একনেত্রীয় সংকেত বলতে কী বুঝ?

admin

ভূমিকা :

আমরা কোন না কোন পরিবেশে বাস করি এবং এ পরিবেশকে আমরা জানি। একথা সত্য যে, পরিবেশ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান বহুলাংশে ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত সংবেদনের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু একথাও সমপরিমাণে সত্য, পরিবেশ সম্পর্কে আমাদের অভিজ্ঞতার মধ্যে ইন্দ্রিয় সংবেদন ছাড়াও অনেক কিছু আছে। আমরা যখন কোন বস্তু দেখি, তখন আমরা প্রকৃতপক্ষে কতকগুলো আলোক সংবেদন পাই। কিন্তু আমরা এতেই তুষ্ট থাকি না। আমরা বলি যে, একটি বস্তু দেখা যাচ্ছে এবং সে বস্তুটির নামকরণও করি। বস্তুটির যাবতীয় গুণ ও বৈশিষ্ট্য আমাদের ইন্দ্রিয়ের নিকট ধরা পড়ে না। এসব গুণ ও বৈশিষ্ট্য প্রত্যক্ষণের সাহায্যে সরবরাহ করা হয়।


একনেত্রীয় সংকেত বলতে কী বুঝ?

একনেত্রীয় সংকেত:

যে ব্যক্তির একটি চোখের দৃষ্টি নেই সেও অন্যান্য ব্যক্তির যাদের উভয় চোখে দৃষ্টি আছে, তাদের মত সবকিছু অবলোকন করতে পারে। কিন্তু দূরত্ব প্রত্যক্ষণের সময় বিশেষ অসুবিধা হয়ে থাকে। দূরত্ব প্রত্যক্ষণের যেসব সংকেত একটিমাত্র চোখের ব্যবহারের ফলে সৃষ্টি হয় সেগুলোকে একনেত্রীয় সংকেত বলে। বলাবাহুল্য এ সংকেতগুলো দুই চক্ষুর বেলাতে ব্যবহৃত হয়। নিচে একনেত্রীয় সংকেতগুলোর আলোচনা করা হল :


১. আপেক্ষিক পরিচ্ছন্নতা : নিকটবর্তী বস্তুকে যতটা স্পষ্ট করে দেখা যায় সে তুলনায় দূরের বস্তুকে পরিষ্কার দেখা যায় না। সুতরাং, পরিচ্ছন্নতা ও অপরিচ্ছন্ন বস্তুর দূরত্ব সম্বন্ধে আমাদের ধারণা দেয় ।


২. আপেক্ষিক আকৃতি : বড় আকারের বস্তুকে আমরা কাছে আছে বলে মনে করি এবং ছোট আকারের বস্তুকে দূরে আছে বলে মনে করি। বস্তুর এ আপেক্ষিক আকৃতির মাধ্যমে আমরা বুঝে নেই যে, বস্তুটি দূরে আছে না নিকটে আছে।


৩. বস্তুর অন্তরাল বর্তিতা : যখন একটি বস্তু অন্য একটি বস্তুকে আংশিকভাবে আড়াল করে রাখে তখন যে বস্তুটি সম্পূর্ণভাবে দেখা যায় তা নিকটবর্তী এবং যে বস্তুটি আংশিক দেখা যায় তা দূরবর্তী বলে হয় ।


৪. আলো ও ছায়া : একটি বস্তু থেকে প্রতিফলিত আলো ও ছায়ার নমুনা থেকে বস্তুর ঘনত্ব ও গভীরতা সম্বন্ধে অনুভূতি লাভ করা যায়। যে কোন বস্তুর সামনের অংশে বেশি আলো থাকে এবং পিছনের অংশে কম আলো বা ছায়া থাকে। এ হতে বুঝা যায় যে, আলো ও ছায়া দূরত্বের নির্দেশ প্রদান করে থাকে।


৫. রেখামূলক চিত্রানুপাত : পাশাপাশি বা সমান দু'টি রেখা যদি কিছু দূর অগ্রসর হয় তা হলে দেখা যাবে যে, নিকটবর্তী দু'টি রেখার মাঝখানের ব্যবধান বেশি মনে হবে এবং এ দু'টি রেখা যতই দূরে অগ্রসর হবে ততই এদের মাঝখানের ব্যবধান কমে আসবে। এ বিষয়টিকে রেখামূলক চিত্রানুপাত বলা হয়। এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল রেলপথ ।


৬. গতি : বস্তুর গতি দূরত্বের সংকেত দিয়ে থাকে। যেসব বস্তু দ্রুত গতিতে চলাচল করে সেগুলোকে নিকটে এবং যে বস্তু ধীরে ধীরে চলে তাকে দূরে মনে হয়। অর্থাৎ, দূরবর্তী বস্তুসমূহকে অপেক্ষাকৃত স্থির এবং নিকটবর্তী বস্তুসমূহকে অধিক গতিশীল বলে অনুভূত হয়।


৭. ভূমির বিভক্তিকরণ : ভূমির কোন অংশে যদি খণ্ড খণ্ড অংশে বিভক্ত করা হয় তাহলে নিকটের অংশগুলোকে বড় দেখা যাবে এবং দূরবর্তী অংশগুলোকে ছোট দেখা যাবে। ভূমির এ বিভক্তিকরণের মাধ্যমে আমরা কোন বস্তুর দূরত্বের ইঙ্গিত পেয়ে থাকি।


৮. অভিযোজন : কোন বস্তু হতে আলোকরশ্মি যখন চোখে পড়ে তখন চোখের ল্যান্সের আকৃতির পরিবর্তন ঘটে। ল্যান্সের এরূপ পরিবর্তনকে অভীযোজন বলা হয়। যেমন- দূরের বস্তু দেখার সময় ল্যান্স সমতল হয়ে পড়ে এবং নিকটতর বস্তু দেখার সময় এটি তালকার হয়। সুতরাং নিকটের এবং দূরের বস্তু দেখার সময় চোখের মাংসপেশীর কার্যকলাপের পার্থক্য ঘটে। এরূপ পার্থক্য হতে মস্তিষ্ক বস্তুর দূরত্ব সম্পর্কে ধারণা করে লয় ।


উপসংহার :

পরিশেষে বলা যায় যে, কোন বস্তুর ত্রিমাত্রিক প্রত্যক্ষণের মাধ্যমে এর দৈর্ঘ্য প্রস্থ এবং গভীরতা সম্পর্কে ধারণা নেওয়া হয়। ত্রিমাত্রিক প্রত্যক্ষণ যদি সঠিকভাবে হয়ে থাকে তাহলে কোন বিষয় সম্পর্কে জানার তেমন বাকী থাকে না। তাই বর্তমানে প্রত্যক্ষণ প্রক্রিয়া ত্রিমাত্রিক অর্থাৎ ত্রিবিধভাবেই হয়ে থাকে।


#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!