শিক্ষণের উপাদান বা শর্তসমূহ আলোচনা কর।

admin

ভূমিকা :

শিক্ষণ একটি ধারণা (Concept) যা পর্যবেক্ষণযোগ্য ঘটনা থেকে অনুমিত হয়। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য পরিবেশের সাথে খাপখাইয়ে চলতে হয়। অন্যান্য যে কোন প্রাণীর তুলনায় খাপখাওয়ানোর প্রক্রিয়া আমাদের অনেক বেশি (Adaptation is a process of changing our behaviour)। Adaptation কে আমরা শিক্ষণ বলছি। শিক্ষণ হল একটি আজীবন মৌল প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ব্যক্তি নতুন কোন বিষয় সম্বন্ধে আয়ত্ত করে। আমরা সবকিছু শিক্ষা গ্রহণ করি না। জীবনের সাথে তাৎপর্যপূর্ণ যেগুলো সেগুলো শিখি। আর যেগুলো অর্থপূর্ণ নয় সেগুলো শিখি না। যেমন- আমরা দুপুরের রোদে খেলা করি না, কারণ গরম লাগতে পারে। এভাবেই আমরা Learn করি।


শিক্ষণের উপাদান বা শর্তসমূহ আলোচনা কর।

শিক্ষণের শর্ত বা উপাদানসমূহ :

শিক্ষণ একটি জটিল প্রক্রিয়া। প্রক্রিয়ার অনেক প্রকারভেদ আছে এবং এতে বিভি রকম ঘটনা ঘটে থাকে। কিন্তু সব ধরনের শিক্ষণেই কিছু সাধারণ শর্ত উপস্থিত থাকে । শিক্ষণের সাধারণ ৬টি শর্ত রয়েছে । যথা :

১.সংযোগ বা অনুষঙ্গ,

২.বলবৃদ্ধি,

৩.নৈকট্য,

8.প্রেষণা,

৫. পুনরাবৃত্তি এবং

৬. পর্যবেক্ষণ।


১. সংযোগ বা অনুষঙ্গ : এটি শিক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। অনেক সময় দু'টি সম্পর্কযুক্ত ঘটনা পাশাপাশি ঘটলে শিক্ষ ত্বরান্বিত হয়। যেমন— মেঘ ও বৃষ্টি। এ দু'টি ঘটনা সম্পর্কযুক্ত। মেঘ দেখলেই বৃষ্টির কথা মনে পড়ে। সুতরাং, এ দু'টি ঘটনার মানে সংযোগ সৃষ্টি হয়।

Association বা সংযোগ দু' ধরনের হতে পারে। যথা :

ক. উদ্দীপক-উদ্দীপক সংযোগ (Stimulus Stimulus Association) : যখন দু'টি উদ্দীপকের মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হ তখন তাকে উদ্দীপক-উদ্দীপক সংযোগ বলে। যেমন- আগুন দেখলেই ধোঁয়া এবং ধোঁয়া দেখলেই আগুনের কথা মনে হয়।


খ. উদ্দীপক প্রতিক্রিয়া সংযোগ (Stimulus Response Association) : যখন একটি উদ্দীপকের সাথে অন্য কোন প্রতিক্রিয়ার সংযোগ হয়, তখন তাকে উদ্দীপক প্রতিক্রিয়া সংযোগ বলে। যেমন- রাস্তায় গাড়ি চালাতে গিয়ে লাল বাতি দেখে গাড়ি থামানো এবং সবুজ বাতি দেখে গাড়ি চালানো হল উদ্দীপক প্রতিক্রিয়া সংযোগ ।


২. বলবৃদ্ধি : বলবৃদ্ধি এমন একটি শর্ত বা অবস্থা যা সংযোগকে শক্তিশালী করে। আমরা জানি, শিক্ষণ হল উদ্দীপক-উদ্দীপক সংযোগ বা উদ্দীপক প্রতিক্রিয়া সংযোগ। যেসব শর্ত উপস্থিত থাকলে এসব সংযোগ প্রতিষ্ঠিত ও শক্তিশালী হয়, সেসব শর্তকে বলবৃদ্ধি বলে।


Reinforcement বা বলবৃদ্ধি প্রধানত দু' প্রকার। যথা :

ক. মুখ্য বলবৃদ্ধি : এটি হল সেসব উপাদান যা আমাদের জৈবিক প্রয়োজন মিটায় এবং প্রাকৃতিকভাবে কাজ করে। যেমন- ক্ষুধার্ত মানুষের খাদ্য, শীতার্ত মানুষের গরম কাপড় ইত্যাদি ।


খ. গৌণ বলবৃদ্ধি : এটা কখনও একা একা সংগঠিত হয় না। এটা Primary reinforcement এর সাথে যুক্ত হয়ে একটা গৌণ বলবান্ধ শক্তিশালী কার্যসম্পাদন করে বা কোন অভাব দূর করে। যেমন- টাকা। এটা আমাদের কোন অভাব দূর করতে পারে না। কিন্তু টাকা দিয়ে যখন আমরা কোন খাদ্য বা অন্য কিছু পাই তখন তা Secondary reinforcement হিসেবে কাজ করে। গৌণ বলবৃদ্ধিআবার দু'প্রকার। যথা :

i. থলাত্মক বলবৃদ্ধি : কোন একটি কাজ করার ক্ষেত্রে যে বর্ধন ক্রিয়া করলে কাজ করার প্রবণতা বেড়ে যায় তাকে Positive reinforcement বলে। এটা ব্যবহৃত হয় পুরস্কার হিসেবে। যেমন- একটি বাচ্চাকে বলা হল যে, তুমি এ কবিতাটি মুখস্থ বলতে পারলে তোমাকে চকলেট কিনে দেওয়া হবে। এখানে চকলেট ধনাত্মক বলবৃদ্ধি।


ii. ঋণাত্মক বলবৃদ্ধি : এটি এমন একটি প্রক্রিয়া বা উদ্দীপক যা বজর্ন করার জন্য প্রাণী প্রতিক্রিয়ার মাত্রা বৃদ্ধি করে। যেমন- মাকে বলা হল পড়াশুনা না করলে মার দেওয়া হবে। এখানে মার দেওয়া হল ঋণাত্মক বলবৃদ্ধি। ঋণাত্মক বলবৃদ্ধি আবার দু'


ক. বাঁচতে শেখা : এখানে কোন প্রকার সংকেত ব্যবহার না করে প্রাণীর জন্য একটি বেদনাদায়ক উদ্দীপক উপস্থিত করা হয় এবং প্রাণী তার নিজেকে বাঁচানোর জন্য পালিয়ে যেতে উদ্যত হয়। যেমন- কোন একটি শিশু আগুনে হাত দেওয়ার সাথে সাথে হাত সরিয়ে নিতে উদ্যত হয়। কারণ এটি তার জন্য বেদনাদায়ক।


খ. এড়িয়ে শেখা : এখানে কোন প্রাণীর কাছে কোন বেদনাদায়ক উদ্দীপক উপস্থিত করার আগে একটি সংকেত উপস্থিত করা হা যা শুনে বা দেখে পরবর্তী বার প্রাণী নিজেকে বাঁচানোর জন্য পালিয়ে যায়। যেমন- একটি ইদুরকে কোন একটি Electronic shock প্রদান করার পূর্ব মুহূর্তে একটি সংকেত প্রদান করা হল। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল ইদুরটি সংকেতটি পাবার সাথে সাথে নিজেকে বাঁচানোর জন্য পালিয়ে যায়।


৩. নৈকট্য : Stimulus stimulus (S-S) অথবা Stimulus Response (S-R) সংযোগ স্থাপিত হওয়ার জন্য আরও একটি প্রশি শর্তের প্রয়োজন। আর তা হল নৈকট্য। সাপেক্ষ প্রতিবর্তী শিক্ষণে দু'টি উদ্দীপকের মধ্যে নৈকট্য থাকতে হবে। আর অন্যান্য শিক্ষণে চটি প্রতিক্রিয়া ও সন্তুষ্টির মধ্যে নৈকট্য থাকতে হবে।


৪. প্রেষণা : প্রেষণা শিক্ষণের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। সন্তুষ্টির বা নিবৃত্তির পূর্ববর্তী শর্ত হল প্রেষণা। এটা এমন অবস্থা যা রণ প্রাণীকে তার কাজে প্রণোদিত করে। যেমন- ক্ষুধার্ত ইঁদুরকে ক্ষুধা নিবৃত্তির মাধ্যমে নতুন পথে দৌঁড়ানোর অভ্যাস শেখানো যায় । যদিও প্রেষণা শিক্ষণের একটি অপরিহার্য শর্ত তথাপি কোন কোন গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রেষণার অনুপস্থিতে শিক্ষণ সম্ভব।


৫. নিরবচ্ছিন্নতা : শিক্ষণের অন্যতম অর্থ হচ্ছে নিরবচ্ছিন্নতা। এটি সবসময় গ্রহণ এবং চর্চা করার বিষয়। নতুবা এর সুফলও পরিপূর্ণতা সম্ভব নয় ।


৬. পুনরাবৃত্তি : অধিকাংশ শিক্ষণের বেলায় বিশেষ করে জটিল শিক্ষণের সময় বারবার চেষ্টা চালানো হয়। যার ফলে শিক্ষণ তাড়াতাড়ি হয় । অর্থাৎ, প্রাণী বারবার অনুশীলনের ফলে সহজেই সফলতার মুখ দেখতে পারে।


৭. পর্যবেক্ষণ : শিক্ষণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষ। প্রাণী অন্ধভাবে শিক্ষণ ঘটাতে পারে না। শিক্ষণে সকল প্রাণী পর্যবেক্ষণের আওতাভুক্ত হলে শিক্ষণ দ্রুত গতিতে সম্পন্ন হয়।


৮. সমস্যা : শিক্ষণের একটি অপরিহার্য উপাদান হল সমস্যা। কোন সমস্যা থেকে বা সমস্যাকে কেন্দ্র করে শিক্ষণের সূচনা হয় এবং সমস্যা সমাধানের মাধ্যমেই তার পরিসমাপ্তি ঘটে। মানুষ অসংখ্য সমস্যা নিয়ে বেঁচে থাকে এবং সমস্যা সমাধান করার জন্যই মানুষকে অনেক কিছু শিখতে হয়।


৯. ফলাফলের জ্ঞান : ফলপ্রসূ শিক্ষণের এটি একটি প্রয়োজনীয় শর্ত। শিক্ষণের প্রতি স্তরে ফলাফলের জ্ঞান থেকে শিক্ষার্থী নানাভাবে উপকৃত হয় । শিক্ষার্থী ফলাফলের জ্ঞান থেকে জানতে পারে তার কোন প্রচেষ্টাটি সফল হয়েছে আর কোনটি সফল হয় নি। এর ভিত্তিতে সে পরবর্তী প্রচেষ্টাগুলো সম্বন্ধে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। তদুপরি ফলাফলের জ্ঞান শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও প্রেষণা বৃদ্ধি করে।


১০. পরিপক্বতা : ব্যক্তির দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ও বিকাশকে পরিপক্বতা বলা হয়। শিক্ষণের সাথে পরিপক্বতার সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ বিশেষ শিক্ষণের জন্য পরিপক্বতার প্রয়োজন হয়। পাঁচ মাসের শিশুর পক্ষে হাঁটা সম্ভব হয় না। এক বছরের শিশু ভারী জিনিস আলগাতে পারে না। অনুরূপভাবে পাঁচ বছরের শিশু কোন বিমূর্ত চিন্তা করতে পারে না। কাজেই, পরিপক্বতার উপর ভিত্তি করে শিক্ষণের বিষয়বস্তু নির্বাচন করতে হয়।

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!