বলবর্ধক কি? মুখ্য ও গৌণ বলবর্ধক সম্পর্কে যা জান লিখ।

admin

ভূমিকা :

শিক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল, Reinforcement বা বলবর্ধক। B.F. Skinner সর্বপ্রথম Reinforcement কথাটি ব্যবহার করেন। তিনি বলেছেন, "The process by which a stimulus increases the probability that a preceding behavior will be repeated." বলবর্ধক সন্তুষ্টি, বলীয়ানকারী, পুরস্কার ইত্যাদি নামেও পরিচিত। বর্ধন ক্রিয়া হল এমন একটি শর্ত বা অবস্থা যা সংযোগকে শক্তিশালী করে। অর্থাৎ, বর্ধন ক্রিয়ার ফলে উদ্দীপক সংযোগ বা উদ্দীপক প্রতিক্রিয়া সংযোগ প্রতিষ্ঠিত ও শক্তিশালী হয়ে থাকে। ক্লার্ক এল. হাল বর্ধনক্রিয়াকে প্রেষণার উপশমকারী হিসেবে বর্ণনা করেছেন।


বলবর্ধক কি? মুখ্য ও গৌণ বলবর্ধক সম্পর্কে যা জান লিখ।

বলবর্ধক :

Reinforcement একটি পদ্ধতি অর্থাৎ, যে পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা সন্তুষ্টি লাভ করছি। যে বস্তু Reinforcement দেয় তাকে Reinforcer বলে। তাই বলা হয় Reinforcer is any stimulus that increases the probability that a preceding behavior will occur again. যেমন- একটি ক্ষুধার্ত ইঁদুরকে একটি বাক্সের এক পাশে রাখা হল এবং অপর পাশে খাবার রাখা হল । ইদুরের পাশেই এমন একটি সুইচ বা প্যাডল আছে যাতে চাপ দিলে ইঁদুরটি খাবার পাবে। এবার ইঁদুরটি প্যাডলে চাপ দিল এবং খাবার পেল এবং উৎসাহিত হয়ে আবার খাবারের জন্য চাপ দিবে। সুতরাং, এখানে খাবারটা হল Reinforcer এবং এ প্রক্রিয়াকে বলে Reinforcement।


শ্রেণী বিভাগ :

Reinforcement বা বলবর্ধন বা বলবর্ধক সাধারণত দু'প্রকার। যথা :


১. মুখ্য বলবর্ধন : যেসব প্রেষণার নিবৃত্তি প্রাণীর জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য এবং যেসব প্রেষণা প্রাণীর জৈবিক প্রক্রিয়া থেকে সৃষ্টি হয় তাকে মুখ্য প্রেষণা বলে। এসব প্রেষণাকে জৈবিক প্রেষণাও বলে। সুতরাং, যেসব বস্তু প্রাণীর মুখ্য কোন প্রেষণাকে উপশম করে বা সন্তুষ্টি বিধান করে তাদের বলা হয় মুখ্য বলবর্ধন। অর্থাৎ, যে reinforcer biologically চাহিদা মেটাচ্ছে তাকে Primary reinforcer বলে। যেমন- ক্ষুধা, তৃষ্ণা, যৌনাকাঙ্ক্ষা, মাতৃত্ব ইত্যাদি।পরীক্ষণ পদ্ধতির ভাষায় মুখ্য বলবর্ধন হল সেসব বস্তু যেগুলো কোনরূপ শিক্ষণ ছাড়াই প্রাণীকে সন্তুষ্টি দান করে। আরও স্পষ্ট ভাষায় যেসব উদ্দীপক কোন জৈবিক প্রেষণা লাঘব করে তাকে বলা হয় Primary reinforcer বা মুখ্য সন্তুষ্টি।


২. গৌণ বলবর্ধন : যেসব প্রেষণা সমাজ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষ শিক্ষা লাভ করে তাদের বলা হয় গৌণ প্রেষণা। সুতরাং, যেসব বস্তু বা অবস্থা প্রাণীর গৌণ প্রেষণা নিবৃত্তি করে তাদের বলা হয় গৌণ সন্তুষ্টি। সম্মানাকাঙ্ক্ষা হল গৌণ প্রেষণা এবং সম্মান লাভ গৌণ সন্তুষ্টি বা বলবর্ধন।


ব্যবহারের দিক :

আমরা সাধারণত দু'ভাবে reinforcer ব্যবহার করে থাকি । যথা :


i. ইতিবাচক বলবর্ধক : যখন কোন Stimulus কে add (যোগ) করা হয় এবং যার ফলশ্রুতিতে Preceding behavior মাত্রা বেড়ে যায় তাকে Positive reinforcer বলে। ভালোলাগা কোন বিষয়কে add করার জন্য Preceding behavior ca বাড়িয়ে দেই। যেমন-

আগে চাবিতে চাপ দিলে খাবার আসতো। এখানে চাবিতে চাপ দেওয়া হল 'Preceding behavior'. খাবারটা 'Stimulus' (উদ্দীপক), ইঁদুর Stimulus কে add করছে Preceding behavior কে বাড়িয়ে। এ কাজটা ইদুরের পছন্দনীয় বলে সে বারবার এটা করছে।


ii. নেতিবাচক বলবর্ধক : আমরা চাই আমাদের ভালো না লাগা বিষয়সমূহকে remove করতে, আর remove করার জন্য Preceding behavior টাকে বাড়িয়ে দেই। অর্থাৎ, Negative reinforcer আমাদের Preceding behavior কে বাড়িয়ে দেয়। কোন ব্যক্তি খুব অসুস্থ, তার জ্বর হয়েছে।


সে তার অসুস্থতাকে দূর করতে চায়। আর এজন্য তাকে বেশি করে ঔষধ খেতে হবে। সে সময় মেনে নিয়মিত ঔষধ খাচ্ছে কারণ সে পূর্ববর্তী আচরণে দেখেছিল যে, জ্বর হলে যদি ঔষধ খাওয়া হয় তাহলে জ্বর সেরে যায়। এখানে Negative reinforcer হল অসুস্থতা বা জ্বর। আর Preceding behavior হল ঔষধ খাওয়া। সে এ জ্বরকে দূর করার জন্য Preceding behavior কে বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, Negative and positive reinforcer both increases our preceding behavior।


Negative reinforcer দু' প্রকার হয়ে থাকে । যথা :


i. মুক্ত (Escape) : কোন প্রাণী যদি কোন আচরণ করে Negative reinforcement পায় তাহলে সে তার আচরণ থেকে escape করতে শিখবে। অর্থাৎ, কোন আচরণ করলে যদি তা' প্রাণীর অসন্তুষ্টির কারণ হয় যা সে কখনও আশা করে না তখন প্রাণী তার বিপরীতধর্মী ফলাফল বিশিষ্ট আচরণ থেকে escape করতে শিখে থাকে যাকে escape conditioning বলে। যেমন- দু'টি বাক্স পাশাপাশি আছে এবং বাক্স দু'টির মাঝে একটি দরজা আছে। আমরা একটি ক্ষুধার্ত ইঁদুরকে বাক্সটির মধ্যে ছিড়ে দিলাম এবং বাক্সটির মধ্যদিয়ে বিদ্যুৎ চালনা করলাম।


ইঁদুরটিকে দেখা যাবে বাক্সটির মাঝে ছুটাছুটি করছে এবং এক সময় সে দরজা পার করে অন্য কক্ষে চলে যাবে। এভাবে কয়েকবার Trial দিতে থাকলে এক সময় দেখা যাবে যে, বিদ্যুৎ চালনা করলে সে ছুটাছুটি করবে না। তৎক্ষণাৎ সে অন্য বাক্সে চলে যাবে। এভাবে বলা যায় যে, ইদুরটি তার Negative reinforcement থেকে escape এর মাধ্যমে তার সন্তুষ্টি আনয়ন করছে। এ যে, বারবার escape এর মাধ্যমে ইদুরটির মাঝে যে শিক্ষণ হয়েছে তাকে escape conditioning বলে।


ii. এড়িয়ে যাওয়া (Avoidance) : প্রতিটি Organism সন্তুষ্টি লাভ করতে শেখে না বরং এড়িয়ে যেতে শেখে। আমরা পূর্ব থেকে যদি জানি যে, যে জিনিস আমাদের বিপর্যয় ঘটায় তা থেকে সরে যাই, আর এ এড়িয়ে যাওয়াকে Avoidance বলে। যেমন- Escape conditioning এর ক্ষেত্রে যে পরীক্ষণটি করলাম সে পরীক্ষণটি পুনরায় Avoidance conditioning এর ক্ষেত্রে করলাম। তবে এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ দেওয়ার আগে যদি একটি 'Red light' জ্বালিয়ে দেই। অর্থাৎ, Red light দিলেই বিদ্যুৎ দিব। এভাবে কিছুক্ষণ আসার পর ইঁদুরের শিক্ষণ হয়ে যাবে যে, Red light জ্বললেই বিদ্যুৎ আসবে। তাই সে বিদ্যুৎ চালনা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে না বরং Red light এর সংকেত পেলেই দৌঁড়ে অন্য কক্ষে পালাবে। এটা থেকে আমরা শিখলাম যে, আমরা সবসময় পালাই না বরং, পূর্ববর্তী সংকেত পেয়ে কিভাবে এড়িয়ে যেতে হয় তাই করি।


উপসংহার :

পরিশেষে বলা যায় যে, সহায়ক শিক্ষণ, চিরায়ত সাপেক্ষীকরণ, পরিজ্ঞানমূলক শিক্ষণ প্রভৃতি শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় বর্ণনক্রিয়া এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সহায়ক শিক্ষণে খাবার হড়কায় চাপ দেওয়ার শিক্ষণকে ত্বরান্বিত করেছে, চিরায়ত সাপেক্ষীকরণে মাংসের টুকরা সাপেক্ষণ প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করেছে। সাপেক্ষীকরণ প্রক্রিয়ায় বর্ধনক্রিয়া নিজেই সঠিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। আর সহায়ক শিক্ষণে সঠিক প্রতিক্রিয়ার পর বর্ধনক্রিয়ার আগমণ ঘটে।

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!