পালন না করে সরকারি পেনশন ভোগ করতো। জ্ঞানদীপ্ত রাজাগণ যে সকল লোক সরকারি পেনশন ভোগ করতো তাদের অপসারণ করেন এবং সরকারি ব্যয় হ্রাস করেন।


৪. বাৎসরিক বাজেট প্রণয়ন : জ্ঞান রাজাগণ একটি অসাধ্যকে সাধন করেছিলেন বাৎসরিক বাজেট প্রণয়ন করে।সরকারি আয়-ব্যয়ের হিসাব পরীক্ষার ব্যবস্থা করে বাৎসরিক বাজেট তৈরি করে সরকারি ব্যয় নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করেন।


৫. বিবিধ সংস্কার সাধন : আদমশুমারি ভূমিরাজস্ব নির্ধারণের জন্য জমি জরিপ করা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দান, দেশি ও বিদেশি সংবাদপত্র হতে কারিগরি ও বৈজ্ঞানিক খবরাখবর সংগ্রহ এবং সেগুলো কাজে লাগান প্রভৃতি জ্ঞানদীপ্ত স্বৈরাচারী শাসকদের আমলে চালু হয়েছিল।


৬. কতিপয় জনকল্যাণকামী স্বৈরাচারী রাজা :  জ্ঞানদীপ্তির ছোয়ায় যে সকল স্বৈরাচারী রাজারা উদ্ভাসিত হয়ছিলেন  তাদের মধ্যে ছিলেন প্রাশিয়ার রাজা ফ্রেডারিক, রাশিয়ার রানী দ্বিতীয় ক্যাথরিন, স্পেনের তৃতীয় চালর্স এবং সুইডেনের তৃতীয় গাস্টাভাস্মর প্রমুখ।


৭. সংস্কারে সমস্যা : জ্ঞানদীপ্তি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে স্বৈরাচারী রাজারা যে সকল সংস্কারমূলক কাজ করেছিলেনতাতে জনমতের বা জনসাধারণের কোনো অংশ ছিল না। রাজার উপর হতে সংস্কার জনগণের চাপিয়ে দিয়েছিল। স্বভাবতেই তাদের সংস্কারের প্রতি জনসাধারণের কোনো সহানুভূতি ছিল না। ইউরোপের এরূপ পরিস্থিতিতেই ফরাসি বিপ্লবের সূত্রপাত হয়েছিল।


অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে :

সপ্তদশ শতকে ইউরোপে যুক্তিবাদের মাধ্যমে যে জ্ঞানদীপ্তির উদ্ভব হয়েছিল তার প্রভাব সব ক্ষেত্রেই ছিল। অর্থব্যবস্থায় যে সব অনাচার ও অনিয়ম চালু ছিল যা যুক্তিবাদীদের লেখনিতে ফুটে উঠে। তাাদের কল্যাণে ইউরোপীয়দের চোখে অর্থব্যবস্থার সকল ভুলত্রুটিগুলো ধরা পড়ে। জ্ঞানদীপ্তির ফলে অর্থনীতির ক্ষেত্রে যে সকল প্রভাব পড়েছিল তা নিম্নরূপ :


১. ফিজিওক্র্যাটদের উদ্ভব : জ্ঞানদীপ্তির ফলে অর্থনীতির ক্ষেত্রে যে সকল প্রভাব পড়েছিল তার মধ্যে অন্যতম হলো ফিজিওক্র্যাটদের উদ্ভব। জ্ঞানদীপ্তির ফলে অষ্টাদশ শতকে ফিজিওক্র্যাট নামে একদল অর্থনীতিবিদের আবির্ভাব ঘটে যারা ইউরোপের তৎকালীন অর্থনৈতিক অবস্থার তীব্র সমালোচনা করেন। এ গোষ্ঠীর মুখপাত্র ছিলেন মিরাবু, সে ও কুইস। নে এরা অর্থনীতির জনক এডাম স্মিথের চিন্তার দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন।


২. অবাধ বাণিজ্যের ধারণার উদ্ভব : আগে ইউরোপের বাণিজ্যে একচেটিয়া বাণিজ্যের ধারণা প্রচলিত ছিল। জ্ঞানদীপ্তি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কতিপয় অর্থনীতিবিদ এ নিয়মের বিপক্ষে লেখালেখি শুরু করেন। এডাম স্মিথ একচোটা ব্যবসার স্থলে অবাধ বাণিজ্য স্থাপনের প্রবক্তা ছিলেন।


৩. সমান ভূমিকর স্থাপনের সুপারিশ : এডাম স্মিথের বিখ্যাত গ্রন্থ "The wealth of nation-এ তিনি ভূমিকে জাতীয় সম্পদের উৎস বলে ব্যাখ্যা করেন এবং ভূমির ব্যক্তিগত মালিকানা স্বত্বের বিরোধিতা করেন। তারা মনে করতেন সম্পদের প্রধান উৎস হলো ভূ-সম্পত্তি। এজন্য তারা বলেন ভূমিকর থেকে কারো অব্যাহতি দেওয়া উচিত নয়। তারা সকলের জন্য সমান ভূমিকর স্থাপনের জন্য লেখালেখি করেন।


৪. দাস প্রথার সমালোচনা : ইউরোপের অর্থনীতির অন্যতম দিক ছিল দাস প্রথা ও সামন্ত প্রথা। জ্ঞানদীপ্ত দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এ দুটি প্রথার বিরোধিতা করে। এমনকি কৃষক শ্রেণির যে বেগার খাটতো তারও সমালোচনা শুরু হয়। মোট জ্ঞাননীপ্তি অর্থনীতির সার্বিক ব্যবস্থাকে যুক্তির দণ্ডে বিচার করে এর সকল অমানবিক দিকগুলোর বিপক্ষে সমালোচনা শুরু হয়।


সাহিত্যের ক্ষেত্রে :

জ্ঞানদীপ্তির প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছিল ইউরোপীয় সাহিত্যের ক্ষেত্রে। জ্ঞানদীপ্তি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ইউরোপীয় সাহিত্যিকগণ তাদের লেখনিতে যুক্তিবাদকে প্রাধান্য দিয়ে ইউরোপীয় সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি ও ধর্মনীতির সকল অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে লেখনি ধারণ করেন। জ্ঞানদীপ্তির ফলে ইউরোপীয় সাহিত্যের ক্ষেত্রে যে প্রভাব পড়েছিল তা নিম্নরূপ :


১. সাহিত্যিকদের লেখনিতে বিজ্ঞানের প্রভাব : অষ্টাদশ শতকে যে সকল বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ইউরোপে যুক্তিবাদী অনুসন্ধিৎসার সৃষ্টি হয়েছিল তা সমসাময়িক দার্শনিকদের মধ্যে যুক্তিবাদের ব্যাপকতর প্রয়োগের উৎসাহ বৃদ্ধি করেছিল।


২. ব্যঙ্গাত্মক ও রোমান্টিক রচনা : সাহিত্যের ক্ষেত্রে জ্ঞানদীপ্তির ফল পরিলক্ষিত হয় সেই যুগের ব্যঙ্গাত্মক ও  রোমান্টিক রচনার মধ্যে । এসব সাহিত্যের মধ্যে রাষ্ট্রব্যবস্থার সকল অনিয়ম ফুটে উঠতে থাকে।


৩. ভলতেয়ারের রচনায় : ভলতেয়ার নাটক, ইতিহাস, প্রবন্ধ প্রভৃতি রচনার দ্বারা ইউরোপে জ্ঞানদীপ্তির প্রসারে এক গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ করলেন। তিনি ছিলেন অষ্টাদশ শতকের ইরাসমাস।


৪. ইতিহাসের বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা : বিভিন্ন সমাজবিদ্যার মধ্যে ইতিহাসের বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা ও  ঐতিহাসিক দলিল ভিত্তিক আলোচনার নীতি সেই সময়ে ঐতিহাসিকদের রচনায় বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়। ঐতিহাসিক ভিকোর নাম এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য। ঐতিহাসিক হার্ডার অবশ্য ইতিহাসের দার্শনিক ব্যাখ্যার পক্ষপাতী ছিলেন। কিন্তু সেই যুগের শ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক ছিলেন এডওয়ার্ড গিবন, তাঁর "Decline and fall of the Roman Empire" ইতিহাস সাহিত্যের এক অমর সৃষ্টি।


 ৫. আইনশাস্ত্রে : আইনশাস্ত্রের প্রকৃতরূপ সম্পর্কে মন্টেস্কু "The Spirit of the Laws" ও বেক্কাবিয়ার on crimes end punishment উল্লেখযোগ্য। এসব গ্রন্থে আইন যে সকলের জন্য সমান তার তত্ত্ব প্রকাশিত হয়।



উপসংহার :

উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, সপ্তদশ শতকে ইউরোপে যে জ্ঞানদীপ্তির প্রকাশ ঘটেছিল যা চিন্তার জগতে যুক্তিবাদের সৃষ্টি করে। অষ্টাদশ শতকের রাজনীতি, সাহিত্য, অর্থনীতি, ধর্ম ইত্যাদি ক্ষেত্রে সামনীতির প্রকাশ ঘটতে থাকে। জ্ঞানদীপ্তির প্রভাবে মানুষের মাঝে যে সচেতনতার সৃষ্টি হয় তা প্রচলিত নিয়মনীতির বিপক্ষে বিদ্রোহী হতে উদ্বুদ্ধ করে। জ্ঞানদীপ্তির ঢেউ সবচেয়ে বেশি লেগেছিল ফ্রান্সে, ফলে পৃথিবীর যুগান্তকারী ফরাসি | বিপ্লব সংঘটিত হয় ১৭৮৯ খ্রিষ্টাব্দে।।


#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!