পালি ও সংস্কৃত ভাষার মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর-
ভূমিকা: ভাষা মানবজাতির মতই প্রাচীন।বর্তমানেপৃথিবীতে কয়েকশত ভাষা বিদ্যমান। ভাষাতাত্বিক বিশ্লেষনের সুবিধার্থে পাক-ভারতীয়আর্যভাষাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা:-প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা,মধ্য ভারতীয়আর্যভাষা ও নব্য ভারতীয় আর্যভাষা।
মধ্য ভারতীয় আর্যভাষার অন্তর্ভুক্ত দুটি ভাষাহলো পালি ও সংস্কৃত। এই দুটি ভাষা অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী ভাষা। প্রাচীন ভারতে পালি ওসংস্কৃত উভয়ই দেবভাষা হিসেবে সাধারন মানুষের নিকট মর্যাদা লাভ করেছিল। এ দুটিভাষার মধ্যে কিছু সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হলেও নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের দ্বারা উভয়ের মধ্যেপার্থক্য রয়েছে।
পালি ভাষা:
থেরবাদী বৌদ্ধদের মূল ধর্মগ্রন্থত্রিপিটক যে ভাষায় রচিত তা পালি ভাষা নামে অভিহিত। এ ভাষার চর্চা ও গবেষণাসূদূরপ্রসারী। পালি শব্দের অর্থ পঙক্তি পালন করা,রক্ষা করা,তন্ত্র,বীথি বা শ্রেনীপ্রভৃতি বলে পন্ডিগণ মতামত প্রকাশ করেছেন।
সুতরাং সেই অনুযায়ী বলা যায়, যে ভাষায় বৌদ্ধ ত্রিপিটক বা বুদ্ধ বানী সমূহ পালন, রক্ষা ও সংরক্ষন করা হয়েছে সেই ভাষাটিই পালি ভাষা।পালি মধ্য ভারতীয় আর্যভাষার তিনটি ভাগের মধ্যে প্রথম ভাগ।এ ভাষাটি শ্রীলঙ্কা,বার্মা,কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে এখনও একটিজীবন্ত ভাষা।
সংস্কৃত ভাষা:
যে ভাষা প্রাচীন ভারতে সনাতন ধর্মালম্বীদের ধর্মীয় উদ্দেশ্যে ধর্মীয় শাস্ত্র রচনায় পরিমার্জিত ও সংস্কারকৃত ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয় তা সংস্কৃত ভাষা হিসেবে পরিচিত।সংস্কৃত ক্রিয়া বিশেষনে সংস্কৃত শব্দের আক্ষরিক অর্থ সংযুক্ত করা। এটি সংস্কার ধাতু হতে উৎসারিত যার অর্থ সংযুক্ত করা,রচনা করা,ব্যবস্থাপনা করা ও প্রস্তুত করা।
সংস্কৃত ভাষাটি মূলত প্রাকৃত (প্রাকৃতিক শিল্পগুণ বর্জিত স্বাভাবিক ও সাধারন ভাষা) ভাষার সংস্কা কৃত রুপ বলে এর নাম সংস্কৃত ভাষা হয়েছে। এটি ইন্দো ইউরোপীয় ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্গত ইন্দো ইরানীয় উপশাখার একটি ভাষা।
পালি ও সংস্কৃতের মধ্যে পার্থক্য:
এ দুটি ভাষার সাদৃশ্য ও বৈশাদৃশ্য উভয়ই বিদ্যমান।নিচে এদের বৈশাদৃশ্য বা পার্থক্য দেয়া হলো-
পালি |
সংস্কৃত |
থেরবাদী
বৌদ্ধদের ধর্মগ্রন্থ ব্যবহৃত ভাষা পালি |
সনাতন
ধর্মালম্বীদের ধর্মগ্রন্থে ব্যবহৃত ভাষা হচ্ছে ভাষা। |
পালি ভাষা সরল
ও মধুর। |
সংস্কৃত ভাষা
জটিল ও আড়ম্বরপূর্ণ। |
পালি ভাষা সহজে
উচ্চারিত হয়। |
সংস্কৃতের
উচ্চারন অপেক্ষাকৃত জটিল। |
পালি ভাষা
স্বরবহুল। |
সংস্কৃত ভাষা
ব্যঞ্জনবহুল। |
পালি ভাষা সহজে
উচ্চারিত হয়। |
সংস্কৃতে যুক্ত
ব্যঞ্জনের সংখ্যা অত্যধিক। |
পালিতে যুক্ত
ব্যঞ্জনের সংখ্যা অতি অল্প। |
সংস্কৃত
প্রধানত সাহিত্যের ভাষা। |
পালি প্রধানত
কথিত ভাষা। |
সংস্কৃত
ব্যাকরন প্রধান। |
পালি সাহিত্য
প্রধান। |
সংস্কৃতে
ব্যাকরন অপরিহার্য । |
পালি ব্যাকরনের
নিয়মের অধীন ছিল না। |
সংস্কৃতে তিন
অক্ষর সংযুক্ত বর্ণের ব্যবহার দেখা যায়। |
পালিতে তিন
অক্ষর সংযুক্ত বর্ণের ব্যবহার নেই। |
|
পালিতে বচন
দুইট্ |
সংস্কৃতে বচন
তিনটি। |
পালিতে আটটি গণ। |
সংস্কৃতে দশটি
গণ |
পালি ভাষাকে
প্রবাহমান স্রোতাস্বিনীর সাথে |
সংস্কৃতকে
বিশাল এক সমুদ্রের সাথে তুলনা করা তুলনা করা যায়। |
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনা হতে বলা যায় যে পালি ও সংস্কৃত উভয়ই প্রাচীন এবং সমৃদ্ধশালী ভাষা। এই দুই ভাষার মৌলিক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় শব্দতাত্বিক ও ভাষাতাত্বিক বিশ্লেষনে।তবে এদের মধ্যে বৈশাদৃশ্য বিদ্যমান থাকলেও এদের উৎপত্তির উৎস এক।পালি এবং সংস্কৃত উভয়ই এদের উৎপত্তির জন্য বৈদিক ভাষার নিকট ঋনী।