ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতির মধ্যে পার্থক্যসমূহ উল্লেখ কর।

admin

ভূমিকা : আধুনিক অর্থশাস্ত্রের দু'টি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হচ্ছে ব্যষ্টিক অর্থনীতি ও সমষ্টিক অর্থনীতি। সংজ্ঞা ও বিষয়বস্তু এবং বিশ্লেষণ পদ্ধতির দিক হতে বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, ব্যষ্টিক ও সমষ্টিক অর্থনীতির মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে।


ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতির মধ্যে পার্থক্যসমূহ উল্লেখ কর।


ব্যষ্টিক ও সমষ্টিক অর্থনীতির পার্থক্যসমূহ আলোচনা করা হল : 


১. সংজ্ঞাগত পার্থক্য : ব্যষ্টিক অর্থনীতি ও সমষ্টিক অর্থনীতির মধ্যে সংজ্ঞাগত পার্থক্য রয়েছে। ব্যষ্টিক বা Micro শব্দের অর্থ হল ক্ষুদ্র। ব্যষ্টিক অর্থনীতি বিস্তৃত ক্ষেত্রের খন্ডখন্ড অংশ নিয়ে আলোচনা করে। অপরদিকে, সমষ্টিক বা Macro শব্দের অর্থ হল বৃহৎ বা বিশাল, যা অর্থনীতির বিস্তৃত বা বিশাল ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করে।


২. বিষয়বস্তু ভিত্তিক পার্থক্য : ব্যষ্টিক অর্থনীতি অর্থব্যবস্থার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ নিয়ে আলোচনা করে। এ কারণে ব্যষ্টিক অর্থনীতির পরিধি বা বিষয়বস্তু ক্ষুদ্র ও আংশিক। কিন্তু সমষ্টিক অর্থনীতিতে অর্থব্যবস্থার সামগ্রিক দিক নিয়ে। আলোচনা করা হয়। ফলে সমষ্টিক অর্থনীতির পরিধি বা বিষয়বস্তু অপেক্ষাকৃত ব্যাপক ও বিস্তৃত।


৩. বিভিন্ন অংশের সম্পর্ক : ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে অর্থনৈতিক ঘটনাসমূহ পৃথক পৃথকভাবে বিশ্লেষণ করা হয় বলে তাদের মধ্যে কোন যোগসূত্র থাকে না। কিন্তু সমষ্টিক অর্থনীতিতে অর্থনৈতিক ঘটনাসমূহ সামগ্রিকভাবে বিশ্লেষণ করা হয়। এ কারণে সমষ্টিক অর্থনীতিতে বিভিন্ন বিষয় পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।


৪. আংশিক বনাম সামগ্রিক ভারসাম্য পদ্ধতি : ব্যষ্টিক অর্থনীতি ব্যক্তি ফার্ম বা শিল্পের কাজ ব্যাখ্যার জন্য আংশিক ভারসাম্য পদ্ধতি অনুসরণ করে। অপরদিকে, চলকের গতিধারা এবং আচরণ বিশ্লেষণের জন্য সমষ্টিক অর্থনীতি সামগ্রিক ভারসাম্য পদ্ধতি অনুসরণ করে।


৫. অর্থনীতির চিত্র : ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে অর্থব্যবস্থার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ আলোচনা করা হয়। ফলে ব্যষ্টিক অর্থনীতির আলোচনায় দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার আংশিক বা খণ্ড চিত্র পাওয়া যায়। অন্যদিকে, সমষ্টিক অর্থনীতিতে অর্থব্যবস্থার সামগ্রিক বিশ্লেষণ করা হয়। সুতরাং, সমষ্টিক অর্থনীতির আলোচনায় দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যায়।


৬. যুদ্ধ চলক : সমষ্টিক অর্থনীতিতে যেসব চলক রয়েছে সেগুলোকে আমরা যুক্তভাবে বিবেচনা করি। যেমন- জাতীয় আয়, ভোগবায় ও বিনিয়োগ ব্যয়ের সমষ্টি (Y C + 1)। অপরদিকে, ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে একটি চলকের পরিবর্তন অন্য চলকের পরিবর্তনের আলোকে বিবেচনা করা হয়।


৭. অনুমিতিভিত্তিক পার্থক্য : আপেক্ষিক মূল্য কিভাবে নির্ধারণ করা যায় তা সমাধানের সময় ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে সামগ্রিক মূল্য স্থির ধরে নেওয়া হয়। অপরদিকে, সমষ্টিক অর্থনীতিতে যখন সামগ্রিক মূল্য নির্ধারণের বিষয় বিবেচনা করা হয়, তখন আপেক্ষিক মূল্য দেওয়া আছে বলে ধরে নেওয়া হয়।


৮. পদ্ধতিগত পার্থক্য : সাধারণত ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে ধরে নেওয়া হয় মোট উপাদান এবং সাধারণ মূল্য স্তর প্রদত্ত। এর ভিত্তিতে কোন পণ্যের উৎপাদন ও মূল্য কিভাবে নির্ধারিত হয়, তা ব্যষ্টিক অর্থনীতি ব্যাখ্যা করে। অন্যদিকে, সমষ্টিক অর্থনীতিতে দ্রব্যের কটন ও আপেক্ষিক মূল্য স্থির ধরা হয়। এক্ষেত্রে মোট উৎপাদন ও সাধারণ মূল্যকে চলক হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং এদের নির্ধারণ ব্যাখ্যা করা হয়।


৯. ভারসাম্য বিশ্লেষণ ভিত্তিক পার্থক্য : ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে আংশিক ভারসাম্য বিশ্লেষণ করা হয়। যেমন- একজন ভোক্তার ভারসাম্য একটি উৎপাদক প্রতিষ্ঠান বা ফার্মের ভারসাম্য ইত্যাদি। পক্ষান্তরে, সমষ্টিক অর্থনীতিতে সামগ্রিক ভারসাম্য বিশ্লেষণ করা হয়। যেমন- মোট নিয়োগ, মোট জাতীয় আয়, মোট ভোগ ব্যয় ইত্যাদি।


উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, বিশ্লেষণ পদ্ধতি ও বিষয়বস্তুর দৃষ্টিকোণ হতে বিচার করলে ব্যষ্টিক ও সমষ্টিক অর্থনীতির মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। তবে ব্যষ্টিক ও সমষ্টিক অর্থনীতির মধ্যে কোন মৌলিক বিরোধ নেই। অর্থনীতিবিদ পল এ স্যামুয়েলসনের মতে, “সত্যিকার অর্থে ব্যাষ্টিক ও সমষ্টিক অর্থনীতির মধ্যে কোন বিরোধ নেই। উভয়ই একান্তভাবে অপরিহার্য।” সুতরাং বলা যায়, ব্যষ্টিক ও সমষ্টিক অর্থনীতি পরস্পরের প্রতিযোগী নয়, বরং একে অপরের পরিপূরক।


#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!