চাহিদার স্থিতিস্থাপকতার নির্ধারকসমূহ আলোচনা কর।

admin

ভূমিকা :

চাহিদার দাম স্থিতিস্থাপকতা একটি মাত্রাগত পরিমাপক। কোন দ্রব্যের দামের পরিবর্তনের ফলে তার চাহিদার পরিবর্তন হয়। দামের কতটুকু পরিবর্তনে চাহিদার কি পরিমাণ পরিবর্তন হয় তা চাহিদার দাম স্থিতিস্থাপকতার সাহায্যে জানা যায় ।


চাহিদার স্থিতিস্থাপকতার নির্ধারকসমূহ আলোচনা কর।


চাহিদার স্থিতিস্থাপকতার নির্ধারকসমূহ :

চাহিদার দাম স্থিতিস্থাপকতা বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। নিম্নে চাহিদার মূল্য স্থিতিস্থাপকতার নির্ধারকসমূহ আলোচনা করা হল ঃ

১. পরিবর্তক দ্রব্য : বিবেচ্য দ্রব্যের পরিবর্তক দ্রব্য থাকলে দ্রব্যটির চাহিদা স্থিতিস্থাপক হয়। যেমন- চা ও কফি · পরিবর্তক দ্রব্য। চা এর দাম স্থির থেকে কফির দাম বাড়লে কফির চাহিদা কমবে। ফলে চা এর চাহিদা বাড়বে।


২. দ্রব্যের প্রকৃতি : চাহিদার স্থিতিস্থাপকতা দ্রব্যের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যসমূহের দাম বাড়লে চাহিদা কমে না। তাই এগুলো চাহিদা অস্থিতিস্থাপক। আবার বিলাসজাত দ্রব্যের চাহিদা স্থিতিস্থাপক। যেমন- চালের দাম বাড়লেও তার চাহিদা তেমন কমে না। তাই চালের চাহিদা অস্থিতিস্থাপক। অপরপক্ষে, বিলাসবহুল আসবাবপত্রের দাম কমলেই চাহিদা বাড়ে। তাই এগুলোর চাহিদা স্থিতিস্থাপক ।


৩. স্থগিত ভোগ : অনেক দ্রব্যের ভোগ সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়। এসব দ্রব্যের চাহিদা স্থিতিস্থাপক হয়। যেমন- শার্ট, প্যান্ট, জুতা, কম্বল ইত্যাদি। এসব দ্রব্যের দাম বাড়লে কিছুদিনের জন্য পুরাতন দ্রব্য দিয়ে চালানো যায় । ৪. দ্রব্যের বিকল্প ব্যবহার : যেসব দ্রব্য বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায়, সেগুলোর চাহিদা স্থিতিস্থাপক হয়। যেমন- বিদ্যুৎ, গ্যাস ও কয়লা রান্নার কাজে ব্যবহার করা যায়, আবার কলকারখানায় ব্যবহার করা যায়। তাই এসব দ্রব্যের চাহিদা স্থিতিস্থাপক।


৫. পরিপূরক দ্রব্য : পরিপূরক দ্রব্যের চাহিদা সাধারণত স্থিতিস্থাপক হয়। কারণ, একটির দাম কমলে পরিপূরক অপরটির চাহিদা বাড়ে । যেমন- চা ও চিনি, ইট ও সিমেন্ট প্রভৃতি পরিপূরক দ্রব্য এবং এসব দ্রব্যের চাহিদা স্থিতিস্থাপক।


৬. প্রয়োজনের তীব্রতা : প্রয়োজনের তীব্রতা যত বেশি হবে চাহিদা তত অস্থিতিস্থাপক হবে। প্রয়োজনের তীব্রতা ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হয়। একজনের নিকট যা অতি প্রয়োজনীয় অন্যজনের নিকট তা সাধারণ দ্রব্য বলে বিবেচিত হতে পারে।


৭. গুণগতমানের নিশ্চয়তা : কোন দ্রব্যের গুণগত মান ভালো বলে ভোক্তা নিশ্চিত হলে তার চাহিদা অস্থিতিস্থাপক হয়। যেমন- বাংলাদেশী কাপড়ের গুণগত মান সম্পর্কে বিশ্ববাসীর আস্থার কারণে বিশ্ব বাজারে তার চাহিদা অস্থিতিস্থাপক | ৮. মনস্তাত্ত্বিক উপাদান : মানুষের রুচি, অভ্যাস ইত্যাদি ধরনের মনস্তাত্ত্বিক উপাদানসমূহ অনেক সময় স্বল্পমেয়াদি মূল্যের পরিবর্তনের সাথে চাহিদার সামঞ্জস্য বিধানের পথে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে এসব দ্রব্যের চাহিদা অস্থিতিস্থাপক হয়।


৯. সময়ের ব্যবধান : চাহিদার স্থিতিস্থাপকতা সময়ের ব্যাপ্তির উপর নির্ভর করে। সময়ের ব্যাপ্তি যত বেশি হয়, চাহিদার স্থিতিস্থাপকতাও তত বেশি হয়। আবার দীর্ঘমেয়াদি ভোক্তাদের আয় ও রুচির মধ্যে সমন্বয় সাধন সম্ভব। যেমন- বিশ্ব বাজারে দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি তেলের বিকল্প হিসেবে সৌরশক্তির ব্যবহারের ফলে জ্বালানি তেলের চাহিদা স্থিতিস্থাপক হয়েছে।


১০. দ্রব্য ক্রয়ে ভোক্তার খরচ : কোন দ্রব্য ক্রয়ে ভোক্তা তার আর্থিক আয়ের কত অংশ খরচ করে তার দ্বারাও কোন দ্রব্যের স্থিতিস্থাপকতা প্রভাবিত হতে পারে। নিম্ন আয়ের লোকেরা খাবার ক্রয়ে আয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় করে বলে খাবারের চাহিদা তাদের কাছে স্থিতিস্থাপক। কিন্তু শুধু লবণ ক্রয়ে তারা তাদের আয়ের ন্যূনতম অংশ ব্যয় করে বলে তার চাহিদা আপেক্ষিকভাবে কম স্থিতিস্থাপক হবে।


১১. দ্রব্যের প্রান্তিক উপযোগ : যেসব দ্রব্যের প্রান্তিক উপযোগ বেশি সেগুলোর চাহিদা সাধারণত স্থিতিস্থাপক হয়। আবার যেসব দ্রব্যের প্রান্তিক উপযোগ কম সেগুলোর চাহিদা সাধারণত কম স্থিতিস্থাপক হয়। অর্থাৎ, কোন দ্রব্যের প্রান্তিক উপযোগ বাড়লে বা কমলে তার স্থিতিস্থাপকতার পরিবর্তন হতে পারে।


উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনা হতে এটিই প্রতীয়মান হয় যে, চাহিদার স্থিতিস্থাপকতার কোন সুনির্দিষ্ট নির্ধারক নেই । কোন দ্রব্যের চাহিদা স্থিতিস্থাপক না অস্থিতিস্থাপক তা এক বা একাধিক নির্ধারক দ্বারা নির্ধারিত হয়।


#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!