ঘোষক কে ছিলেন? তার জন্মের কাহিনী কর। পালক পিতা কিভাবে তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল বর্ননা দাও।

admin

ভূমিকা:

ধম্মপদট্টকথা একটি বিরাট গ্রন্থ।সূত্রপিটকের খুদ্দক নিকায়ের অন্তর্গত ধম্মপদ বৌদ্ধ সাহিত্যের একটি অতুলনীয় গ্রন্থ।ধম্মপদ ২৬টি বর্গে বিভক্ত। তন্মধ্যে অপ্রমাদ বগগো অন্যতম। এই উপাখ্যানটি অপ্রমাদ বর্গের অন্তর্গত।ধম্মপদের অন্তর্গত ৪২৩ টি পাথারই অটঠকথা রচিত হয়েছে এবং ২৬ টি বর্গে বিভক্ত হয়েছে।কেউ মনে করে এটি আচার্য বুদ্ধঘোষের রচনা কিন্তু তিনি নিজে বলেছেন এটি তার রচনা নয়।


ঘোষক কে ছিলেন? তার জন্মের কাহিনী কর। পালক পিতা কিভাবে তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল বর্ননা দাও।



ঘোষকের জন্ম ও পরিচয়:

কোশম্বিক নগরে বেশ্যারকুক্ষিতে ঘোষকের জন্ম।পূর্বে জন্মে কুক্‌কুরীর কুক্ষিতে জন্মগ্রহন করে প্রত্যেক বুদ্ধকে সেবা করত।কাল প্রাপ্ত হয়ে ত্রয়ত্রিংশ ভবনে জন্মগ্রহন করেছিলেন।তার কানাকানির কথার শব্দ ষোল যোজন জায়গা পর্যন্ত চলে যেত। প্রকৃত কথার আওয়াজ দশসহস্র যোজন পর্যন্ত ত্রয়ত্রিংশ ভবন বিস্তৃত হয়ে থাকত। এজন্য তার নাম রাখা হয় ঘোষক। প্রত্যেক বুদ্ধের প্রেমে হাউমাউ করার হেতু এই ফল।পরে পূণ্য ক্ষয় হয়ে কৌশম্বির নগরে তার জন্ম হয়।


ঘোষকের জন্ম কাহিনী বিবরণ:

এক সময় ভাজিত রাজ্যে কৌতুহলিক নামক ব্যক্তি ছিল। এই জন্মে তার পুত্রকে এক গাছের নিচে পাতার গুচ্ছতে ফেলে যায়। পরে আবার তুলে নিলেও পূত্রটি মারা যায়। কৌতুহলিক যথাসময়ে মৃত্যুর পর তৃঞ্চা হেতু কুরকুর হয়ে তীর্যক কুলে জন্ম হয়।কুরকুরটি প্রভুভক্ত ও প্রত্যেক বুদ্ধের অতীব ভক্ত হন।প্রত্যেক বুদ্ধ যেখানে যায় সেখনে পাশে থাকত। একদিন প্রত্যেক বুদ্ধ আকাশ মার্গে উঠে গন্ধমাদন পর্বতে চলে গেলেন। কুরকুরটি চোখের আড়াল না হওয়া পর্যন্ত শ্রদ্ধায় হাউ-মাউ করে দেখে থাকেন।চোখের অন্তরাল হলে মৃত্যু হয়।


মৃত্যুর সময় প্রত্যেক বুদ্ধ প্রেমে হাউ-মাউ করার হেতুতে ত্রয়ত্রিংশ দেবলোকে ঘোষক দেবপুত্র রুপে উৎপন্ন হয়। যথাসময়ে দেবলোক হতে চ্যুত হয়ে কৌশম্বি নগরে এক বেশ্যার গর্ভে উৎপন্ন হন।পুত্র সন্তান রুপে ভূমিষ্ঠ হয়।নগরে বেশ্যারা কন্যা সন্তানকেই পালন করে পূত্র সন্তানকে নয়।তাই শিশুটিকে কুলায় তুলে আবর্জনায় ফেলে আসলেন।প্রত্যেক বুদ্ধের প্রতি বুদ্ধপ্ৰেম কৰ্ম ফলে শিশুটির কোনরুপ কুরকুর দ্বারা ক্ষতি হল না।বরঞ্চ নগরে জনৈক ব্যক্তি আদরে তুলে বাড়িতে নিয়ে গেলেন। বাল্যকালে তার নাম রাখা হয় ঘোষক।


পালক পিতা কর্তৃক ঘোষককে হত্যার পন্থাসমূহ:

কৌশম্বি শ্রেষ্ঠী বাড়িতে আগত এক পুরোহিতকে দিয়ে তিথি নক্ষত্র যোগসূত্র করে দেখলেন। গননাকার্য করে আবিষ্কার করল যে এই নগরে আজ যে শিশু জন্ম হবে সেই জ্যৈাষ্ঠ শ্রেষ্ঠী পদ লাভ করবে। শ্রেষ্ঠীর স্ত্রী গর্ভবতী ছিলেন।খোঁজ নিয়ে দেখলেন তার স্ত্রী সন্তান প্রসব করেনি।তিনি চিন্তা করলেন নগরে আজ জন্মজাত শিশুকে প্রতিপালন করবেন।তাই শ্রেষ্ঠী তার কালি দাসীকে হাজার মুদ্রা দিয়ে বললেন আজ নগরে ভূমিষ্ঠ শিশুকে নিয়ে আসার জন্য।


অনুসন্ধান করে পাওয়া গেল ঘোষককে। হাজার মুদ্রার বিনিময়ে ঘোষককে নিয়ে আসলেন শ্রেষ্ঠীর কাছে। শ্রেষ্ঠী শিশুকে লালন পালন করতে লাগলেন।তিনি চিন্তা করলেন তার স্ত্রী কন্যা সন্তান জন্ম দিলে মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে শ্রেষ্ঠী প্রদান করবেন।আর পূত্র সন্তান জন্ম দিলে ঘোষককে মেরে ফেলা হবে।কয়েকদিন পর স্ত্রীর এক পূত্র সন্তান প্রসব হল।শ্রেষ্ঠী চিন্তায় পড়ে গেলেন। এই পালক ছেলেটি থাকলে আমার ছেলে শ্রেষ্ঠীপদ স্থান পাবে না।শ্রেষ্ঠী এই থেকে পালক ছেলে ঘোষককে নানাভাবে নানা জায়গায় মারতে চেয়েছিলেন।


নিম্নে শিশু ঘোষককে প্রায় সাত সাতটিবার মেরে ফেলার যে চেষ্টা হয়েছে তার ঘটনা ইতিবৃত্ত বর্ণনা দেওয়া

হলো-

১. প্রথমবার-গো-গৃহে হত্যার চেষ্টা

২.দ্বিতীয়বার-পঞ্চশত শকট দিয়ে হত্যার চেষ্টা

৩.তৃতীয়বার শ্মাশানে ফেলে হত্যার চেষ্টা

৪.চতুর্থবার-পর্বত থেকে ফেলে হত্যার চেষ্টা

৫.পঞ্চমবার-কুম্ভকার দ্বারা হত্যার চেষ্টা

৬.ষষ্ঠবার- শত গ্রামে পাঠিয়ে হত্যার চেষ্টা

৭.সপ্তমবার উত্তরাধিকার বঞ্চিত করার চেষ্টা


প্রথমবার-গো গৃহে হত্যার চেষ্টা:

শ্রেষ্ঠী দাসী কালিকে ডেকে আদেশ দিলেন এই ছেলেটাকে গো-গৃহে দরজার মধ্যে আড়াআড়িভাবে রেখে আসার জন্য।গরু গোঢাল থেকে বের হবার সময় পায়ে পিষ্ট হয়ে যেন মারা যায়।তাই হল।গোয়ালে গরুর মধ্যে জ্যৈাষ্ঠ বৃষ অন্য সময় সবার পিছনে বের হত কিন্তু সেদিন সবার আগে বের হয়ে শিশুটিকে চার পায়ে মাঝখানে রেখে দাড়ান।শত শত গাভী-বৃষ দুই পাশে ঘেষে বের হন।গোপাল দেখলেন বৃষের বুকের নীচে শায়িত শিশুকে।গোপাল আনন্দে শিশুকে ঘরে নিয়ে গেলেন।


দ্বিতীয়বার-পঞ্চশত শকট দিয়ে হত্যার চেষ্টা:

আবারও হাজার মুদ্রার বিনিময়ে শিশুটিকে আনা হল। এবার আদেশ দিলেন এই নগরে আজ সকাল বেলার পাচশত শকট ব্যবসায়ের কাজে যাবে,সেই পথে চাররাস্তা মোড়ে শুয়ে রাখার জন্য।আদেশ পালন করা হল।তখন শকটগুলির নায়ক গরু সামনে ছিল।অতঃপর গরুটি শিশুটির পাশে আসলে তার সামনে না গিয়ে ঝোয়াল ফেলে দিলে গরুটি এরুপ কারন জানতে শকট চালক শিশুকে দেখলেন।তিনি শিশুকে নিয়ে গেলেন নিজের ঘরে।


তৃতীয়বার-শ্মশানে ফেলে হত্যার চেষ্টা:

পুনঃবার একইভাবে শিশুকে নিয়ে আনা হল। এবার আদেশ দিলেন শ্মশানে এক ঝোপের মধ্যে রেখে আসতে যেন কুরকুর,শেয়াল বা ভূত-প্রেত ইত্যাদি দ্বারা প্রাণ নাশ হয়।আদেশ পালন হলে এমন সময় এক ছাগ পালক বহু ছাপ-ছাগী চড়ানোর জন্য সে দিকে যাচ্ছিলেন। এক ছাগী শিশু সেখানে সেই ঝোপে গিয়ে লতা-পাতা খাওয়ার জন্য গেলে শিশুকে দেখে দুধ খাওয়ালেন।অনেক শব্দ করেও বের না হলে ছাগ পালক সেখানে গিয়ে শিশুকে দেখলেন আর ঘরে নিয়ে আসলেন।


চতুর্থবার-পর্বত থেকে ফেলে হত্যার চেষ্টা:

এবার শিশুটিকে এনে চোর প্রপাত পর্বত থেকে ফেলে হত্যার জন্য নিয়ে যাওয়া হল। পর্বত এর উপর থেকে ফেলে দিলে শিশুটি পড়ল পর্বতের নিচে বাঁশঝাড়ের মধ্যে। এইদিকে এক লোক তার ছেলেকে নিয়ে বাঁশ কাটার জন্য আসলে শিশুটির কান্না শুনতে পেলেন এবং সেখানে গিয়ে শিশুটিকে দেখে ঘরে নিয়ে এলেন।


পঞ্চমবার-কুম্ভকার দ্বারা হত্যার চেষ্টা:

এবার শ্রেষ্ঠী এক কুম্ভকারকে ডেকে বললেন যে তিনি এক জারজ সন্তানকে পাঠাবেন আর তাকে মেরে আগুনে পুড়িয়ে ফেলার জন্য এক সহস্রের অর্ধেক মুদ্রা দিলেন।অবশিষ্ট মুদ্রা পরে কাজ শেষে দিবে বললেন।পরের দিন শ্রেষ্ঠী ঘোষককে ডেকে বললেন, বৎস গতকাল কুম্ভকারকে একটি কাজ করতে দিয়েছিলাম তুমি গিয়ে এরুপ বল যে, গদকাল আমার পিতা যা করতে বলেছে এখনই তা করে দাও। এদিকে শ্রেষ্ঠীর আপন পূত্র তার সঙ্গীদের সাথে গুলিখেলায় হেরে যাচ্ছিল।সে বলল দাদা তুমি আমার হয়ে খেলে জিতে দাও। এই বলে সে চলে গেল তাকে মেরে পোয়ানে জ্বালালেন কুম্ভকার।সন্ধ্যা হলে ঘোষক রাজবাড়ীতে ফিরলে সব কথা শ্রেষ্ঠী জানতে পারল এবং কান্না,শোকে বিলাপ করতে লাগলেন।


সাথে থাকুন


ষষ্ঠবার-শতগ্রামে পাঠিয়ে হত্যার চেষ্টা:

পরে এটা আমার জারজ পূত্র একে মেরে বিষ্ঠা কুন্তে ফেলে দাও।এইভাবে একটি পত্র লিখে গ্রাম পরিদর্শকের নিকট ঘোষককে পাঠাল। পথিমধ্যে সে পিতার বন্ধুর বাড়িতে গেল।অতঃপর পূর্ব জন্ম সহবাস হেতু অথবা বর্তমান জন্মে কৃত উপকার হেতু শ্রেষ্ঠী কন্যার প্রেম উৎপন্ন হল।শ্রেষ্ঠীর নিকট সংবাদ পাঠানো হলে জানতে পেরে শ্রেষ্ঠী বললেন, যাহা করিতে চাই তাহা হয়না,যাহা চাই না তাহা হয়তেছে।


সপ্তমবার-উত্তরাধিকার বঞ্চিত করার চেষ্টা:

শ্রেষ্ঠী ঘোষককে সম্পত্তি না দেওয়া চিন্তা করলে এক কর্মধ্যক্ষকে বললেন যে,মামা! আমার পুত্রকে দেখতে ইচ্ছা করে একজনকে পাঠিয়ে পিতার অসুস্থ খবর প্রেরণ করলে শ্রেষ্ঠী কন্যা মনে করল, এখন যাওয়ার সময়।তাই স্বামীকে তা জানিয়ে দিলেন।অতঃপর শ্রেষ্ঠী কন্যা বলল-তুমি তোমার পিতার পায়ের কাছে বসবে। আমি শিয়রের দিকে বসব।তৎপর দেখে হিসাব রক্ষককে বললেন,আমার গৃহে ধন কত? তা জানালে শ্রেষ্ঠী অতগুলি ধন আমার পুত্রকে দিবনা বলতে গিয়ে দিতেছি বললেন।


#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!