ফরাসি বিপ্লবী সংবিধান সভার কার্যাবলির বিবরণ দাও ।

admin

ভূমিকা : State General-এ তৃতীয় সম্প্রদায়ের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় ফ্রান্সে সর্বপ্রথম জনপ্রতিনিধিত্বমূলক জাতীয় পরিষদ গঠিত হয়। ১৭৮৯ সালের আগস্ট মাসে State General শাসনতন্ত্র রচনার দায়িত্ব • পেয়ে গণপরিষদবাদ সংবিধান সভায় পরিণত হয়। এ সংবিধান সভা ফরাসি বিপ্লবের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এজন্য এ সংবিধান সভাকে Old Regime -এর অনেক বিষয়কে বাদ দিয়ে প্রয়োজনীয় অনেক বিষয় সংবিধানে যুক্ত করা হয়। এ সংবিধান সভা প্রথমবারের মতো সর্বজনীনতাকে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে। এ সভার কার্যক্রম ছিল। দুই বছর। গণতন্ত্র ও উদারতন্ত্রের কিছু কিছু আদর্শকে গ্রহণের মাধ্যমে সংস্কার সাধনের দ্বারা এ সংবিধান সভা ফ্রান্সের শাসনামলে নতুন ধারার জন্ম দেয়।


ফরাসি বিপ্লবী সংবিধান সভার কার্যাবলির বিবরণ দাও ।


সংবিধান সভার লক্ষ্য :

জাতীয় সভা ফ্রান্সের জন্য একটি সংবিধান রচনার জন্য ব্রতী হলে এ সভা সংবিধান রূপান্তরিত হয়। এ সংবিধান সভার সদস্যদের মধ্যে যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল তারা হচ্ছে বুর্জয়া বা মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রতিনিধি । অপরদিকে, শ্রমিক ও কৃষকদের প্রতিনিধি এ সভায় সংখ্যালঘু ছিল। কোবানের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী জাতীয় সভায় আইনজীবীর সংখ্যা ছিল ২০%, চাকরিজীবী ৫%, বণিক ও শিল্পপতির ছিল ১৩% এবং কৃষকদের প্রতিনিধি এ সভায় সংখ্যালঘু ছিল। এ সভায় কৃষকদের প্রতিনিধি ছিল ৭-৯% কাজেই সংবিধান সভায় বুর্জোয়া সদস্যরাই ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। এজন্য সংবিধান সভা প্রধানত মধ্যবিত্ত বুর্জোয়া শ্রেণির স্বার্থের দিকে লক্ষ রেখে সংবিধান রচনা করে।


সংবিধান সভার কার্যাবলি :

অর্থনৈতিক সংকট মুক্তির জন্য রাজা ষোড়শ লুই ১৭৪ বছর পর State General-কে পুনরুজ্জীবিত করেন। নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে এ প্রতিনিধি সভায় তৃতীয় শ্রেণির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। State General-এ তৃতীয় শ্রেণির সংখ্যা গরিষ্ঠতা আসে। জাতীয় সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব এ প্রতিনিধি পরিষদকে প্রদান করতে রাজা বাধ্য হন। ফলে সার্বভৌম ক্ষমতা রাজা থেকে State General-এ বর্তায়। State General-কে নতুন সংবিধান রচনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এটি গণপরিষদের ক্ষমতা ও মর্যাদা লাভ করে। নিচে এ সভার কার্যাবলি আলোচনা করা হলো :


১. সামাজিক সংস্কার : জাতীয় সংবিধান সভার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল সামাজিক সংস্কার। কেননা এ সংস্কার ৰাৱা সামন্তপ্রথার বিলোপ এবং ভূমিদাসের মুক্তি দেওয়া হয়। এ সংস্কারের ফলে চরম বৈষম্য পূর্ণ ফরাসি সমাজে নিম্নশ্রেণির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। আইন হতে অব্যাহতি, বৈষম্যমূলক কর ব্যবস্থা ইত্যাদি বাতিলের মাধ্যমে অভিজাতদেরকে জনতার কাতারে দাঁড় করানো হয় ।


২. শাসনতান্ত্রিক সংস্কার : ১৭৮৯ সালের সংবিধান সভা ফ্রান্সের জন্য একটি শাসনতন্ত্র রচনা করে। এতে শ্রেণি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিধান রাখা হয়। এ সভা কর্তৃক রাজার ক্ষমতা পুননির্ধারিত হয়। যেমন- ক. রাজার ক্ষমতাকে সংবিধানের অধীনে আনয়ন করে মন্টেস্কুর ক্ষমতা বিভাজন নীতি অনুসারিত হয়।


খ. ফ্রান্সের সর্বোচ্চ ক্ষমতার উপাধি রাখা হয় King at the French.


গ. রাজকোষের অর্থের যথেচ্ছ ব্যবহারের ক্ষমতা খর্ব করে পরিমাণ নির্ধারণ করে দেওয়া হয় এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তি এবং জমি বাজেয়াপ্ত করা হয়।


ঘ. সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে রাজা মন্ত্রী ও রাষ্ট্রদূত নিয়োগের অধিকার পান। তবে সেনাবাহিনীর উপর তার নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার করা হয়।


ও. ক্ষমতা বিভাজন নীতি অনুযায়ী তার আইন তৈরি এবং বিচারক্ষমতা হরণ করা হয়। তবে আইন পাসের ক্ষেত্রে রদ, স্থগিত, অনুমোদন ইত্যাদির ক্ষমতা লাভ করে।


চ. মন্ত্রীদের জবাবদিহিতা রাজা থেকে সংসদের প্রতি অর্পিত হয়।


ছ. প্রাদেশিক শাসন ও বিচারের উপর থেকে রাজার নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার করা হয়।


জ. সার্বভৌম ও আনুগত্য রাজা হতে জনগণের হাতে চলে যায়।


ঝ. আইনসভার অনুমতি ছাড়া রাজার যুদ্ধ ঘোষণা করার ক্ষমতা এবং সন্ধিচুক্তি করার ক্ষমতা বাতিল করা হয়। ঞ. এক কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা গঠনের বিধান রাখা হয়। নাগরিকদের ভোটে এ আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হবে। আইনসভার সদস্যদের মেয়াদ ২ বছর।


ট. নাগরিকদের উপার্জনের ভিত্তিতে সক্রিয় এবং নিষ্ক্রিয় এ দুভাগে ভাগ করা হয়। যারা অন্তত তিন দিনের মজুরির সমান কর রাজাকে দিতে সক্ষম, তাদেরকে সক্রিয় নাগরিক বলে চিহ্নিত করা হয়।


ঠ. শাসনের সুবিধার্থে ফ্রান্সকে ৮৩টি প্রদেশে ভাগ করে এর নামকরণ করা হয় ডিপার্টমেন্ট। ৮৩টি ডিপার্টমেন্টকে আবার ৫৪৭টি জেলায় ভাগ করা হয়। স্থানীয় শাসনের পরিবর্তে মানোন্নয়নের পরিবর্তে নির্ধারিত ব্যক্তিদের নিয়োগ করা হয়। প্রত্যেকটি জেলাকে ৮/৯টি থানায় বিভক্ত করা হয়। প্রত্যেকটি থানাকে আবার কয়েকটি কমিউনে বিভক্ত করা হয় । গোটা দেশকে ৪৪,০০০ কমিউনে বিভক্ত করা হয়।


ড. বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রেও নির্বাচনের বিধান করা হয়। পার্লামেন্ট অব প্যারিস ও প্রাদেশিক সামন্ত বিচারালয়গুলো বাতিল করা হয়। বিচার বিভাগকে স্বাধীন করা হয়। আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট স্থাপিত হয়।


ঢ. সরকারি কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করা হয়।


সংবিধান প্রণয়ন ও ক্ষমতার স্বতন্ত্রতা :

১৭৯১ সালের সংবিধান সভায় দুটি বিশেষ নীতির উল্লেখ পাওযা যায়। যেমন-জনগণের সার্বভৌমত্ব এবং ক্ষমতার স্বতন্ত্রতা। ব্যবস্থাপক সভার অন্যতম প্রধান কার্য ছিল আইন প্রণয়ন এবং বিচার বিভাগ দ্বারা বিচারকার্য পরিচালনা করা। ১৭৯১ সালে প্রণীত সংবিধান জাতীয় পরিষদের একটি স্মরণীয় কৃতিত্ব বলে মনে করা হয়।


৩. নাগরিক অধিকারের ঘোষণা : ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ম্যাগনাকার্টা, আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র এবং রুশোর মতবাদের আলোকে ফ্রান্সের জাতীয় সংবিধান সভা ২৭ আগস্ট ১৭৮৯ সালের ফরাসি বিদ্রোহের মূল বাণী অনুসারে কতিপয় নাগরিক অধিকার ঘোষণা করে এবং এতে বলা হয়-


ক. মানুষ স্বাধীনতা ও সমান অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে এবং সে তা ভোগ করার অধিকারী।


খ. মানুষ জন্মগতভাবে স্বাধীন জীবনযাপন, সম্পত্তি অর্জন এবং তা ভোগ করার ও বাঁচার অধিকার লাভ করে এবং এগুলো কোনোমতেই হরণযোগ্য নয়।


গ. মানুষের বাক ও চিন্তার অধিকার থাকবে।


ঘ. স্বাধীন ধর্মাচরণের অধিকার থাকবে।


ও. আইনের চোখে সবাই সমান এবং বিনা বিচারে কাউকে অবৈধভাবে আটক করা যাবে না।


চ. বিবেকের স্বাধীনতা থাকবে।


ছ. সম্পত্তি ভোগের অধিকার পবিত্র অধিকার। শুধু আইনের বৈধতাপূর্বক ক্ষতিপূরণ সাপেক্ষে কারো সম্পত্তি নেওয়া যাবে।


জ. সরকারি কর্মচারীরা স্ব স্ব পদের কাজের জন্য জনগণের কাছে দায়ী থাকবে।


ঝ. সার্বভৌম ও আনুগত্য জাতির উপর প্রতিটি নাগরিকের কাছেই ন্যস্ত থাকবে ।


ঞ. এগুলো শাসনতন্ত্রে সংযোজনের মাধ্যমে সাংবিধানিক আইনে পরিণত হয়।


৪. প্রশাসনিক সংস্কার : ৮৩টি প্রদেশে ডাইরেক্টর ও কাউন্সিলের মাধ্যমে স্থানীয় শাসন চালানোর বিধান রাখা হয়। ফলে বাজার প্রাধান্য ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা চলে যায় জনতার মতামতের উপর। প্রশাসনে মনোনীত প্রশাসকের স্থলে নির্বাচিত প্রশাসকের নিয়োগের ব্যবস্থা ছিল এক অভিনব ব্যবস্থা। এর ফলে প্রশাসনের উপর থেকে রাজার প্রত্যক্ষ ও স্বৈরাচারী কর্তৃত্বের বিলোপ ঘটে।


৫. বিচার বিভাগীয় সংস্কার : সংবিধান সভা ফ্রান্সের বিচারব্যবস্থাকে সুষ্ঠু ও কার্যকরী করার জন্য ঢেলে সাজায়। ফ্রান্সে আগে বিভিন্ন ধরনের বিচারালয় ছিল। রাজার সামন্তপ্রভু যাজকসহ বিভিন্ন পদাধিকারী ব্যক্তির বিচার করার ক্ষমতা ছিল। বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের বিচার হতো। সংস্কারের ফলে পূর্বেকার বিচারব্যবস্থা সম্পূর্ণ বাতিল হয় এবং বিচার সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের জন্য সমগ্র দেশের জন্য একই বিচারব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। কেন্দ্র সর্বোচ্চ বিচারালয় হিসেবে আপিল কোর্ট ও হাইকোর্ট প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্যান্টন ও শহরের বিচারালয়ের দায়িত্ব ছিল জাজ ডি-পো নামক বিচারকের উপর। এ বিচারালয়ের জন্য পাঁচ জন জাজ ডি-পো ছয় বছরের জন্য নিযুক্ত হতেন। ডিপার্টমেন্ট এ চারজন বিচারকের সমন্বয়ে আদালত গঠিত। বিচারকগণ নাগরিকগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হতেন। তাদেরকে নিয়মিত বেতন প্রদান ও স্বাধীনভাবে বিচারকার্য পরিচালনায় নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। বিচারপ্রার্থীর নিকট হতে কোনো প্রকার অর্থ আদায় না করার নীতি গৃহীত হয় এবং এক্ষেত্রে রাজার ক্ষমতা রদ করা হয়।


৬. ধর্মসংস্কার : জাতীয় সংবিধান সভা ধর্মীয় ক্ষেত্রে বেশকিছু তাৎপর্যপূর্ণ সংস্কার ও পরিবর্তন আনয়ন করে। ধর্মান্ধতা, ধর্মের নামে নির্বাচন ও বঞ্চনা এবং শোষণ দ্বন্দ্বের জন্য এ সভা ১৭৮৯ সালের নভেম্বর মাসে গির্জাসমূহের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয়করণ করে। Civil Constitution of the Elerge (July 1790) আইনের মাধ্যমে পোপের ধর্মীয় প্রভাব খর্ব করা হয়। যাজক নিয়োগে পোপের ক্ষমতা বাতিল করে নির্বাচনের বিধান করা হয়। ধর্মসংস্কারে ধর্মীয় বিশ্বাস ও আচার অনুষ্ঠানে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি তবে ধর্ম কর বাতিল করা হয়।


৭. অর্থনৈতিক সংস্কার : সংবিধান সভার উপর যে গুরুদায়িত্ব ছিল তা হলো দেশের আর্থিক সংকট নিরসন করা। বিপ্লবী সরকারের নেতৃত্বে সংবিধান সভা আর্থিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করে। যেমন-'Patritic Ceilt নামে একটি আর্থিক তহবিল গঠন করা হয় এবং দেশপ্রেমী জনতা বিত্তবানদের দেশের আর্থিক সংকট নিরসনে এ তহবিলে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে অর্থসাহায্যের জন্য আবেদন করা হয়। কিন্তু সবাই যা আশা করেছিল তার সামান্যই কার্যকরী হয়েছিল। ফলে এটি ব্যর্থ হয়েছিল। এর পর এক সভায় 'Patriotic Lone' নামে দেশপ্রেমী বিত্তবানদের কাছ থেকে দানের আবেদন জানায়। এতেও তেমন সাড়া আসেনি।


এর পর সরকার পরোক্ষ কর বাতিল করে জমি ও সম্পত্তির উপর প্রত্যক্ষ কর ধার্য করে ক্যান্টন সভাকে তা আদায়ের দায়িত্ব দেয়। আর্থিক সংকট লাঘবের জন্য সকল গির্জার সম্পত্তি রাষ্ট্রের নামে বাজেয়াপ্ত করে। এসাইমা নামে এক প্রকার কাগজের মুদ্রা 'Bound' বিক্রয়ের প্রবর্তন করে। এর ফলে সাময়িকভাবে সাফল্য এলেও পরবর্তীকালে তা সীমাহীন ব্রাহ্মতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যা আর্থিক সংকটকে আরো ঘনীভূত করে এবং পরে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়।


সমালোচনা : সংবিধান সভা তার দুই বছরের কার্যকালে গৃহীত ব্যবস্থার পাশাপাশি জন প্রশংসার সাথে সাথে সমালোচনারও সম্মুখীন হয়। সমালোচকরা এর সমালোচনা করতে গিয়ে এ সংবিধান সভার কয়েকটি ব্যর্থতা বা ত্রুটি চিহ্নিত করেছে। যেমন-


১. এতে সাম্য, স্বাধীনতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের প্রতি যে অকুণ্ঠ আবেদন জানানো হয় কার্যত তা সফল হয়নি।

২. সর্বজনীন ভোটাধিকার প্রবর্তন না করে সাম্যের সাথে প্রতারণা এবং সক্রিয় নিষ্ক্রিয় নাগরিক বিভক্তির মাধ্যমে সামাজিক বৈষম্যকে এতে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল।

৩. শাসনতন্ত্রে গৃহীত শাসনতান্ত্রিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা কেন্দ্রের ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দিয়েছিল। ফলে প্রশাসনে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের স্থানে অব্যবস্থা ঢুকে পড়ে।

৪. ধর্মীয় সংস্কারের ক্ষেত্রে গির্জার সম্পত্তি ব্যবহার একটা বাড়াবাড়ি রকমের সিদ্ধান্ত ছিল বলে অনেক নাগরিক বিষেষভাব পোষণ করে।

৫. Civil Constitution of the Elergy দ্বারা ফরাসি গির্জা ও যাজকদের দুভাবে বিভক্ত করা হয় যা সম্প্রদায়গত হানাহানির জন্ম দেয়।

৬. নির্বাচনের মাধ্যমে বিচারক নিয়োগের ব্যবস্থা সীমিত সময়ের কারণে দারুণ অক্ষমতা প্রকাশ করে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কিছু করতে ব্যর্থ হয়।

৭. পরোক্ষ কর বাতিল করায় আয়ের একটি বড় উৎস হারায়। কাগজি মুদ্রা প্রবর্তনের ফলে দেশে মুদ্রাস্ফীতি ঘটে এবং জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়।

৮. সর্বোপরি এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরেও বঞ্চিত মানুষ বঞ্চিতই থেকে যায় এবং বিত্তবান তথা বুর্জোয়া শ্রেণির স্বার্থ রক্ষিত হয় ।


উপসংহার :

উপরিউক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, নানা ত্রুটিবিচ্যুতি থাকলেও বিপ্লব উত্তর ফ্রান্সে জাতীয় সংবিধান সভা সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে যে সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করে সন্দেহাতীতভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। এ সভা ফ্রান্সে 'Old Regime'-এর অবসান করে 'New Regime'-এর প্রবর্তন করে। সামন্তবাদ এবং যাজক প্রভাব মুক্ত করে ভূমিদাস ও তৃতীয় শ্রেণির সীমাহীন শোষণ হ্রাস করে। মৌলিক অধিকারের ঘোষণা ছিল বিশ্ব গণতন্ত্রের এক উল্লেখযোগ্য মহৎ মাইল ফলক। এটি ফরাসি জনগণকে জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ ও বিকশিত করেছিল। বলা যায়, এত সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে এ সংবিধান সভা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংশোধন, সংযোজন ও পরিবর্তনের মাধ্যমে যে সংস্কার প্রস্তাব করে তা ছিল ফরাসি তথা বিশ্ব বিপ্লবীদের জন্য এক অভূতপূর্ব ঘটনা ।


#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!