সংবেদন সীমা বা সমতলের শ্রেণীবিভাগ লিখ ৷

admin

ভূমিকা :

মনোবিজ্ঞানের প্রাচীনতম সমস্যা হল বস্তুর গুণের সাথে মানুষের অভিজ্ঞতার কি সম্পর্ক রয়েছে তা নির্ণয় করা। পরীক্ষণ মনোবিজ্ঞানের মাধ্যমে এসব সমস্যার পরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে একটি রীতিতে উপনীত হওয়া যায়। পরীক্ষণ মনোবিজ্ঞানের প্রাচীনতম শাখা হল মনোদৈহিক পদ্ধতি। আর এ পদ্ধতির অন্যতম একটি মৌল ধারণা হল সংবেদন সমতল বা সংবেদন সীমা বা সূচনা বিন্দু।


সংবেদন সীমা বা সমতলের শ্রেণীবিভাগ লিখ ৷


সংবেদন সীমার বা সমতলের শ্রেণীবিভাগ :

তিন প্রকারের সংবেদন সীমা রয়েছে। যথা :


১. সর্বনি সংবেদন সীমা :

সর্বনি সীমাকে জার্মান ভাষায় বলা হয় Reiz Limen সংক্ষেপে RL বলা হয়। উদ্দীপকের সর্বনি তীব্রতাকেই RL বলা হয়। RL বা উদ্দীপকের সর্বনি তীব্রতার মাত্রা সবসময় সকলের মধ্যে সংবেদন সৃষ্টি করে না। সংবেদনের ক্ষেত্রে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যের কারণে বিভিন্ন ব্যক্তির RL বিভিন্ন রকম হতে পারে এবং একই ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে এটা বিভিন্ন হতে পারে। উদ্দীপকের সর্বনি তীব্রতার মাত্রা যা গড়ে শতকরা ৫০ ভাগ ক্ষেত্রে সংবেদন সৃষ্টি করতে পারে এবং শতকরা ৫০ ভাগ ক্ষেত্রে সংবেদন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয় না, সে মাত্রাকেই সংবেদনের নি সীমা বলা হয়। যেমন— শব্দ তরঙ্গের তীব্রতার মাত্রা ১০ ডেসিবেলের মত হলে খুব মৃদু বা খুব ক্ষীণ শব্দ শোনা যায়, কিন্তু শব্দ তরঙ্গের তীব্রতার মাত্রা ১০ ডেসিবেলের কম হলে কোন শব্দ শোনা যাবে না।


২. সংবেদনের পার্থক্য সীমা :

সংবেদনের পার্থক্য সীমা বা Differential threshold এর জার্মান প্রতিশব্দ হচ্ছে Differential Limen. একে সংক্ষেপে DL বলে। দু'টি উদ্দীপকের ন্যূনতম ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য পার্থক্যকে বলা হয় পার্থক্য সীমা। সহজ কথায়, একটি নির্দিষ্ট মাত্রার সংবেদন সীমা থেকে আর একটি সংবেদন যে মাত্রার পার্থক্যানুভূতির সৃষ্টি করে সে মাত্রাকেই সংবেদনের পার্থক্য সীমা বা প্রভেদসীমা বলে। অনেক সময় একে ন্যূনতম অনুভবনীয় পার্থক্য (Just noticible difference বা সংক্ষেপে JND) বলা হয়।


পরিসংখ্যানের ভাষায় এটি হল উদ্দীপকের সে পার্থক্য যা শতকরা ৫০ ভাগ ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায়। কোন কোন ক্ষেত্রে। কার্যকরী পার্থক্য নির্ণয়ের জন্য শতকরা ৭৫ ভাগ ক্ষেত্রে লক্ষণীয় পার্থক্যকে পার্থক্য সীমা বা Differential threshold হিসেবে ধরা হয়। সংবেদনের নিসীমার মত এক্ষেত্রেও একটি ক্রান্তি এলাকা আছে। এক্ষেত্রে এমন কতকগুলো উদ্দীপক মাত্রা থাকে যেখানে বাজি সবসময়ই দু'টি উদ্দীপকের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করতে ব্যর্থ হয়। ধরা যাক, কোন ব্যক্তিকে ১০০ গ্রাম ও ১০১ গ্রামের দু'টি উদ্দীপকের মধ্যে তুলনা করতে বলা হল। দেখা যায়, বেশিরভাগ সময় ব্যক্তিটি এ দু'টির পার্থক্য করতে পারল না।


কিন্তু ১০০ গ্রাম ও ১০৫ গ্রাম এ দু'টি উদ্দীপকের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করতে দেওয়া হলে দেখা যায় যে, ব্যক্তিটি শতকরা ৫০ ভাগ ক্ষেত্রে পার্থক্য সীমা লক্ষ্য করার জন্য ৫ গ্রাম বৃদ্ধির আয়োজন । নির্ণয় করতে পারল । এক্ষেত্রে DL হল (উদ্দীপক ১০৫ গ্রাম- ১০০ গ্রাম) = ৫ গ্রাম। উদ্দীপক ১০০ গ্রামের তুলনায় ন্যূনতম পার্থক্য।


৩. সংবেদনের সর্বোচ্চসীমা :

সংবেদনের সর্বনি সীমার মত সর্বোচ্চ সীমা বা প্রান্তিক সীমা আছে। উদ্দীপকের তীব্রতার মাত্রা বৃদ্ধি করলে সংবেদনের তীব্রতার মাত্রা বৃদ্ধি পায় কিন্তু একটা বিশেষ সীমা অতিক্রম করার পর উদ্দীপকের তীব্রতা বৃদ্ধি করলেও সংবেদনের তীব্রতা বৃদ্ধি পায় না। এ সীমাকেই বলা হয় সংবেদনের উচ্চতম বা সর্বোচ্চ সীমা (Height of Sensation)। এ সীমা অতিক্রম করলে কোন সংবেদন অনুভূত হয় না।


সংবেদনের সর্বোচ্চ তীব্রতা অনুভবের জন্য উদ্দীপকের তীব্রতাকে যে পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয় তার চেয়ে বেশি বৃদ্ধি করলে কোন সংবেদন অনুভূত হয় না। যেমন- বজ্রপাতের শব্দের তীব্রতা প্রায় ১১৫ ডেসিবেলের মত। শব্দের এ তীব্রতা ১২০ ডেসিবেলের অধিক হলে শ্রবণেন্দ্রিয়ের সংবেদনের সর্বোচ্চ সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার কোন সংবেদন অনুভূত হয় না । এতে শ্রবণেন্দ্রিয়ে তীব্র ব্যাথা অনুভূত হয় এবং সাময়িকভাবে বা স্থায়ীভাবে এ ইন্দ্রিয়টি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভবনা থাকে । সংবেদনের তীব্রতার সর্বোচ্চ যাত্রা গড়ে শতকরা ৫০ ভাগ ক্ষেত্রে অনুভূত হয় এবং ৫০ ভাগ ক্ষেত্রে অনুভূত হয় না। এ মাত্রাকেই সর্বোচ্চ সংবেদন সীমা বা TL বলা হয়।'


উপসংহার :

পরিশেষে বলা যায় যে, মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে মনোদৈহিক পদ্ধতি এক অতীব গুরুত্বপূর্ণ এবং উল্লেখযোগ্য বিষয়। আর সংবেদন সমতল হল মনোদৈহিক পদ্ধতির অন্যতম মৌল ধারণা। সুতরাং, মনোদৈহিক পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে হলে সংবেদন সীমার জ্ঞান এক্ষেত্রে অপরিহার্য ভূমিকা হিসেবে কাজ করে। এ জন্যই এর জ্ঞান থাকা আবশ্যক ।


#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!